আমাদের সমাজে এখনো অনেক মেয়েকে খুব ছোট বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় তারা তখনো শিশু। এ ধরনের বিয়ে হলো বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ মানে এক শিশুকে তার বয়সের জন্য অনুপযুক্ত দায়িত্বে আবদ্ধ করা। সে তখনো শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপূর্ণ নয়। কিন্তু সমাজ ও পরিবার তাকে বাধ্য করে সংসারের জন্য। তারা বলবে, ‘তোমার বয়স এখন পড়াশোনার নয়, সংসারের।’ এই বাক্য তার ছোট্ট হৃদয় ভেঙে দেয়, স্বপ্নকে থামিয়ে দেয় আর শিশুর হাসিকে থামিয়ে দেয়।

আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, একটি মেয়েকে স্কুলে যাওয়ার বয়সে যদি ঘরে আটকে রাখা হয়, তার জীবন কতটা কঠিন হয়ে যায়? সে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতে চায়, বন্ধুদের সঙ্গে খেলার আনন্দ উপভোগ করতে চায়, নতুন কিছু শিখতে চায়, কিন্তু সে বাধাপ্রাপ্ত হয়। স্কুলে নিয়মিত যাওয়া কঠিন হয়ে যায়, পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি অসম্ভব হয়ে যায়, হোমওয়ার্ক করা মুশকিল হয়ে ওঠে। তার স্বপ্ন থেমে যায়।

মাধ্যমিক শিক্ষা হলো এমন এক সময়, যখন একটি শিশু তার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করে। কিন্তু বাল্যবিবাহ সেই সময়কেই ভেঙে দেয়। ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া, নতুন কিছু শেখা—সবই বাধাপ্রাপ্ত হয়। ঘরের দায়িত্ব, সংসার পরিচালনা, সন্তান দেখাশোনার মতো দায়িত্ব এসে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে সে তার স্বপ্ন পূরণের পথ হারিয়ে ফেলে।

শুধু পড়াশোনা নয়, বাল্যবিবাহ মেয়েদের মানসিক ও সামাজিক জীবনকেও প্রভাবিত করে। বন্ধুর সঙ্গে খেলার সময় কমে যায়। নতুন কিছু শেখার সুযোগ সীমিত হয়। সমাজের নানা রকম সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। কেউ বলে, ‘ছোট বয়সে বিয়ে করলে কী হবে?’ বা ‘এটা ঠিক হয়নি।’ এই কথাগুলো শিশুর মনকে আরও দমিয়ে দেয়, তার স্বপ্নের জগৎকে ছোট করে দেয়।

বাল্যবিবাহের ফলে স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেয়েরা প্রাকৃতিকভাবে বয়সের জন্য প্রস্তুত নয়। যখন তারা সন্তান ধারণ করে, তখন তাদের শরীর ও মন উভয়ই প্রভাবিত হয়। ক্লাসে যাওয়া বা হোমওয়ার্ক করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে শিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারে বাল্যবিবাহের প্রভাব আরও বেশি। অনেক পরিবার মেয়েকে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার চেয়ে বিয়ে করাতে আগ্রহী। কেউ ভাবেন, ‘মেয়ের নিরাপত্তা সবচেয়ে বড়।’ কিন্তু বাস্তবে নিরাপত্তার নামে মেয়েদের পড়াশোনা ও স্বপ্ন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। স্কুল হলো প্রতিটি শিশুর জন্য জ্ঞান ও স্বাধীনতার জায়গা। বাল্যবিবাহ তা বন্ধ করে দেয়।

আপনি যদি একনজরে দেখেন, দেশের বহু গ্রামের মেয়েরা মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছাতে পারে না। তারা ছোট বয়সেই সংসারের দায়িত্বে আবদ্ধ হয়। বন্ধুর সঙ্গে খেলাধুলা, স্কুলে যাওয়ার আনন্দ, নতুন বই পড়ার সুযোগ—সবই সীমিত হয়ে যায়। অনেক সময় তারা হতাশ হয়। স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। তারা মনে করে, ‘আমার জীবন শেষ।’

তবে শুধু স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়া নয়; বাল্যবিবাহ মেয়েদের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তিকেও নষ্ট করে। তারা নিজের ক্ষমতা ও সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করে। মনে হয়, ‘আমি কীভাবে বড় হয়ে নিজের জীবন গড়ব?’ বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। নতুন কিছু শেখার আগ্রহও কমে যায়। মানসিক চাপ বাড়ে।

আমরা যদি সত্যিই চাই আমাদের মেয়েরা স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়, তাহলে বাল্যবিবাহ রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। পরিবার, শিক্ষক, সমাজ, সরকার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মা–বাবা যদি সচেতন থাকেন, তাঁরা মেয়েকে ছোট বয়সে বিয়ে না দিয়ে পড়াশোনায় সহায়তা করতে পারেন। তাঁরা মেয়েকে বলবেন, ‘তুমি পড়াশোনা করো, বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াও।’ এই ছোট্ট কথাগুলোই মেয়ের জন্য বড় শক্তি। শিক্ষকেরা মেয়েদের উৎসাহিত করবেন। বন্ধুরা সহমর্মিতা দেখাবে। সমাজও সমর্থন করলে বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব।

আইনও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আইন আছে। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয় না। অনেক পরিবার আইনের উপেক্ষা করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়। স্কুলের পরিবেশ, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আর আইনের কঠোর প্রয়োগ—সব মিলিয়ে আমাদের সমাজে মেয়েদের শিক্ষার পথ খোলা রাখতে হবে।

মাধ্যমিক পড়াশোনা মেয়ের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি তার স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। বাল্যবিবাহ সেই সম্ভাবনা কেড়ে নেয়। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রতিটি মেয়েকে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে, তার পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হবে।

আজও অনেক মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে পড়েছে। কেউ চাকরি করছে না, কেউ ব্যবসা করছে না, কেউ একাই সংসার সামলাচ্ছে। তারা প্রমাণ করছে—বাল্যবিবাহ শুধু তাদের শিক্ষা ও স্বপ্নকে থামায়, কিন্তু সাহস ও সম্ভাবনা সম্পূর্ণ নষ্ট করতে পারে না। তারা বড় হয়ে জীবন গড়ার চেষ্টা করছে।

আমরা সবাই যদি সচেতন হই, তাহলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব। পরিবার, শিক্ষক, বন্ধু, সমাজ—সবাইকে মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের শিক্ষা চালিয়ে নিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শেষ করার সুযোগ দিতে হবে। এভাবে তারা স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

শিক্ষিত মেয়ে শুধু নিজের জীবন গড়বে না, সমাজ ও দেশের জন্যও উপকার করবে। সে ভালো চাকরি করতে পারবে। নিজের পরিবারকে সাহায্য করতে পারবে। সন্তানদের ভালোভাবে মানুষ করতে পারবে। সমাজে উদাহরণ স্থাপন করতে পারবে। বাল্যবিবাহ সবকিছু ধ্বংস করে। তাই এটি রোধ করা জরুরি।

আমাদের সমাজের প্রত্যেককে বোঝানো দরকার, বাল্যবিবাহ মানে কোনো সুবিধা নয়; এটি শিশুর জীবন, স্বপ্ন ও শিক্ষা নষ্ট করে। আমাদের কাজ হলো মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করা। ছোট্ট শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারবে—পড়াশোনা করা জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।

জান্নাতি আক্তার

শিক্ষার্থী

ঝুমুরবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়

সাঘাটা, গাইবান্ধা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন ক ছ বন ধ র র জ বন আম দ র পর ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আফ্রিদির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

বিকেলে ছিল ম্যাচ হবে কি না অনিশ্চয়তা। নানা নাটকীয়তার পর অনিশ্চয়তা কেটে ম্যাচ শুরু হলো এক ঘণ্টা দেরিতে। তবে বিলম্বিত ম্যাচে আর খুব বেশি অনিশ্চয়তা–নাটকীয়তার দেখা মিলল না। দুবাইয়ে ফেবারিট হিসেবে মাঠে নেমে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৪১ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।

এই জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে জায়গা করেছে সালমান আগার দল। ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেরা চারে জায়গা করেছে ভারতও। যার অর্থ, ২১ সেপ্টেম্বর আবারও মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত–পাকিস্তান।

গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাকিস্তান–আরব আমিরাত ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত–পাকিস্তান গ্রুপ ম্যাচের ঘটনার জেরে। সেদিন ভারতের খেলোয়াড়েরা পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ম্যাচের শুরু ও শেষে হাত না মেলানোয় ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

পাইক্রফট টসের সময় অধিনায়ককে হাত না মেলানোর পরামর্শ দিয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ চেয়ে রীতিমতো এশিয়া কাপ বর্জনের আবহ তৈরি করে পিসিবি।

শেষ পর্যন্ত পাইক্রফটের ক্ষমা প্রার্থনায় গতকাল তাঁর পরিচালনায় আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামে পাকিস্তান। তবে খেলতে নামার সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনার জন্য এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয় ম্যাচ শুরুর সময়।

আরও পড়ুনপাকিস্তান অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ম্যাচ রেফারি পাইক্রফট, দাবি পিসিবির৬ ঘণ্টা আগে

দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে আমিরাত অধিনায়ক টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। ফখর জামানের ৩৬ বলে ৫০ আর শেষ দিকে শাহিন আফ্রিদির ১৪ বলে ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৬। মূলত আফ্রিদির শেষ দিকের ঝোড়ো ব্যাটিংই পাকিস্তানের রান দেড় শর কাছাকাছি নিয়ে যায়।

নানা নাটকীয়তার পর অ্যান্ডি পাইক্রফটই পাকিস্তান–আমিরাত ম্যাচে রেফারির দায়িত্বে ছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ