সোমবার ইউক্রেনের স্পেশাল অপারেশন ফোর্সেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রের একটি ঘটনা পোস্ট করেছে। তাতে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার তুষারাবৃত পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্কে এক যুদ্ধের পর ইউক্রেনীয় বিশেষ বাহিনী এক ডজনেরও বেশি নিহত উত্তর কোরিয়ার সেনার মৃতদেহ তল্লাশি করে। এদের বাইরে একজন সেনাকে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়েছিল। কিন্তু ইউক্রেনের সেনারা যখন তার কাছে গেলো, তখন সে একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় এবং নিজেকে উড়িয়ে দেয়। সৌভাগ্যক্রমে ইউক্রেনের সেনারা প্রাণে বেঁচে গেছে।

কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র, গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং দেশত্যাগী উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের সাক্ষ্য থেকে প্রাপ্ত ক্রমবর্ধমান প্রমাণের মাধ্যমে জানা গেছে, কিছু উত্তর কোরিয়ার সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে চরম পদক্ষেপ নিচ্ছে।

২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া উত্তরের সাবেক এক সেনা সদস্য রয়টার্সকে বলেছেন, “আত্মঘাতী বিস্ফোরণ এবং আত্মহত্যা: এটাই উত্তর কোরিয়ার বাস্তবতা। যেসব সেনা যুদ্ধের জন্য বাড়ি ছেড়েছিল তাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে এবং তারা কিম জং উনের জন্য আত্মত্যাগ করতে সত্যিই প্রস্তুত।”
 
ইউক্রেন এবং পশ্চিমা মূল্যায়ন বলছে,  পিয়ংইয়ং রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলে মস্কোর বাহিনীকে সমর্থন করার জন্য প্রায় ১১ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে তিন হাজার সেনা নিহত বা আহত হয়েছে।

জেনেভায় জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার মিশন তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।

সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার একজন আইনপ্রণেতাকে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে আহত ও নিহত উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সংখ্যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা ড্রোন হামলার মতো আধুনিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় এবং তারা সম্ভবত ‘কামানের ঢাল’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আরোউদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এই সেনাদের আত্মহত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে লক্ষণ পাওয়া গেছে।

ক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের গোয়েন্দা কমিটির সদস্য লি সিওং কুয়েউন বলেন, “সম্প্রতি, এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, একজন উত্তর কোরিয়ার সেনা ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ঝুঁকিতে ছিল, তাই সে জেনারেল কিম জং উনের জন্য চিৎকার করেছিল এবং নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি গ্রেনেড বের করেছিল, কিন্তু সে নিহত হয়েছিল।”

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তকবি রবিদাসের ‘বেগমপুরা’ শহর

সন্ত রবিদাস (রইদাস, রবিদাসজি) পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতকের এক মহান ভারতীয় সাধক, কবি ও সমাজসংস্কারক। উত্তর ভারতের ভক্তি আন্দোলনের তিনি অন্যতম পুরোধা। তাঁর অনুসারীরা রবিদাসিয়া নামে পরিচিত। তাঁর কাব্য ও শিক্ষা বর্ণভেদপ্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং এক ঈশ্বরপ্রেমমূলক, সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখায়। পাঞ্জাবি, হিন্দি ও ব্রজ ভাষায় রচিত তাঁর বহু পদ ‘গুরু গ্রন্থ সাহিব’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা তাকে শিখধর্মের মধ্যেও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।

সন্ত রবিদাসজির জন্ম ১৪৫০ সালের আশপাশে (কিছু মতে ১৩৭৭/১৩৮৮) বর্তমান উত্তর প্রদেশের বারানসি (কাশী) শহরের কাছে সীর গোবর্ধনপুর গ্রামে এক চর্মকার পরিবারে। তাঁর পিতা সন্তোক দাস ও মাতা কলসী দেবী ছিলেন সমাজে নিম্নবর্ণভুক্ত। পিতার পেশা ছিল চর্মশিল্প। রবিদাস ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিক ভাবধারায় আকৃষ্ট হন। সংসারধর্মে অত আগ্রহ ছিল না তাঁর।

সন্ত রবিদাস (রইদাস, রবিদাসজি) পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতকের এক মহান ভারতীয় সাধক, কবি ও সমাজসংস্কারক। উত্তর ভারতের ভক্তি আন্দোলনের তিনি অন্যতম পুরোধা। তাঁর অনুসারীরা রবিদাসিয়া নামে পরিচিত।

রবিদাস ছিলেন ভক্তিযুগের অন্যতম প্রাণপুরুষ। তাঁর উপাসনা ছিল ‘নির্গুণ ভক্তি’। কোনো মূর্তিতে নয়, বরং হৃদয়ের মধ্যেই ঈশ্বরের অনুভব ছিল তাঁর আরাধ্য। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘মন চাঙ্গা তো কাঠৌরি মে গঙ্গা’। অর্থাৎ, মন পবিত্র হলে, কাঠের পাত্রেও গঙ্গার পবিত্রতা বিরাজ করে। তিনি চেয়েছেন জাত-পাতের ভেদ ভুলে, সবাই যেন এক প্রভুর সন্তান হয়ে থাকে। তাঁর একটি বিখ্যাত কাব্যপঙ্‌ক্তি :

‘রবিদাস জন্ম কে কারণে হোতি নাহি কওি নীচ।
নারি ভুজন কর দ্বারায়ে সোই দেব সম তাচ।’

অর্থাৎ, রবিদাস বলে—জন্মের কারণে কেউ নীচ হয় না। নীচ করে তো মানুষের কর্ম, কর্মেরই কাদা তাকে ডোবায়। যে নারীকে সম্মান করে, তাকে দেবতার মতো জ্ঞান করো।

রবিদাস ছিলেন সমাজে প্রচলিত বর্ণবৈষম্যের কঠোর সমালোচক। নিজে চর্মকার হয়েও তিনি সমাজে ‘ভক্তি’র মাধ্যমে মর্যাদা অর্জন করেন। তিনি বলতেন, একজন নিম্নবর্ণভুক্ত মানুষও যদি পরম ভক্ত হন, তবে তিনি ব্রাহ্মণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

‘বেগমপুরা’ তাঁর সবচেয়ে সাড়াজাগানো কবিতা। ‘বেগমপুরা’ হলো রবিদাসের স্বপ্নের শহর, মার্ক্সেরও আগের সাম্যবাদ, ফরাসি বিপ্লবেরও আগের সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার মেনিফেস্টো। রাষ্ট্রহীন, শ্রেণিহীন, বর্ণহীন—সব অসাম্যমুক্ত এক কল্পনগর।

রবিদাসজির এই বিখ্যাত ইউটোপিয়া আজও প্রাসঙ্গিক, আজও প্রণোদনা-জাগানিয়া, যেখানে নেই কোনো কষ্ট, জাতবিভেদ, শোষণ বা যন্ত্রণা। তিনি কল্পনা করেছিলেন এক বর্ণহীন ও শ্রেণিহীন সমাজের, যেখানে সবাই সমান, সবাই মুক্ত।

‘বেগমপুরা শহর কো নাঁও।
দুখ অন্ধোহ নাহি তহি ঠাঁও।।’

তিনি ছিলেন বর্ণবৈষম্যের কঠোর সমালোচক। নিজে চর্মকার হয়েও তিনি সমাজে ‘ভক্তি’র মাধ্যমে মর্যাদা অর্জন করেন। তিনি বলতেন, একজন নিম্নবর্ণভুক্ত মানুষও যদি পরম ভক্ত হন, তবে তিনি ব্রাহ্মণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

রবিদাস হিন্দি, ব্রজ ও পাঞ্জাবি মিশ্রিত ভাষায় পদ রচনা করেন। তাঁর কাব্যে ছিল সরলতা, ঈশ্বরপ্রেম ও মানবসমতার বার্তা। তাঁর প্রায় ৪০টি রচনা ‘শ্রী গুরু গ্রন্থ সাহিব’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁর পদাবলিতে আত্মবোধ, ভক্তিরাগ, সমাজসচেতনতা ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সমন্বয় লক্ষ করা যায়।

রবিদাসের প্রভাব উত্তর ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর অনুসারীরা আজও রবিদাসিয়া নামে পরিচিত। পাঞ্জাবে, উত্তর প্রদেশে, মধ্যপ্রদেশে, রাজস্থানে এবং দেশের বাইরে পাঞ্জাবি শিখ ও দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে তিনি গভীরভাবে সম্মানিত।

তিনি যে ‘বেগমপুরা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজও মানবসমাজের সামনে এক নৈতিক আদর্শ, যেখানে নেই শ্রেণি, নেই শোষণ—আছে কেবল প্রেম, সমতা ও ভক্তির ঐক্য।

সন্ত রবিদাসের একগুচ্ছ কবিতা রবিদাস হিন্দি, ব্রজ ও পাঞ্জাবি মিশ্রিত ভাষায় পদ রচনা করেন। তাঁর কাব্যে ছিল সরলতা, ঈশ্বরপ্রেম ও মানবসমতার বার্তা। তাঁর পদাবলিতে আত্মবোধ, ভক্তিরাগ, সমাজসচেতনতা ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সমন্বয় লক্ষ করা যায়।

তুমি যদি পর্বত হও

তুমি যদি পর্বত হও,
তবে আমি ময়ূর।
তুমি যদি চাঁদ হও,
তবে আমি চকোর।

ও মাধো, তুমি যদি আমাকে ছাড়ো,
তবে আমিও তোমাকে ছাড়ব।
আর আমি যদি তোমায় ছাড়ি,
তবে আর কার শরণ নেব আমি?

তুমি যদি প্রদীপ হও,
তবে আমি সলতে।
তুমি যদি তীর্থস্থান হও,
তবে আমি তীর্থযাত্রী।

তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা
খাঁটি এবং সত্য।
আমি যখন তোমায় ভালোবেসে ফেলি,
তখনই ত্যাগ করি সকল অন্য প্রেম।

আমি যেখানেই যাই,
সেখানে তোমারই সেবা করতে চাই।
আর কোনো দেবতা
তোমার মতো প্রভু হতে পারে না।
তোমার বন্দনায়
আমি কেটে ফেলি যমের ফাঁস।
ভালোবাসার তৃষ্ণায়
রবিদাস উচ্চ স্বরে গান গায়।

নামই সত্য

নামই একমাত্র সত্য,
হে রবিদাস, শুরুতে যেমন ছিল সত্য,
শেষেও তাই থাকবে সত্য।
নামই সমস্ত পাপ ও যন্ত্রণার বিনাশ করে,
এবং এটাই প্রকৃত আনন্দের ধনভান্ডার।

একমাত্র মনে করে ধ্যান করো,
ভগবানের প্রতি ভক্তি করো, হে রবিদাস।
ভেতরে যেন আপনিই যেন বাজে
সত্য নামের অনুরণন।

যখন সুরত (চেতনা) শব্দে (শব্দরূপ ঈশ্বরে) মিশে যায়,
তখনই মিলন ঘটে পরম আনন্দের।
ভেতরে জ্বলে আলো,
আর উদ্ভাসিত হয় ঐশ্বরিক সুখ।

যখন আমি ছিলাম

যখন আমি ছিলাম,
তখন তুমি ছিলে না।
এখন তুমি আছ,
আমি আর নেই।
যেন ঝড় তোলে ঢেউ
জলে—
তবু সবই জলজলে।

ও মাধো,
এই মায়াকে কেমন করে ব্যাখ্যা করি?
যা আমরা ভাবি, তা তো নেই।

একজন রাজা
সিংহাসনে ঘুমিয়ে
স্বপ্নে দেখে সে এক ভিখারি।
তার রাজ্য চোখের সামনে উধাও হয়ে গেলে
সে ভারী শোকে ডুবে যায়—
আমাদের অবস্থাও তাই।

যেন সেই সাপ-রশির কাহিনি—
আমি কিছুটা জানি এই রহস্য।
অনেক বালা দেখেও আমরা ভাবি
সোনার কত রকম রূপ!
কিন্তু সবই আসলে চিরকাল সোনা।

সবকিছুর মধ্যেই
আছেন প্রভু,
অসংখ্য রূপে প্রকাশিত।
প্রতিটি কণায় তিনি খেলেন।
রবিদাস বলে,
তিনি আমার হাতের থেকেও কাছাকাছি।
সবই ঘটে
তাঁরই ইচ্ছায়।

তুমি আমি এক

তুমি আমি এক—আমাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
আমরা সোনার মতো আর চুড়ির মতো,
জলের মতো আর ঢেউয়ের মতো।

আমি যদি পাপ না করতাম, হে অনন্ত প্রভু,
তবে তুমি পাপী উদ্ধারকারী নামে
কেমন করে পরিচিত হতে?

তুমি আমার প্রভু, অন্তরতত্ত্বজ্ঞানী, হৃদয়ের সন্ধানকারী।
ভৃত্য তার প্রভুর মাধ্যমে পরিচিত,
আর প্রভুও তার ভৃত্য দ্বারা জানা যায়।

আমার দেহ দিয়ে যেন তোমার সেবা ও উপাসনা করতে পারি।
রবিদাস বলে,
যে বোঝে যে প্রভু সবার মধ্যেই সমভাবে বিরাজমান,
সে মানুষ বিরল।

বেগমপুরা

বেগমপুরা—এই শহরের নাম,
যেখানে কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই।

না কর, না খাজনা, না সম্পত্তির মালিকানা;
না অন্যায়, না ভয়, না নির্যাতন।

ভাইরে আমার, আমি তো এই শহরকেই নিজের বলে বেছে নিয়েছি,
দূরের এই দেশ, যেখানে সবকিছুই সঠিক, সবকিছুই সৎ।

এই রাজ্য চিরস্থায়ী, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ,
যেখানে কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয় নয়—
সবাই সমান, সবাই এক।

সবাই যার যা ইচ্ছা তাই করে,
স্বচ্ছন্দে চলে রাজপ্রাসাদের ভিতর-বাহিরে,
কেউ বাধা দেয় না।

রবিদাস, এক চর্মকার, যে এখন মুক্ত;
যে আমার এই শহরের সাথি, সে-ই আমার বন্ধু।

????️ অন্য আলোর ফেসবুক পেজ ফলো করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ
  • ‘অবৈধ’ বলে হকার উচ্ছেদের যৌক্তিকতা কতটুকু
  • ৩০ সেকেন্ডে ভাঙলেন ৬৫ শসা
  • ট্রাম্পের বিজয়ের এক বছরের মধ্যেই সবখানে প্রতিরোধ
  • কুমিল্লা থেকে আলোচিত মামুন হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২
  • সিরিয়ার জন্য সবকিছু করার প্রতিশ্রুতি দিলেন ট্রাম্প
  • দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে অতীতের মতো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কেন দায়ী করছে না মোদি সরকার
  • বিরামপুর রেলস্টেশনে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ নারীর সন্তান প্রসব
  • বিয়ে করেছেন প্রিয়াঙ্কা জামান
  • সন্তকবি রবিদাসের ‘বেগমপুরা’ শহর