লস অ্যাঞ্জেলেসে দিক পরিবর্তন করেছে দাবানল, নতুন হুমকি
Published: 11th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি দাবানলে জ্বলছে। টানা পাঁচ দিন ধরে দাবানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো ছয়টি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলগুলোর একটি গতকাল শনিবার দিক পরিবর্তন করেছে। এতে নতুন করে ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে নতুন হুমকির মুখে পড়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
লস অ্যাঞ্জেলেসে এই দাবানলের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার। দাবানলে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুড়ে গেছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১০ হাজার স্থাপনা। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি শুরু করেছেন। তবে মৃত্যুও বাড়তে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই দাবানল ছড়িয়ে পড়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে ‘সান্তা অ্যানা’ নামের ঝোড়ো বাতাস। গত শুক্রবার রাত থেকে এই বাতাস অনেকটা কমে এসেছে। তবে শহরের পশ্চিমে জ্বলতে থাকা ‘প্যালেসেইডস’ নামের দাবানলটি নতুন দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এরিক স্কট স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল কেটিএলএকে বলেছেন, প্যালেসেইডস দাবানলটির পূর্বের অংশে আগুন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটি দিক পরিবর্তন করে আরও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দাবানল সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
প্যালেসেইডস দাবানলটি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার আগে সেটি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা অগ্রগতির কথা জানিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এ ছাড়া শহরের পূর্বে পাসাডেনা এলাকার কাছে ‘এটন’ নামের দাবানলটিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানানো হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে প্যালেসেইডস দাবানল ৮ শতাংশ এবং এটন দাবানল ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল।
আরও পড়ুনমনে হলো এক টন ইট এসে পড়েছে, বললেন লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলে বাবাকে হারানো মেয়ে১২ ঘণ্টা আগেবড় এই দুটি দাবানলের আগুনে একত্রে লস অ্যাঞ্জেলেসের ৩৫ হাজার একর জায়গা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পুলিশ কর্মকর্তা রবার্ট লুনা বলেছেন, আগুন থেকে বাঁচতে প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮০০ জনকে এলাকা ছাড়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ।
ক্যালিফোর্নিয়ার আগুন নেভাতে এগিয়ে এসেছে প্রতিবেশী সাতটি অঙ্গরাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কানাডা থেকেও এসেছে সহায়তা। আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ফেলছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পাহাড়ের গায়ে জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক। সাধারণ সরঞ্জাম ও পাইপ থেকে পানি ছিটিয়েও চলছে আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে আসছে। এটা আগের চেয়ে কম। ফলে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের সুবিধা হতে পারে। তবে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ক্যাল ফায়ার জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার বাতাসের গতি আবার বাড়তে পারে।
এদিকে গত শুক্রবার শহরের প্যাসিফিক প্যালেসেইডস এলাকায় পোড়া ঘরবাড়িতে অনেককে ফিরতে দেখা গেছে। এমনই একজন ৪৪ বছর বয়সী কেলি ফস্টার। নিজের ধ্বংস হওয়া বাড়িতে কিছু অক্ষত আছে কি না, তা দেখছিলেন তিনি। ফস্টার বলেন, এটি তাঁদের অনেক ভালোবাসার একটি বাড়ি ছিল। এমন আরেক বাসিন্দা ডেনিস ডস (৬৩) বলেন, ‘এখন সৃষ্টিকর্তাই আমাদের পথ দেখাবেন।’
আরও পড়ুনক্যালিফোর্নিয়ায় সবচেয়ে বড় ১০ দাবানলের ৮টিই গত পাঁচ বছরে১১ ঘণ্টা আগেআবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দাবানলে এখন পর্যন্ত ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আর দাবানলে মানুষ শুধু ঘরবাড়িই হারাননি; লাখ লাখ বাসাবাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়েছে বাতাস। এতে শারীরিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন মানুষজন।
তবে দাবানলের পর আবার লস অ্যাঞ্জেলেস পুনর্গঠনের আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগামী ছয় মাস লস অ্যাঞ্জেলেসের পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য শতভাগ অর্থায়ন করবে মার্কিন সরকার।
আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের পেছনে কারণ কী, তদন্তকারীরা কী ভাবছেন৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের ৭২০ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস, দাবি ইসরায়েলের
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তেহরানে অন্তত ৮০টি লক্ষ্যবস্তুতে রাতভর হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় ডজনখানেক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে টানা তৃতীয় দিনে এ হামলা চালানো হলো। খবর বিবিসির
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর, সামরিক গবেষণা ও উন্নয়ন শাখা বলে দাবি করা হয়েছে।
রয়টার্স এক সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল দুটি ‘দ্বৈত-ব্যবহারের’ জ্বালানি কেন্দ্র। ওই জ্বালানি কেন্দ্র সামরিক ও পারমাণবিক কাজে ব্যবহার করা হতো।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে তিন দিনের কম সময়ের মধ্যে তারা ইরানের ১৭০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ইরানের ৭২০টির মতো সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে।