রোববার সকাল ১০টা ৩২ মিনিট। ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে এমন সময়ে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক কাজে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর কক্ষে ঝুলছে তালা। দপ্তরের অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর বজলুর রুশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যেখানে নিজে উপস্থিত আছেন, দেখতে পাচ্ছেন। আমার বক্তব্য দেওয়ার কী আছে?’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে গিয়ে পাওয়া যায় একই চিত্র। নির্বাহী প্রকৌশলী বসেননি তাঁর চেয়ারে। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এলেও তারা ‘স্যারদের’ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ। নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে কল করলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কুড়িগ্রামে ঈদুল আজহার ১০ দিন ছুটি শেষে এভাবে সময়মতো উপস্থিত হননি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
কোনো কোনো দপ্তরে দুই-চারজন কর্মচারী উপস্থিত হলেও অনেক সরকারি দপ্তর ছিল ফাঁকা। পাওয়া যায়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। রোববার জেলা শহরের সরকারি দপ্তর ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আহসান হাবীব নীলু বলেন, এই প্রথম দীর্ঘ ছুটি পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার পরও প্রথম দিনে তাদের অনুপস্থিতি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে অযোগ্যতার শামিল।
১০টা ৩০ মিনিটে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। প্রকৌশল কক্ষে ততক্ষণে উপস্থিত হননি একজনও। দুই-একজন কর্মচারীর দেখা মিললেও তারা খোশগল্পে মেতে ছিলেন। এর পর গন্তব্য মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা ৩৮ মিনিট। সেখানেও কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়। 
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে প্রথমে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে ১০টা ৪২ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষে ঝুলছে তালা। যখন বেলা ১১টা ২০ মিনিট, গণপূর্ত অধিদপ্তরে ঢুকতেই পাওয়া গেল সুনসান নীরবতা। এসও, এসডির কক্ষ ছিল তালাবদ্ধ। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে কথা বললে নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘এসওরা সম্ভবত সাইটে থাকতে পারেন। খোঁজ নিলে সঠিক তথ্য জানা যাবে।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে গেলে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ হামিদুল হককে পাওয়া যায়। কিন্তু অন্য কর্মচারীরা ছিলেন অনুপস্থিত। এ বিষয়ে হামিদুল হক বলেন, ‘আমি হিসাবরক্ষক ইউসুফকে একটু বাইরে পাঠিয়েছি। অন্যরা আসছেন।’ উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে ১০টা ৪৪ মিনিটে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। দপ্তরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে কয়েক কর্মচারী তড়িঘড়ি করে নিজের আসনে বসেন। কেউ বলেন, ‘স্যার ছুটিতে আছেন’। আবার কেউ বলেন, ‘স্যার সরকারি শিশু পরিবারে গেছেন, একটু পরে আসবেন।’ পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, ‘জেলা অফিসে আছি’।
কুড়িগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক খ ম আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, দেশ পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে। কিন্তু বিগত সময়ে যারা আয়েশ-আমেজ করে লুটপাট করেছেন, তারা এখনও বহাল। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে নতুন রাষ্ট্রের দাবিদার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সততা ও নিষ্ঠার জন্যই জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদ সদস্য এস এম নুরে এরশাদ সিদ্দিকী বলেন, এসব অনিয়ম নতুন যুগে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। আমলাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে গণঅধিকার পরিষদ সব সময় সোচ্চার।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আমরা তাড়িয়েছি। আমলাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আমরা ফুঁসে উঠেছি, সফলতা পেয়েছি। তারপরও এসব অনিয়ম আমরা মানতে পারি না। যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে এনসিপি রাজপথে দাঁড়াবে। নতুন বাংলাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম পেলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র উপস থ ত দ র অন সরক র প রথম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় হামলা, ৭৫ শতাংশ ত্রাণ প্রবেশে বাধা

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ হামলায় অন্তত ৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া প্রতিশ্রুত ত্রাণের মাত্র এক-চতুর্থাংশ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। অর্থাৎ মোট ত্রাণসামগ্রীর প্রায় ৭৫ শতাংশই এখনো আটকে রেখেছে দেশটি। 

গাজা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। 

আরো পড়ুন:

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ইসরায়েলের পার্লামেন্টে পশ্চিম তীর দখলের বিল পাস

প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (১ নভেম্বর) টানা পঞ্চমদিনের মতো গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও খান ইউনিসের আশপাশের এলাকায় হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

এদিকে ত্রাণ প্রবেশেও বাধা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজা সরকার জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের মাত্র ২৪ শতাংশ।

শনিবার এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে ২৪ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সংকট ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আর এর দায় সম্পূর্ণ ইসরায়েলের।’

এই অবস্থায় গাজার পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে- যাতে তারা ‘কোনও শর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়াই’ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ত্রাণ রুট পরিবর্তনের কারণে কার্যক্রম মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, “এখন কনভয়গুলোকে মিসরের সীমান্তঘেঁষা ফিলাডেলফি করিডর হয়ে উপকূলীয় সংকীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে যেতে হচ্ছে, যা যানজট ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ত্রাণ কার্যক্রমকে অত্যন্ত ধীর করে দিয়েছে।” তিনি আরও জানান, ত্রাণ কার্যক্রম কার্যকরভাবে চালু রাখতে অতিরিক্ত সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট খোলা অত্যন্ত জরুরি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন। অনেক আহত ব্যক্তি পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা না পাওয়ায় পরিস্থিতি আরো অবনতি হচ্ছে। হাসপাতালগুলো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সার্জিক্যাল সরঞ্জামের ঘাটতিতে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় হতাহতের সংখ্যা ও ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় মানবিক সংকট ভয়াবহভাবে বাড়ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ