জুন নাগাদ আদানির পাওনা দাঁড়াবে ১৩০ কোটি ডলার
Published: 30th, January 2025 GMT
ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ দায় দাঁড়াবে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার। এমনটিই প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বর্তমানে আদানি গ্রুপের বকেয়া পাওনা প্রায় ৮০ কোটি ডলার। এ বকেয়া পরিশোধে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে গ্রুপটি। সরকারও ধাপে ধাপে জুন নাগাদ অন্তত ৮২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার পরিশোধ করতে চায়। এ জন্য এ খাতের ভর্তুকি নিয়মিত ছাড় ও প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান চেয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, আদানি গ্রুপের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ ক্রয় বিষয়ে বিপিডিবি ও আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেডের (এপিজেএল) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মাসের বিদ্যুৎ বিল কোম্পানির ইনভয়েস দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতার কারণে নিয়মিত বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে অপরিশোধিত বিলের পাশাপাশি সারচার্জও বাড়ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে কিছু বিল পরিশোধ করা হলেও গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকৃত বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এর পরের তিন মাসে আরও প্রায় ২২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদ্যুৎ এসেছে। এ ছাড়া আগামী মাসগুলোতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ আসবে তার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ রপ্তানি বাবদ আদানি পাওয়ারের পাওনা দাঁড়াবে ১২৯ কোটি ১২ লাখ ডলার। তাই জুন নাগাদ অন্তত ৮২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার পরিশোধ করতে চায় সরকার। আগামীতে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ১০ কোটি ডলার এবং ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি পরিশোধের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। তারপরও জুন শেষে বকেয়া থাকবে ৪৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনা সংক্রান্ত অসম চুক্তিটি পর্যালোচনা করে তা নবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু যতদিন নতুন চুক্তি না হচ্ছে ততদিনের বিল আগের নিয়মেই পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে বিলম্ব ফির পাশাপাশি সারচার্জও বাড়তে থাকবে। তাই এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমকালকে জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের সংস্থান নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ১৯ জানুয়ারি আদানি পাওয়ার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে সতর্ক করে বলেছে, তাদের ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বকেয়া বিল জুনের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে সারচার্জ পরিশোধে বাধ্য করা হবে। তবে জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে চলতি বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য বিপিডিবি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মাসিক বিল পরিশোধ করলে এবং ৩০ জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ বকেয়া অর্থ পরিশোধ করলে সারচার্জ মওকুফ করার প্রস্তাবও দিয়েছে এপিজেএল। বিপিডিবি ও এপিজেএল উভয়ের স্বার্থে প্রস্তাবটি বিবেচনা এবং উল্লিখিত পদ্ধতিতে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো চিঠিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বকেয়া বিল নিষ্পত্তির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চায় আদানি পাওয়ার। বিপিডিবি ২০১৭ সালের নভেম্বরে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করে, যার মাধ্যমে দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করার পরিকল্পনা ছিল।
আদানি পাওয়ার আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বকেয়া অর্থ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। বিপিডিবি ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। অর্থ পরিশোধের বিষয়ে চিঠি আদান-প্রদানের মধ্যেই গত বছরের নভেম্বর থেকে কোম্পানিটি বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক সরবরাহ করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর শ ধ করত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’