চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুতে ক্লিনিক সিলগালা, গ্রেপ্তার ৩
Published: 16th, June 2025 GMT
নীলফামারীর ডোমারে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় বেবি আক্তার (২৮) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে সুস্থ রয়েছে তার নবজাতক পুত্র। অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ডোমারের ঐ ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে।
জনতা ক্লিনিক
মারা যাওয়া প্রসূতি বেবি আক্তার ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বড়গাছা দরগা পাড়া এলাকার মো.
স্থানীয়রা জানান, গত ১৪ জুন বিকেলে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের লোকজন বেবি আক্তারকে ডোমার পৌরসভার জনতা ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক রিজওয়ানা ইয়াসমিন রোগীকে কিছু পরীক্ষা দিতে বলেন। রিপোর্ট দেখার পর তিনি জানান, রোগীর পেটে পানি নেই — তাই জরুরি সিজার অপারেশন প্রয়োজন। পরে ওই দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে প্রসূতির অপারেশন হয় এবং জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান।
অপারেশনের সময় উপস্থিত ছিলেন ডা. রিজওয়ানা ইয়াসমিন, ডা. নিহার রঞ্জন ও ওটি বয় বিপুল সরকার।
প্রসূতির স্বজনদের অভিযোগ, সিজারের পর শুরু হয় অবহেলা ও গাফিলতির চিত্র। অপারেশনের পরপরই রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলেও সময়মতো নেওয়া হয়নি কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা। একপর্যায়ে বেবি আক্তারের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠলে, তাকে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অনেক দেরি হয়ে যায়। রবিবার ভোরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাতেই ক্লিনিকে চিকিৎসায় গাফিলতির খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা।
তারা ক্লিনিক ঘেরাও করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে ডা. নাজমুস সাকিব, সেবিকা মোছা. সুমনা আক্তার ও সাবিয়া আক্তার নামে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
অন্যদিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে এ খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শায়লা সাঈদ তন্বী এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী। তারা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে জনতা ক্লিনিক সিলগালা করে দেন।
ডা. রায়হান বারী বলেন, ‘‘আমরা এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
ইউএনও শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে অবহেলার সত্যতা মেলায় ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
সহকারী পুলিশ সুপার নিয়াছ মোর্শেদ জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মৃত্যুর মামলা হয়েছে। ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ঢাকা/সিথুন/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত র উপজ ল অবহ ল
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান