একটি-দুটি নয়—একযোগে ১৭টি সেলাই পড়েছে বৃদ্ধ জাহানারা বেগমের (৬৯) মাথা ও কপালে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল মনছুরের আদালতে মামলার আবেদন করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁর ছেলে মো. ফারুক ও ছেলের স্ত্রী সুমাইয়া সুমিকে।

বাদীর আইনজীবী আমিনুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত আবেদনটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, তুচ্ছ একটি ঘটনায় ৭ ডিসেম্বর নগরের কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা এলাকায় বৃদ্ধ জাহানারা বেগমকে মারধর করেন তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ। একপর্যায়ে ছেলে ইট দিয়ে মায়ের মাথা ও কপালে আঘাত করেন। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় জাহানারাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁর মাথা ও কপালে ১৭টি সেলাই দেন।

মামলার বিবরণে বাদী আরও উল্লেখ করেন, মাথা-কপালে ইট দিয়ে আঘাত করে ক্ষান্ত হয়নি তাঁর ছেলে ও ছেলের স্ত্রী। বৃদ্ধাকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। প্রতিবেশীরা এগিয়ে না এলে সেদিন তাঁকে মেরে ফেলত। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বৃদ্ধা গতকাল বুধবার কর্ণফুলী থানায় এই ঘটনায় মামলা করতে যান। কিন্তু থানা মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করতে যান।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানায় মামলা না নেওয়ার কথা নয়, বিষয়টি দেখছি। এখন আদালত যেহেতু মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই নির্দেশনা থানায় আসার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জাহানারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গর্ভধারিণী মাকে যেন আর কোনো ছেলে এভাবে না মারে, এ জন্য ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন যত সহজ ভাবা হচ্ছে, তত সহজ হবে না: তারেক রহমান

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে যত সহজ ভাবা হচ্ছে, নির্বাচন তত সহজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এক বছর, সোয়া বছর আগে যে কথাটি বলেছিলাম যে, সামনের নির্বাচন যা ভাবছেন তা নয়। আজকে আস্তে আস্তে আমার কথাটা প্রমাণিত হচ্ছে। এখনো যদি আমরা সিরিয়াস না হই, সামনে এ দেশের অস্তিত্ব, সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। এটা একমাত্র বাঁচাতে পারে গণতন্ত্র এবং সেই গণতন্ত্রের ভিত্তিকে মজবুত করতে পারেন আপনারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রত্যেকটি মানুষ।’

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির পরিকল্পনাগুলো জানাতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। তাহলে নিশ্চয়ই মানুষ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দলীয় সরকার হবে না। যারা বিএনপিকে ভোট দিয়েছে, তাদের পাশাপাশি যারা ভোট দেয়নি তাদের জন্যও কাজ করতে হবে। নির্দিষ্ট কারও জন্য কাজ করা যাবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি স্বপ্ন দেখাচ্ছে না, বিএনপি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচনের বেশি সময় নেই। দল যার হাতে ধানের শীষ দিয়েছে, তাদের পক্ষে থাকতে হবে। প্রার্থী আসবে, প্রার্থী পরিবর্তন হবে, তবে দল ও আদর্শ রয়ে যাবে।

অন্য রাজনৈতিক দলগুলো মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে দাবি করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা বলার দরকার নেই। বাস্তবভিত্তিক যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা জনগণের কাছে পৌঁছে দিলেই হবে। এই কাজ করা কঠিন। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করলে সেটি করা সম্ভব হবে।

উপস্থিত বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় দেখলাম, কিছু ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে তাদের কথা বলছেন। তারা যদি বলতে পারে, আপনি কেন বলতে পারবেন না? বললে সবাই বলবে, না বললে কেউ বলতে পারবে না। আপনি আপনার এলাকায় সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বললে সবার বলার অধিকার আছে। আর যদি কোথাও নিয়ম হয়ে থাকে, বলবে না। তাহলে সেই নিয়ম সবার জন্য প্রযোজ্য হবে। কোনো বিশেষ কারও জন্য হবে আর কারও জন্য হবে না, এটা তো হতে পারে না।'

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খান বাবুল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ