হবিগঞ্জে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে চালক গ্রেপ্তার
Published: 16th, June 2025 GMT
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার সকালে এমন অভিযোগে নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। এ মামলায় বাসটির চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম সাব্বির মিয়া (২৫)। তিনি বাসটির চালক ও নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতাবাদ বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা। ধর্ষণে আরেক অভিযুক্ত ও চালকের সহকারী লিটন মিয়া (২৬) পলাতক। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা।
এর আগে গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে নবীগঞ্জ-শেরপুর আঞ্চলিক সড়কে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ভোক্তভোগী ওই ছাত্রী হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন ওই ছাত্রী। গতকাল দুপুরে রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে বাসে করে গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জে তাঁর নামার কথা ছিল। তবে তিনি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন; জেগে দেখেন শায়েস্তাগঞ্জ অতিক্রম করেছেন। পরে রাতে তিনি মহাসড়কটির শেরপুর এলাকায় নেমে পড়েন।
সূত্রগুলো আরও জানায়, একপর্যায়ে ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামের শেরপুর-নবীগঞ্জ উপজেলা সদরে চলাচলকারী একটি লোকাল বাস পেয়ে এতে উঠে পড়েন। বাসটি রাত ১০টার দিকে আউশকান্দি এলাকায় পৌঁছালে অন্য যাত্রীরা নেমে যান। ওই ছাত্রীকে তখন একা পেয়ে চলন্ত বাসেই ধর্ষণ করেন চালক সাব্বির ও তাঁর সহকারী লিটন। একপর্যায়ে বাসের ভেতর থেকে ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হয়। সড়কের এনাতাবাদ এলাকায় এলাকাবাসী বাসটিকে থামান। এ সময় তাঁদের কাছে ধর্ষণের বিষয়টি জানান ওই ছাত্রী। এ পর্যায়ে লিটন পালিয়ে যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে আটক হন সাব্বির। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং সাব্বিরকে গতকাল রাতেই নবীগঞ্জ থানায় সোপর্দ করেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় আজ সকালে ওই ছাত্রী বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা করেছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য তাঁকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে; পাশাপাশি তাঁর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।