অনার্স ও ডিগ্রিতে এক বছরের কারিগরি শিক্ষা চালুর চিন্তা
Published: 15th, January 2025 GMT
এক বছর মেয়াদে কারিগরি শিক্ষা চালুর চিন্তা করছে সরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্স ও ডিগ্রিতে এ শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিগগিরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমিয়ে বৃত্তিমূলক আত্মকর্মসংস্থান বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়স্থ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে এ বিভাগের সচিবসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)-এর নেতৃবৃন্দদের অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড.
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন অবহেলিত মাদ্রাসা শিক্ষার ভিত্তি ইবতেদায়ির প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিগত দিনে বহুবার দাবি-দাওয়া জানালেও যেসব বিষয় আমলে নেননি আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-সচিবরা। এবার সেসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। এ লক্ষে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য বেশকিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “ধাপে ধাপে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হবে। এছাড়া ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং মিড ডে মিলও চালু হচ্ছে।”
মতবিনিময় সভায় ইবতেদায়ি মাদ্রাসার করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, “স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার করুণ হাল, অনেক মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোকে বাঁচানো দরকার। এগুলো না থাকলে ফিডার স্টুডেন্ট কোথায় পাওয়া যাবে? আবার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মাদ্রাসা যারা শুরু করে তারা স্কুল থেকে যাচ্ছে। ফলে তারা কি শিখছে? না ভালোভাবে আরবি শিখছে, না বাংলা। এ জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর দুটি উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমটি হচ্ছে- স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে এবং কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এসব মাদ্রাসায় বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের জন্য আলাদা প্রজেক্ট করার নির্দেশনা দিয়েছি, তারা একটি ডিপিপি তৈরির প্রক্রিয়া শিগগির শুরু করবেন।”
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও মিড ডে মিলের বিষয়ে তিনি বলেন, “ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং মিড ডে মিলের জন্য প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে।”
কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে সচিব বলেন, “শিক্ষা নিয়ে আমার কিছু স্বপ্ন রয়েছে। আমি অনুভব করি কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কারিগরি শিক্ষা ছাড়া দেশের এত বেশি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব নয়। তাই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা উন্নতি করতে পারব না। পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তাদের বড় একটা অংশ সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াতে চান। কাজেই তাদেরকেও মাইনাস করে আমরা চলতে পারব না।”
সচিব আরো বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রামে-গঞ্জে অনার্স-মাস্টার্স দেওয়া হচ্ছে। কিছু ভালো তো আছে, অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে সেখানে পড়ছে, ভালোও করছে। কিন্তু সার্বিকভাবে কিছু বেকার সৃষ্টি করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার মানও সন্তোষজনক নয়। ফলে তারা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে না ফিরে যেতে পারছে তাদের বাবার পেশায়, না পাচ্ছে কোনো চাকরি। ফলে বেকার তৈরি হচ্ছে। এখানে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। যদিও কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা আছে। আমাদের সেগুলো দূর করতে হবে। যখন দেখবে কলেজে অনার্স পড়ানোর চাইতে কারিগরিতে পড়লে একটা কর্মসংস্থান হবে। তখন কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী হবে। এ জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।”
কারিগরি বিভাগের সচিব বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের অনার্স কোর্স ও পাস কোর্স তিন বছরের আছে। এখানে ১ বছর করে কারিগরি প্রযুক্তি শিক্ষা দিতে চাই। এটা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিসহ অন্যান্যদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। কিভাবে এটা প্রয়োগ করা যায় এটা নিয়ে চিন্তা করছি। শিগগিরই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বসব। কারণ এখানে এক বছরের একটি কোর্সের একটা সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে গিয়ে অনেকে ভালো চাকরি পেতে পারে। দেশে ভালো কিছু করতে পারে, দক্ষতা অর্জন করে। সেই উদ্যোগটাই নেওয়া হবে।”
মতবিনিময় সভায় কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) মো. নজরুল ইসলাম, ড. মো. আয়াতুল ইসলাম (কারিগরি অনুবিভাগ), সামসুর রহমান খান (প্রশাসন ও অর্থ), ড. মো. সিরাজুল ইসলাম (উন্নয়ন অনুবিভাগ), মো. আজিজ তাহের খান (অডিট ও আইন), ইরাবের সভাপতি ফারুক হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমান, ইরাবের সাবেক সভাপতি সাব্বির নেওয়াজ, নিজামুল হক, শরীফুল আলম সুমন, মীর মোহাম্মদ জসিমসহ সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/ইমন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম র জন য বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
সমঝোতার পথে ট্রাম্প-সি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুই দেশের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ শান্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাজারকে নাড়া দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে তাঁদের মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানোর দাবি করেছেন ট্রাম্প ও সি। তাঁদের আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে কিছু শুল্ক কমানোর এবং চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজের সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ছয় বছর পর ট্রাম্পের সঙ্গে এটিই ছিল সির প্রথম সাক্ষাৎ। ট্রাম্প একে ‘মহান সাফল্য’ বলে অভিহিত করেন, আর চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে তাঁরা ‘গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে’ পৌঁছেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আলোচনার পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা ছিল এক অসাধারণ বৈঠক।’ তিনি সিকে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী দেশের অসাধারণ নেতা’ বলে প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করার কথাও জানান।
ট্রাম্প আরও বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে চীন অবিলম্বে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন ও অন্যান্য কৃষিপণ্য কিনতে সম্মত হয়েছে। সয়াবিন কেনার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে ট্রাম্পের সমর্থনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বেইজিংয়ের জন্যও প্রভাব বিস্তারের উপায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, আলোচনার ফলে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ সরবরাহ নিয়ে এক বছরের চুক্তি হয়েছে। পরবর্তীকালে এ সময় বাড়ানো হবে। উল্লেখ্য, বিরল খনিজ উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে কাজে লাগে।
বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এক বছরের জন্য কিছু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যার মধ্যে বিরল খনিজও রয়েছে। এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প বলেন, সব বিরল খনিজের বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।
সি বলেন, একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে এবং তিনি যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান।
ট্রাম্প আরও বলেন, চীনা নেতা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি প্রাণঘাতী ওপিওয়েড ফেন্টানিলের প্রবাহ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ফেন্টানিল বাণিজ্যে সহযোগিতার অভিযোগ করে আসছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘ফেন্টানিল আমদানি হওয়ার কারণে আমি চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলাম। বুসানে আলোচনায় সির বক্তব্যের ভিত্তিতে আমি সেটি ১০ শতাংশ কমাতে যাচ্ছি।’
দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ‘আলোচনার ফলাফল নিয়ে আমাদের কৃষকেরা খুবই খুশি হবেন।’ তিনি আরও বলেন, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করবে যার মধ্যে আলাস্কার তেল ও গ্যাসও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা শিগগিরই সেই জ্বালানি চুক্তি চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসবেন।
ট্রাম্প বলেন, দুই পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি চিপের বিষয়ে আলোচনা করেছে, যার মধ্যে এনভিডিয়ার তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপও রয়েছে।
অংশীদার ও বন্ধুট্রাম্প ও সির বৈঠক হয় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। বৈঠক শেষে সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি দুই নেতা। বৈঠক শেষ হতেই ট্রাম্প সরাসরি এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠেন, হাত নাড়িয়ে ও মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে সমর্থকদের অভিবাদন জানান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর বিমান উড্ডয়ন করে। সিকে দেখা যায়, বৈঠককক্ষের বাইরে তাঁর লিমুজিনে উঠতে।
বৈঠক শুরু হওয়ার আগে সি স্বীকার করেন, দুই দেশের মধ্যে সব সময় মতের মিল হয় না, তবে তাদের উচিত অংশীদার ও বন্ধু হওয়ার জন্য চেষ্টা করা। সি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ দেশ হিসেবে দায়িত্ব যৌথভাবে বহন করতে পারে এবং দুই দেশ ও সমগ্র বিশ্বের কল্যাণে আরও বড় ও বাস্তব সাফল্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
দুই নেতা মুখোমুখি বসেছিলেন। তাঁদের পাশে ছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক উপস্থিত ছিলেন। বেইজিং থেকে সির দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং।
গৌরবময় সাফল্যবৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে ২১টি দেশের এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে। ওই সম্মেলনে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নেতারাও অংশ নেন।
এটি ছিল ট্রাম্পের এশিয়া সফরের শেষ গন্তব্য। এর আগে পাঁচ দিনের এশিয়া সফরে ট্রাম্প মালয়েশিয়া ও জাপান সফর করেছেন। ট্রাম্পের আশা ছিল, বুসানে ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি হবে; কিন্তু তা হয়নি। তবু ট্রাম্প বলেন, তাঁদের আবার দেখা হবে এবং তিনি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনার সমাধান করতে চান।
বৈঠকে সি তাইওয়ানের বিষয়টি তুলতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। বেইজিং হয়তো তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমানোর জন্য চাপ দিতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। ট্রাম্প বলেন, তাইওয়ানের বিষয়টি ওঠেনি।