হাউসে কাউসার হলো একটি পবিত্র পানির কূপ, যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে। যে ব্যক্তি এটি থেকে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য কিয়ামতের দিনে বিশেষ উপহার হিসেবে উপস্থাপিত হবে। সুরা কাউসারে আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।’ (সুরা কাউসার, আয়াত: ১)

তাফসির অনুসারে, ‘কাউসার’ শব্দটি বহু অর্থ বহন করে, যার মধ্যে হাউসে কাউসার, জান্নাতের একটি নদী এবং রাসুলুল্লাহ (সা.

)-এর উম্মতের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত অন্তর্ভুক্ত।

যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে।হাদিসে হাউসে কাউসার

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০)

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু লোক আমার হাউসের কাছে আসবে, আমি তাদের চিনব এবং তারাও আমাকে চিনবে। কিন্তু তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি বলব, ‘তারা আমার উম্মত।’ ফেরেশতারা বলবে, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন আমি বলব, ‘যারা আমার পরে দ্বীন বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,০৫১)

সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাদের চিনতে পারবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পা অজুর কারণে দীপ্তিমান হবে, এমন চিহ্ন অন্য কোনো উম্মতের হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯)

হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে আমি একটি নহরের তীরে পৌঁছালাম, যার পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম। আমি জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটি কী?’ তিনি বললেন, ‘এটি হাউসে কাউসার, যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬; তিরমিজি, হাদিস: ২,৫৪৪)

হাউসে কাউসারের বৈশিষ্ট্য

অবস্থান: হাউসে কাউসার কিয়ামতের দিন মিজানের আগে বা পরে মুমিনদের জন্য উপস্থাপিত হবে। কিছু হাদিসে এটি জান্নাতের প্রবেশপথে অবস্থিত বলে উল্লেখ রয়েছে।

প্রশস্ততা: এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অত্যন্ত বিশাল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এর দৈর্ঘ্য আদন (ইয়েমেনের এডেন বন্দর) থেকে আইলা (আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর) পর্যন্ত দূরত্বের চেয়েও বেশি এবং প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৮১)।

পানির গুণাগুণ: পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে শুভ্র এবং মধু ও দুধের চেয়ে মিষ্টি। এর সুগন্ধ মিশকের (কস্তুরির) চেয়ে অধিক মনোমুগ্ধকর। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

পাত্র: হাউসের পানি পানের জন্য পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো অসংখ্য ও উজ্জ্বল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)।

পাড়ের সৌন্দর্য: এর পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত, যা এর শোভা বৃদ্ধি করে (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬)।

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।আরও পড়ুনসাবধানী মানুষের নয়টি গুণ০৭ মে ২০২৫কারা পান করতে পারবেন

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে অজুর কারণে চিনতে পারবেন, কারণ তাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা দীপ্তিমান হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)

তবে কিছু লোক হাউসের কাছে এলেও ফেরেশতারা তাদের তাড়িয়ে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য সুপারিশ করলেও ফেরেশতারা বলবেন, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন রাসুল (সা.) বলবেন, ‘যারা আমার পরে দ্বীনকে বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র অসিয়ত নিয়ে সংশয়০২ জুলাই ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক য় মত র দ ন সহ হ ব খ র প ন করব আর কখন র ত হব র জন য প ন কর আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালে তাঁর ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের উল্টো যাত্রা ঘটল: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ (তিন শূন্য) তত্ত্ব সমর্থন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে তার উল্টো যাত্রা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তাঁর খেয়াল করা দরকার। আমরা চাই, থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শিরোনামে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও প্রথম আলো।

বৈঠকে অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের “থ্রি জিরো” (তিন শূন্য) তত্ত্ব সারা পৃথিবীতে পরিচিত। আমি এটা খুবই সমর্থন করি যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য দারিদ্র্য। কিন্তু পুরো যাত্রাটা তো হচ্ছে উল্টো দিকে। অধ্যাপক ইউনূসের একটা সুযোগ ছিল যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থ্রি জিরো তত্ত্বের বাস্তবায়নের একটা মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করানোর কিছু চেষ্টা করা। কিন্তু আমরা দেখছি, কীভাবে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়ে, সেটার একটা চেষ্টা চলছে। গত ১০ মাসে লক্ষাধিক বেকারত্ব বেড়েছে শুধু কারখানা বন্ধ করার কারণে আর দারিদ্র্য বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তো তাঁর একটু খেয়াল করা দরকার। এতে তো আমরা খুশি না। আমরা তো চাই যে থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচকদের একাংশ। সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ