৬৪ বলে ১০৮ রান। ৬ চার ও ৮ ছক্কা। তানজিদ হাসান তামিম সিলেটে শেষ ম্যাচে যা করেছেন তাতে মুগ্ধ হয়েছে দর্শকরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে উড়েছে ঢাকা ক্যাপিটালসও। ছয় ম্যাচ পর পেয়েছে প্রথম জয়।

ছোট ছোট ইনিংস খেলার পর তিন অঙ্ক ছুঁয়ে তানজিদ বুঝিয়ে দিয়েছেন বড় কিছুর ক্ষুধা এখনো মেটেনি তার। সামনে ঢাকা ক্যাপিটালসের অতি গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচ। প্রতিযোগিতার শেষ চারে জায়গা করে নিতে হলে শেষ পাঁচ ম্যাচে চারটিতেই জয় পেতে হবে তাদের। সেই লক্ষ্যে নিজের ছড়ি ঘোরাবেন বলেই আশা দেখিয়ে গেলেন ঢাকার ওপেনার।

চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে আগামীকাল ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রতিপক্ষ ফরচুন বরিশাল। দুই দল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) একই সময়ে জহুর আহমেদে অনুশীলন করেছে। নেটে ২২ গজে ঘাম ঝরিয়ে তানজিদ মুখোমুখি হয়েছিলেন গণমাধ্যমের। সেখানে তার কথা শুনেছে রাইজিংবিডি—

আরো পড়ুন:

ছোট সীমানা পেরিয়ে ‘আদর্শ ক্রিকেট’ মাঠে চট্টগ্রামের বিপিএল

চেক বাউন্সের পর রাজশাহীর অনুশীলন বাতিল

শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। চট্টগ্রামেও আপনার সেঞ্চুরি রয়েছে। এবার নিশ্চয়ই সেঞ্চুরি পেতে চাইবেন। সঙ্গে যোগ করতে চাই, নতুনত্ব কিছু এনেছেন ব্যাটিংয়ে?
তানজিদ হাসান তামিম: ব্যাটিংয়ে নতুনত্ব বলতে আসলে কিছু নেই। আগের কয়েকটা ইনিংসে আমি ভালো শুরু করেও ক্যারি করতে পারিনি। তারপর রিয়েলাইজ করতে পেরেছি যে, আমি যদি পাওয়ার প্লে’টা ভালো ব্যবহার করতে পারি ও এরপর নিজেকে কিছুটা সময় দেই তাহলে মনে হয় আমার জন্য ভালো। এটাই সবশেষ ম্যাচে চেষ্টা করেছি, সফল হয়েছি। চেষ্টা থাকবে সামনের ম্যাচগুলোও একই পরিকল্পনায় খেলার।

৭ ম্যাচে ১৬ ছক্কা মেরেছেন। কোনো রহস্য আছে কিনা?
তানজিদ হাসান তামিম: ছক্কার কোনো রহস্য নেই। সবসময় মেরিট অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি। যেটা আমি জোনে পেয়েছি, সেটাই খেলেছি।

তামিমের সঙ্গে ব্যাট নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। আপনার সেঞ্চুরি নিয়ে কিছু বলেছেন?
তানজিদ হাসান তামিম: (ব্যাটের) এটা কী বলব! তেমন কোনো রহস্য নেই। তামিম ভাইয়ের সঙ্গে যখনই মাঠে একসঙ্গে থাকি, উনার সঙ্গে আমার কথা হয়। উনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে। আর উনার সঙ্গে কথা বললে আমার নিজের আত্মবিশ্বাসটাও বাড়ে। তো এটা আগে থেকেই। যখনই সামনাসামনি দেখা হয়, চেষ্টা করি উনার সঙ্গে কথা বলতে। সবশেষ ইনিংস নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর বলেছেন, যে রকম ফ্লোতে আছি, সেটা যেন কন্টিনিউ করি।’’

প্রত্যাশা বেড়ে গেছে নিশ্চয়ই আপনার উপর?
তানজিদ হাসান তামিম: (প্রত্যাশার চাপ) প্রত্যাশা তেমন কিছু না। সব ধরনের ম্যাচে চাপটা থাকবে। যে যতভাবে সামাল দিতে পারে, সে তত রিল্যাক্স থাকবে। তাই আমার চেষ্টা থাকবে যতটা স্থির থেকে নিজের সেরাটা দিতে পারি।

ঢাকার এখন যে অবস্থা…প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ আগামীকাল বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচটাও বেশ বড়?
তানজিদ হাসান তামিম: যদি বড় ম্যাচ চিন্তা করি, তাহলে অনেক চাপ থাকবে। তবে যদি ম্যাচ ধরে ধরে চিন্তা করি, তাহলে কালকের দিনটাও আগের মতোই একটা ম্যাচ। চেষ্টা করবো আগের ম্যাচে প্রথম জয়ের যে মোমেন্টাম, বড় জয় পেয়েছি, সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে ভালো কিছুই আশা করা যায়।

ঢাকার প্রথম ছয় ম্যাচে জয় ছিল না। কোথায় ঘাটতি ছিল?
তানজিদ হাসান তামিম: এর আগে আমরা যেদিন ভালো ব্যাটিং করছি সেদিন ভালো বোলিং করতে পারিনি। আবার উল্টোটাও হয়েছে। আমরা পরিকল্পনাটা কাজে লাগাতে পারছিলাম না। সবশেষ ম্যাচ দেখবেন আমরা ব্যাটিং, বোলিং দুটোই অনেক ভালো করেছি। পরিকল্পনা খুব ভালো বাস্তবায়ন করেছি। আমরা যদি একই পরিকল্পনা মাঠে ইউটিলাইজ করতে পারি তাহলে ভালো কিছুই সম্ভব।

বিপিএলটা কিভাবে শেষ করতে চান?
তানজিদ হাসান তামিম: যেভাবে রান করার প্রয়োজন ছিল আমি করতে পারিনি। কয়েক ম্যাচে ভালো শুরু করে ইনিংস টেনে নিতে পারিনি। তাই এবার যে ইনিংস ভালো শুরু করব, নিজেকে সময় দিয়ে কীভাবে ইনিংস বড় করব সেটাই চেষ্টা থাকবে।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ