গুগলে যেসব বিষয় কখনো সার্চ করবেন না
Published: 16th, June 2025 GMT
যেসবের বিজ্ঞাপন দেখতে চান না
ধরুন, কোনো আত্মীয়ের শিশুর জন্য ডায়াপার প্রয়োজন। আশপাশে কোনো দোকান খোলা নেই, তাই অনলাইনে সার্চ করলেন। এর পর থেকে গুগল হোক, ফেসবুক হোক; যেখানেই সার্চ করছেন বিজ্ঞাপন হিসেবে সামনে আসছে সেই ডায়াপারের বিজ্ঞাপন। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। গুগল তার ব্যবহারকারীর সার্চের ওপর কড়া নজরদারি করে। যে বিষয়ে সার্চ করছেন, সেই পণ্যই চোখের সামনে আসতে থাকবে প্রতিদিন। ফলে কোনো জিনিস বারবার দেখতে না চাইলে সেসব গুগলে সার্চ না করাই শ্রেয়।
বেআইনি কিছুশখের বশে কিংবা মজা করে হলেও গুগলে বেআইনি কিছু সার্চ করবেন না। ফোনকলের মতো ইন্টারনেটও এখন অপরাধী ধরার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এমনও হতে পারে, আপনি কোনো নির্দিষ্ট অপরাধের ‘অ’–ও জানেন না। কিন্তু আপনার সার্চ হিস্ট্রি ধরে খুঁজে সন্দেহভাজনের তালিকায় আপনাকেও রাখতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি অপরাধীর সঙ্গে কিছু মিল দেখে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হতে পারে আপনাকে। এ ছাড়া বিশ্বের উন্নত কিছু দেশে বেআইনি কিছু সার্চ করলে ওই ব্যক্তিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখে। ফলে বেআইনি কিছু সার্চ না করাই উত্তম।
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটি ব্যবহারের বিপদগুলোও জেনে রাখুন১৮ মে ২০২৫নিজের তথ্যঅনেকেই গুগলের কাছে নিজের তথ্য জানতে চান। বিশেষ করে এআই আসার পর নিজের ব্যাপারে জানতে চাওয়ার ইচ্ছা বেড়েছে অনেকেরই। কিন্তু তথ্য জানতে গিয়ে উল্টা তথ্য দিয়ে বসবেন না। যেমন ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য যতটা সম্ভব নিজের কাছে রাখবেন।
ত্বকের রোগহাতে হয়তো কোনো কারণে ছোট ছোট র্যাশ উঠেছে, মনে হলো একবার দেখি তো গুগল করে এর কারণ কী। ব্যাস, এমন কিছু ছবি আপনার চোখের সামনে আসবে, যা রাতের ঘুম হারাম করে দিতে যথেষ্ট। ত্বকের রোগ হলে সর্বপ্রথম চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। গুগলে রোগ বা রোগের উপসর্গ সার্চ করে রাতের ঘুম হারাম করবেন না।
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটি ছাড়া আরও যেসব এআই টুল আপনার জীবন সহজ করবে০১ জুন ২০২৫যেকোনো রোগের ব্যাপারেছোটখাটো রোগের উপশম গুগলে মিলবে ঠিকই, তবে যেকোনো রোগবালাইয়ের সঠিক সমাধানের জন্য চিকিৎসকের কাছেই যান। কারণ, গুগল বা সার্চ ইঞ্জিন আপনার রোগ তো শনাক্ত করতে পারবেই না, উল্টা রোগের ভুলভাল ওষুধ দিয়ে ব্যাপারটা জটিলতর করে তুলতে পারে। অসুস্থ হলে তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, গুগলের নয়।
মনে রাখবেন, ইন্টারনেটে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। আপনি যতই নিরাপত্তা মেনে ইন্টারনেট ব্যবহার করুন না কেন, আপনার প্রতিটি সার্চ, প্রতিটি ওয়েবসাইট ভিজিটের ইতিহাস জমা থাকে আর্কাইভে। সার্চ হিস্ট্রি ডিলিট করে কিংবা ইনকগনিটো মোডে গুগল সার্চ করলেও আদতে তা কোথাও না কোথাও লিপিবদ্ধ থাকেই। যে কারণে ইন্টারনেটে কোনো কিছু বলার আগে, সার্চ করার আগে সতর্কতার সঙ্গে করুন। আপনার একটি ভুল সার্চের মাশুল দিতে হতে পারে আপনার প্রিয়জনদেরও।
তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনইংরেজি শিখতে চ্যাটজিপিটি কাজে লাগাবেন কীভাবে১৫ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র চ কর অপর ধ আপন র ব আইন
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান