‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়।
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে।
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নত ন ক র গ র বন দ দ র দ র জন য প রকল প র বন দ
এছাড়াও পড়ুন:
‘১৩তম সংশোধনী ফিরিয়ে আনতে চায় বিএনপি-জামায়াত’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, “দলগুলোর মতামত ও সংশোধনী জানাতে ৩০ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, কেউ যদি কোনো সুপারিশ বা সংশোধনের কথা বলতে চায়, তা যেন ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে জানায়।”
তিনি বলেন, “বিএনপি–জামায়াত জোট ২০১১ সালে বাতিল হওয়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল চায়। অর্থাৎ, তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংলাপ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের ৩ দফা দাবি
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হলেই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে: প্রধান উপদেষ্টা
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এ সংলাপে অংশ নেন। জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই সনদ’ এর খসড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, “আলোচনায় যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর তা বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়সীমা থাকবে ২ বছর।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপি–জামায়াত জোট ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহালের পক্ষে। তাদের মতে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।”
২০১১ সালে এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকেই তা রাজনৈতিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ হয়ে আছে।
এদিকে, এ বৈঠক চলাকালে হঠাৎ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বেজে ওঠে ফায়ার অ্যালার্ম। এতে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিনিধি দলগুলো কিছু সময়ের জন্য আতঙ্কিত হয়ে ভবনের নিচতলায় নেমে আসেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম হঠাৎ সক্রিয় হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মীরা পরিদর্শন করে নিশ্চিত হন, কোথাও ধোঁয়া বা আগুনের অস্তিত্ব নেই। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির পরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
‘জুলাই সনদ’ হচ্ছে একটি প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দলিল, যার মাধ্যমে নির্বাচন পদ্ধতি, সাংবিধানিক সংস্কার, মানবাধিকার ও প্রতিষ্ঠানগত জবাবদিহিতার নীতিমালা নির্ধারণ করা হবে। এটি সরকারের নয়, বরং জাতিগত ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের এক রূপরেখা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি দলীয় নয়, জাতীয় দলিল। জনগণের মতামত ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এটি চূড়ান্ত করা হবে।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী