আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খেতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু খাতের ব্যবসা আমদানিনির্ভর হবে, স্থানীয় শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিত্যপণ্য, রাসায়নিক থেকে শুরু করে পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য, সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের ব্যবসা রয়েছে। আমরা দেখেছি, প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক-কর কাঠামোয় যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে আমাদের প্রায় সব ধরনের ব্যবসায় তার কমবেশি প্রভাব পড়বে। রাসায়নিক থেকে কৃত্রিম তন্তুর সুতা তৈরির একটি কারখানা রয়েছে আমাদের। এত দিন এ ধরনের সুতার আমদানি পর্যায়ে কোনো শুল্ক ছিল না। কিন্তু আমরা যাঁরা এ ধরনের সুতা তৈরির জন্য দেশে কারখানা করেছি, তাঁদের সুতা তৈরির কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক দিতে হতো। অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর আগামী অর্থবছরের রাসায়নিক থেকে কৃত্রিম তন্তুর সুতা তৈরির কাঁচামাল আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিপরীতে একই ধরনের তৈরি সুতার আমদানি পর্যায়ে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। তাতে স্থানীয় শিল্প হিসেবে আমরা ১ শতাংশের সুরক্ষা পেয়েছি। কিন্তু এই সুরক্ষা দিয়ে আমরা আমদানি করা সুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না। কারণ, আমাদের ঋণের সুদহার অনেক বেশি। আবার কাঁচামালসহ মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য যে ঋণসুবিধা পাওয়া যায়, সেটির মেয়াদও কম। এই অবস্থায় উচ্চ সুদসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে ১ শতাংশ সুরক্ষায় আমদানি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাজার ধরে রাখা কঠিন হবে। 

যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু খাতের ব্যবসা আমদানিনির্ভর হবে, স্থানীয় শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দ্বিতীয়ত, আমরা যে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য তৈরি করি, এত দিন সেই পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। একই ধরনের পণ্যের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। তাতে স্থানীয় শিল্প হিসেবে আমরা আমদানি পণ্যের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি শুল্ক সুরক্ষা পেতাম। প্রস্তাবিত বাজেটে এই পণ্য তৈরির কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১ শতাংশ এবং আমদানি করা তৈরি (ফিনিশড) পণ্যের শুল্ক কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তাতে স্থানীয় শিল্প হিসেবে আমদানি পণ্যের তুলনায় আমাদের যে ৫ শতাংশ শুল্ক সুরক্ষা ছিল, সেটি কমে এখন ২ শতাংশে নেমেছে। তাতে এই ব্যবসায়ও আমরা আমদানি পণ্যের চেয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ব। মাত্র ২ শতাংশ শিল্প সুরক্ষার জন্য কেউ এই খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন না। একইভাবে সিমেন্টের ক্ষেত্রেও যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এই উৎপাদন খরচের পুরোটা যদি ভোক্তার ওপর চাপানো হয়, তাতে বিক্রি কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। ফলে সিমেন্ট ব্যবসায়ও আমাদের সামনে লোকসানের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। 

ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ অগ্রিম করের প্রস্তাব করা হয়েছে ঘোষিত বাজেটে। তাতে ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। দেশের একটি শ্রেণি যারা টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়াতে পারে না, তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও কোনো রকমে বাড়তি দামে পণ্য কিনে জীবন যাপন করে যাচ্ছে। একদিকে আমরা টিসিবির ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে গরিবদের সহায়তা করছি। অন্যদিকে যাঁরা নিজেরা কষ্টের মধ্যেও বাজার থেকে নিত্যপণ্য কিনছেন, তাঁদের জন্য দাম বাড়ানোর আয়োজন করা হচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার করপোরেট করের ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান নির্বিশেষে লেনদেন কর বাড়ানো হয়েছে। সেখানেও বাড়বে করের চাপ। সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য স্বস্তিকর কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার, গ্রুপ পরিচালক, টি কে গ্রুপ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবস আমদ ন র র আমদ ন স রক ষ পর য য় র জন য আম দ র ধরন র যপণ য

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন