যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন মনে করে, বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় নজরদারি, ভিন্নমত দমনের সুযোগ আছে। এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহারেরও সুযোগ রয়ে গেছে।

আজ রোববার এক বিবৃতিতে অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে আর্টিকেল নাইনটিন। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যাদেশ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিন বলেছে, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশটি শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে তা সেন্সরশিপ ও নজরদারির সুযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি দমনমূলক হয়ে উঠতে পারে।

খসড়াটির কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। তাদের মতে, তথ্যের অপব্যবহার রোধের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা আইনটিতে অনুপস্থিত।

আর্টিকেল নাইনটিন মনে করে, রাজনৈতিক মত, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য বা বায়োমেট্রিক তথ্যের মতো সংবেদনশীল তথ্যের বিষয়গুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত না থাকায় অধ্যাদেশটি দুর্বল গোষ্ঠী, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর বৈষম্যমূলক প্রোফাইলিং বা নজরদারি চালানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দৃষ্টিকোণ থেকে যথাযথ সুরক্ষা না থাকলে মানুষ অপব্যবহার বা নজরদারির ভয়ে সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারে।

আর্টিকেল নাইনটিনের আশঙ্কা, নিরপেক্ষ মানদণ্ড ছাড়া তথ্য রক্ষণাবেক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করা হলে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।

মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড গঠনের যে নিয়ম রয়েছে, তাতে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা সুসংহত নয়। এতে বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তাদের ক্ষমতার প্রয়োগ একপক্ষীয় বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুনব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়া চূড়ান্ত০৩ জুন ২০২৫

এ ছাড়া অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায়, তথ্যের অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তিরা প্রকৃত প্রতিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে আর্টিকেল নাইনটিন। সংস্থাটি মনে করে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গুরুতর সমস্যা।

উল্লেখ্য, ৩ জুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়া প্রস্তুত করেছে সরকার। শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক সংগঠনসহ সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঠানো মতামত যাচাই–বাছাই করে খসড়াটি সংযোজন–বিয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ‘সংকটজনক’: আর্টিকেল নাইনটিন২১ মে ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপব যবহ র র র জন ত ক স ব ধ নত নজরদ র সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ

ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু কিছু ব্যাংক খুলেছে। তবে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে বড় সমস্যায় পড়েছেন গাজাবাসী। নগদ অর্থসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দুই বছর ধরে গাজায় নির্বিচার হামলায় ঘরবাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক ব্যাংক ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক খোলা শুরু করে। এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁদের বেশির ভাগকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫২৭। যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণসহ যেকোনো কিছু ঢুকছে ইসরায়েলের নজরদারিতেই।

নগদ অর্থের জন্য মধ্য গাজার নুসেইরাতে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের বাইরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ায়েল আবু ফারেস (৬১)। তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। নগদ অর্থের সঞ্চালন নেই। হতাশার সুরে ছয় সন্তানের এই বাবা বলেন, ব্যাংকে এসে কাগজপত্রের লেনদেন করে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গাজায় খাবার কেনা বা বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়ার মতো প্রায় সব দৈনন্দিন লেনদেন নগদ অর্থে করতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফলে সেখানে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের মতো নগদ অর্থও ঢুকতে পারছে না। যদিও যুদ্ধবিরতির পর এখন কিছু কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে।

গাজাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জাইয়্যাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংক খোলা আছে, শীতাতপ যন্ত্রও চালু আছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক লেনদেন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না। কারণ, কোনো আমানত নেই। তাই নগদ অর্থ তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

আবু জাইয়্যাব বলেন, ব্যাংক যেহেতু নগদ অর্থ দিতে পারছে না, তাই বেতন ক্যাশ করতে মানুষজন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। তাঁদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থের বিনিময়ে বেতন ক্যাশ করতে হচ্ছে।

‘আমরা আর পারছি না’

গাজায় একসময় ব্যাংক লেনদেন এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত জানিয়ে সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি বলেন, ‘এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে আপনাকে দুই বা তিন দিন যেতে হয়। একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এত কিছু করে আপনি ৪০০-৫০০ শেকেলের (১২৩-১৫৩ ডলার) মতো তুলতে পারবেন। বর্তমানে অতি উচ্চমূল্যের বাজারে এই অর্থ দিয়ে কী কেনা যায় বলেন? আমরা আর পারছি না।’

নগদ অর্থের ঘাটতি অধিকাংশ গাজাবাসীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও কিছু মানুষ এই সংকটকে জীবিকার উপায় হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। মানাল আল-সাইদির মতো কেউ কেউ ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংক নোট জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করছেন। এতে তাঁদের রুটি-রুজি জুটছে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কাজ করে আমি দৈনিক ২০-৩০ শেকেল (৬-৯ ডলার) আয় করতে পারি। যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি একটি রুটি, অল্প শিম ও ভাজাপোড়াসহ টুকটাক কিছু কিনতে পারি।’

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মানাল আল-সাইদি বলেন, ‘সবজি বা এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আমি আয় করতে পানি না। আমার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।’

নগদ অর্থসংকটে জর্জরিত গাজার অনেক মানুষকে ডিম বা চিনির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লেনদেনে ভরসা করতে হচ্ছে। এই সংকটে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।

নগদ অর্থ কখন ব্যাংকে আসবে ঠিক নেই

গাজায় বর্তমানে ত্রাণ সরবরাহ নজরদারি করছে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)’ নামের একটি শাখা। কখন বা কীভাবে নগদ অর্থ গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

নগদ অর্থের ঘাটতি গাজাবাসীর সংকটকে নানা দিক থেকে আরও নাজুক করে তুলেছে। তাঁবু, খাবার ও ওষুধ কিনতে অনেকে এরই মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন ও হাতের কাছে যে সম্বল ছিল, তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকে থাকার জন্য বিনিময় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করছেন।

ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরাউতি (৫৩) জানান, এমন কিছু টাকা হাতে আসছে, যা অতিব্যবহারের ফলে চেনার উপায় নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এসব টাকা নিচ্ছেন। নামরাউতির ভাষায়, ‘আমার কাছে নোটের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ আমি নোটকে টাকা হিসেবে বিবেচনা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ