বাফুফে ভবনের সংবাদ সম্মেলন রুমে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। চেয়ার না পেয়ে অনেক সংবাদকর্মী ডায়াসের সামনে বসে পড়েন। দৃশ্যটি বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য নতুনই বটে। এক হামজা দেওয়ান চৌধুরীতে বদলে গেছে দেশের ফুটবলের চিত্র। গতকাল বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনের বড় অংশ জুড়ে ছিলেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
হামজার মতো বিশ্বমানের ফুটবলারের বিপক্ষে খেলতে পারাটাকে বড় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখছেন ভুটান কোচ। অন্যদিকে হামজাকে ঘিরেই ভুটান বধের ছক কষছেন বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে ভুটানের কাছে পরাজয়ের তিক্ততা ভুলে গিয়ে আজকের রাতটি রাঙাতে চান জামাল ভূঁইয়া-তপু বর্মনরা।
১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচের আগে ভুটানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচটিকে প্রস্তুতি হিসেবে নিচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দু’দলের মধ্যকার লড়াই শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়, দেখা যাবে টি স্পোর্টসে।
বাংলাদেশ:ভুটান
সন্ধ্যা ৭টা
আর এ ম্যাচ দিয়ে ঘরের মাঠে যেমন অভিষেক হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজার, তেমনি করে চার বছর পর জাতীয় স্টেডিয়ামে হতে যাচ্ছে ফুটবলের কোনো ম্যাচ। শুধু হামজা নয়, ভুটান ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হতে যাচ্ছে ইতালিয়ান প্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামের। তাই এখন দেশের ফুটবলে প্রবাসীদের নিয়ে নতুন স্বাদের অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১৮৩) চেয়ে এক ধাপ ওপরে ভুটান (১৮২)। গত সেপ্টেম্বরে দুটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের প্রথমটিতে ১-০ গোলে জিতেছিল লাল-সবুজের দলটি। দ্বিতীয়তে একই ব্যবধানে হারে তারা। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনেও সেই দুটি ম্যাচ এসেছে।
তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কাছে সেই সময় আর এই সময় এক নয়, ‘১০ তারিখে সিঙ্গাপুরের মতো কালকের (আজ) ম্যাচও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভুটানের বিপক্ষে জিততে চাই। সর্বশেষ আমরা যখন ভুটানের বিপক্ষে খেলছি, তখনকার আর এখনকার অবস্থাটা ভিন্ন। ওই ম্যাচের আগে আমাদের অধিকাংশ খেলোয়াড় ৩-৪ মাস খেলার মধ্যে ছিল না। এখন প্রিমিয়ার লিগ মাত্র শেষ হয়েছে, তো সবাই খেলার মধ্যে আছে, মানে চিত্রটা ভিন্ন।’
গত ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হামজার। এবার ঘরের মাঠে তাঁর প্রথম ম্যাচ বলে উত্তেজনা তুঙ্গে। হামজার সঙ্গে একাদশে দেখা যাবে ফাহমিদুলকেও। এ দুই প্রবাসীর সংযোজনে বাংলাদেশ এখন অনেক শক্তিশালী। তাই তো প্রীতি ম্যাচ হলেও বাংলাদেশ-ভুটান লড়াই দেখতে দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে।
জাতীয় স্টেডিয়ামের ২২ হাজার ধারণক্ষমতার গ্যালারির ১৫ হাজারের মতো টিকিট গতকাল পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলে যে এখন হামজাকে ঘিরে উন্মাদনা, তা দু’দিনেই টের পেয়েছেন ভুটান কোচ আতুশি নাকামুরা। জাপানি এই কোচ তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেছেন, ‘সবাই হামজাকে নিয়ে কথা বলছে। হামজা দুর্দান্ত একজন ফুটবলার। তার মতো ফুটবলারের বিপক্ষে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করার বড় সুযোগ আমাদের জন্য।’
আজা প্রতিপক্ষ ভুটান তবে বাংলাদেশ দলের ভাবনায় ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ। বাংলাদেশ কোচের কথাতে বারবার উঠে এসেছে সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে আলোচনা, ‘সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বড় ম্যাচের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামীকাল (বুধবার) ভুটানের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জিং একটা ম্যাচ। বলতে পারেন সিঙ্গাপুর ম্যাচের জন্য এই ম্যাচটি পারফেক্ট প্রস্তুতি। ভুটান ম্যাচ নিয়ে খুবই রোমাঞ্চিত। আমি জানি এই ম্যাচে আমাদের ওপর অনেক প্রত্যাশা। দলের সবাই জানে এ ম্যাচ সম্পর্কে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল দ শ ফ টবল দ শ র ফ টবল ফ টবল র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।