সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
Published: 15th, June 2025 GMT
ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ পানি সংকট দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি ওঠে না গভীর নলকূপে। পানির চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্যের উদ্যোগে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। কিন্তু ঠিকাদারের অনিয়ম এবং পৌরসভার গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতায় আজও সুফল বয়ে আনেনি প্রকল্পটি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গত ৩০ বছরের হিসাব অনুযায়ী, নলছিটি পৌর এলাকার ১৭টি গ্রামে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৭৩টি ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৫০০ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু বিরূপ প্রভাবে
উপজেলায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পৌর এলাকার বেশির ভাগ নলকূপ অকেজো। এ অবস্থায় ২০১৬ সালের পর থেকে পৌর এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ আছে। সচ্ছল পরিবার নিজ খরচে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে চাহিদা
পূরণ করলেও পানির জন্য হাহাকার করছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
পৌর এলাকায় বসবাসরত ৭০ হাজারের বেশি মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে শহরের নান্দিকাঠিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কাজটি পায় ঢাকার মেঘনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী ও স্থানীয় এমপি আমির হোসেন আমুর সহায়তায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে প্রকল্পের কাজ করেছেন। বোরিংয়ের কাজে অনিয়ম ও খরচ বাঁচাতে পাইপ সুগন্ধা নদীর গভীরে স্থাপন না করে নদীর চরে স্থাপন করেছেন। এসব অভিযোগে তৎকালীন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল হক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরও ধীরগতিতে
প্রকল্পের কাজ করে গোপনে বিল তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, ওয়াটার প্লান্ট নির্মাণের আগে ২০১৫ সালে পৌর ভবনের পাশে প্রোডাকশন টিউবওয়েলের মাধ্যমে একটি সাপ্লাই ইউনিট নির্মাণ করা হয়। এ দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকদের মধ্যে দুবার পানি সরবরাহের কথা। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে একবার। কোনো দিন তাও মেলে না। এ ছাড়া ময়লা কাদাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ দুটি প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটেনি; বরং সময়ের সঙ্গে এর মাত্রা আরও বেড়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে বিল নেওয়া হলেও পৌরসভার মোট জনসংখ্যার ৫ ভাগ মানুষের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না প্রকল্প দুটি।
সরেজমিন পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও ১৭টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলাজুড়ে পানির জন্য হাহাকার। সরকারি-বেসরকারিভাবে বসানো প্রায় তিন হাজার গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যেগুলো সচল আছে, তাও টিপটিপ করে পড়ছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজেও অনিয়ম হয়েছে। সুগন্ধা নদীর পানি নিয়ে শোধনাগারে পরিষ্কার করে গ্রাহকদের মধ্যে দুবার সরবরাহ করার কথা থাকলেও এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রতিদিন একবার করে পানি সরবরাহ করা হলেও কোনো কোনো দিন তাও মেলে না। আবার যেটুকু পানি পাওয়া যায় তাও কাদা-ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। গ্রাহক কয়েক দফা পৌর প্রশাসক বরাবর অভিযোগ জানালেও কাজ হয়নি।
সূর্যপাশা এলাকার শারমিন বেগম, অনুরাগ গ্রামের তামান্না আক্তার ও সিকদারপাড়া এলাকার সুমি বেগম বলেন, ২০ বছর আগের টিউবওয়েল। এক কলসি পানি তুলতে আধাঘণ্টা সময় লাগে। বারবার মেরামত করেও কাজ হচ্ছে না। টিউবওয়েলে পানি তুলতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে খালবিলের ময়লা পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
নলছিটি পৌরসভার মালিপুর এলাকার
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য কাজটি সমাপ্ত করে পৌরসভাকে হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু পৌরসভার গাফিলতিতে জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল হক বলেন, গভীর নলকূপে পানি উঠেছে না– এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। নির্বিঘ্নে পানি পেতে হলে সাবমার্সিবল বসাতে হবে। নতুন করে পাইপলাইন সংযুক্ত করে বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড ট্যাঙ্ক যুক্ত করতে হবে। প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কাজ শেষ হওয়ার পরপরই পৌরসভাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা ঠিকমতো দেখভাল না করায় এ হাল হয়েছে।
গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পৌর প্রশাসক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পৌর এলাকার সুপেয় পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর পানি, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংকট কেটে যাবে।
পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মো.
সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্প আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সময় হয়েছে। তাই অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কিছু্ই বলতে পারব না। তবে পৌরসভাবে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমাদের দপ্তরের কোনো তদারকি থাকে না। রক্ষণাবেক্ষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সব দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। দায় তাদেরই নিতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট র টম ন ট প ল ন ট প র এল ক র প রকল প র প রসভ র ক র কর গ র হক সহক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।