Prothomalo:
2025-12-11@12:54:57 GMT

জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি

Published: 11th, December 2025 GMT

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটও হবে একই দিন। ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারেরাও পোস্টাল ব্যলটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৩ লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো ইসি।

শুরুতে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপিসহ কিছু দল। গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দুজন একমত হন।

এরপর থেকে সরকার বারবার বলে আসছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ইসিও সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়। এর মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। আজ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ দুটি ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন সিইসি।

ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫৬টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকা দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। নিবন্ধিত অন্য দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এর বাইরে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী নির্বাচনই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো নির্বাচন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হচ্ছে। দুটি ভোটের সময় ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি।

সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

অন্যদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রথম র ধ র উদ দ ন বন ধ সরক র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার অবনতি: অপরাধীরা কেন এতটা বেপরোয়া

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে বা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে যে সংবাদগুলো আমাদের সবচেয়ে বেশি বিচলিত করে, তা হলো হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও নৃশংস সব অপরাধের খবর। সাধারণ মানুষের মনে আজ এক বড় প্রশ্ন—আইনশৃঙ্খলা কি কেবলই কিতাবি বুলি? অপরাধীরা কেন দিন দিন এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের সমাজের গভীরে প্রোথিত বেশ কিছু কারণ উঠে আসে। অপরাধীদের এই ‘বেপরোয়া’ হয়ে ওঠার পেছনে কেবল একটি কারণ দায়ী নয়, বরং এটি একটি বহুমুখী সংকটের সমষ্টি।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও দীর্ঘসূত্রতা

অপরাধীদের বেপরোয়া হওয়ার প্রধান কারণ হলো ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’। যখন একজন অপরাধী দেখে, গুরুতর অপরাধ করেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে সহজেই বেরিয়ে আসা যায়, তখন তার সাহস বহুগুণ বেড়ে যায়। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার নজির সমাজে এতটাই প্রবল যে সাধারণ মানুষ বিচার চাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে। বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকা এবং সাক্ষীর অভাবে বিচার না হওয়া অপরাধীদের জন্য একধরনের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ হিসেবে কাজ করে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও পেশিশক্তির দাপট

আমাদের সমাজব্যবস্থায় অপরাধ ও রাজনীতির এক অশুভ আঁতাত লক্ষ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে। যখন কোনো অপরাধী জানে যে তার মাথার ওপর ‘বড় ভাই’ বা ‘গডফাদার’-এর হাত আছে, তখন সে পুলিশ বা প্রশাসনকে তোয়াক্কা করে না। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলদারি এখন ওপেন সিক্রেট। এই ক্ষমতার দম্ভই তাদের বেপরোয়া করে তোলে।

সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়

আইন দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, যদি না সমাজের মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত থাকে। বর্তমানে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমরা এক চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং সন্তানদের ওপর নজরদারির ঘাটতি কিশোর অপরাধ বা ‘কিশোর গ্যাং কালচার’ তৈরির মূল কারণ। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করে, সমাজে সহনশীলতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

মাদকের ভয়াবহ বিস্তার

অপরাধ জগতের জ্বালানি হলো মাদক। দেশের আনাচকানাচে মাদকের সহজলভ্যতা যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই অনেকে ছিনতাই, ডাকাতি, এমনকি খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, ফলে তার পক্ষে যেকোনো নৃশংস কাজ করা সম্ভব হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা

পুলিশ বা প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও অনেক সময় জনবলসংকট, পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। আবার রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তখন অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়।

এই অন্ধকার পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

আইনের সুশাসন: অপরাধী যে–ই হোক, তার রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় বিবেচনা না করে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশি সংস্কার: পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে একটি জনবান্ধব ও স্বাধীন সত্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সামাজিক প্রতিরোধ: পাড়া-মহল্লায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক সময় দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কর্মসংস্থান: বেকারত্ব অপরাধের অন্যতম কারণ। যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।

আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি কোনো একক গোষ্ঠীর সমস্যা নয়, এটি আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের সংকট। অপরাধীরা যখন বেপরোয়া হয়, তখন সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভূলুণ্ঠিত হয়। একটি নিরাপদ, সুন্দর ও ভীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কেবল এক অরাজকতার রাজ্য রেখে যাব। এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর।

হেনা শিকদার দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, প্রচার শুরু ২২ জানুয়ারি
  • ৩৫ ফুট নিচে ক্যামেরা পাঠিয়েও দেখা যায়নি শিশুটিকে
  • এভারকেয়ারের সামনে কড়া নিরাপত্তা, বিএনপি নেতা–কর্মীদের ভিড় নেই
  • ‘১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছি, মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফেরত চাই’
  • নরসিংদীর রায়পুরায় বিশেষ কম্বিং অপারেশন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা রয়েছে, সংশয়ও আছে
  • ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি: অপরাধীরা কেন এতটা বেপরোয়া