মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত  গৃহকর্মী আয়েশা কাজে যুক্ত হওয়ার দ্বিতীয় দিন বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করে। গৃহকর্মের আড়ালে চুরি করার অভ্যাস তার পূর্ব থেকেই ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। 

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আয়েশা ঘটনার তিনদিন পূর্বে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। কাজে যোগ দেওয়ার পূর্বে তার নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের ফোন নম্বর বাসায় কারও কাছে ছিল না। আয়েশাকে সনাক্ত করার জন্য পুলিশ ভবনের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। কিন্তু কাজে আসা-যাওয়ার সময় সে মুখ ঢেকে রাখতো বিধায় তার চেহারা সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তার বাসার ঠিকানাও কেউ জানতো না।

এক পর্যায়ে, আয়েশা সম্পর্কে তথ্য না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় গত এক বছরে গৃহকর্মী কর্তৃক চুরির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে গলায় পোড়া দাগ এবং জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় থাকে আয়েশা নামের এক গৃহকর্মীর খোঁজ পাওয়া যায়। আয়েশা গত জুলাই মাসে মোহাম্মদপুর থানার হুমায়ুন রোডের এক বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। ওই বাসা থেকে আয়েশার সঙ্গে যোগাযোগের একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ গভীর তদন্তে নামে। তদন্তের এক পর্যায়ে আয়েশার স্বামী রাব্বীকে সনাক্ত করা হয় এবং জানা যায় তার স্ত্রীর নাম আয়েশা, সে মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে। তারা মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে ভাড়া বাসায় থাকে। এভাবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারী আয়েশার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। 

এক পর্যায়ে প্রাপ্ত তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় এডিসি মোহাম্মদপুরের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের আভিযানিক টিম ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চরকারা গ্রামে রাব্বীর দাদার বাড়িতে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে আয়েশা ও রাব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কক্ষ তল্লাশি করে আয়েশার চুরি করা একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। 

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আয়েশা জানিয়েছে,  কাজে যুক্ত হওয়ার দ্বিতীয় দিনে সে বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করে। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ আয়েশাকে প্রশ্ন করলে বাকবিতণ্ডা হয়। লায়লা আফরোজ আয়েশাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। চতুর্থ দিন কাজে আসার সময় আয়েশা বাসা থেকে একটা সুইচ গিয়ার চাকু নিয়ে আসে। ঘটনার দিন টাকা চুরি নিয়ে তাদের মধ্যে আবারও কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আয়েশা লায়লা আফরোজকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাদের মেয়ে নাফিসা তার মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মা ও মেয়ে দুজনেই মারা যান। এ সময় আয়েশা নিজেও আহত হয় এবং রক্তমাখা কাপড় পাল্টিয়ে নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় ব্যাকপ্যাকে একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং আরও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যায়। 

বাসা থেকে বের হয়ে আয়েশা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের ভেতরে গিয়ে পুনরায় কাপড় বদলে সাভারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পরবর্তীতে সে চুরি করা ফোন ও রক্তাক্ত কাপড় সিংগাইর ব্রীজ থেকে নদীতে ফেলে দেয় বলে জানায় পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাসায় গৃহকর্মী কর্তৃক লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসা নৃসংশভাবে খুন হন। এ ঘটনায় নিহত লায়লার স্বামী বাদি হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশের  উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান এবং প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করেন। 

ঢাকা/এমআর//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম হ ম মদপ র গ হকর ম র এক পর য য় আয় শ ক আয় শ র আফর জ ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ: ফখরুল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে “বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার এক নতুন অধ্যায়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবারকার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বৃহস্পতিবার এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, “তফসিল ঘোষণা শুধু নির্বাচনসূচি নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার এক গুরুত্বপুর্ণ মুহূর্ত। দেশের জনগণ বহু অপেক্ষার পর যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছে, তার সূচনা এই তফসিল।” 

আরো পড়ুন:

সারা দেশে ‘রোড শো’ করবে বিএনপি, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ

বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

অতীতের মতো কোনোরূপ পক্ষপাত, প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি মুক্ত, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘জনগণই দেশের মালিক। তাদের রায়কে সম্মান জানানো এবং ভোটের অধিকার রক্ষা করাই বিএনপির মূল অঙ্গীকার।’’

ফখরুল আরও দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলকে সামনে রেখে বিএনপি মাঠে শক্তিশালীভাবে উপস্থিত থাকবে এবং গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা চাই একটি সুষ্ঠু পরিবেশ, সমান সুযোগ, পর্যাপ্ত স্বাধীনতা এবং সব দলের জন্য মাঠ সমতল রাখা হোক। জনগণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চায়।” 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, তফসিল ঘোষণার পর দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচনের পরিবেশ দেখতে পাবে।

ফখরুল আরও বলেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা জনগণকে সতর্ক করেছে। তাই এবার তারা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সচেতন ও রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি নির্ধারক সময়। দেশের গণতন্ত্র, ভবিষ্যৎ এবং নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন রক্ষায় এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। 

ঢাকা/আলী//

সম্পর্কিত নিবন্ধ