মোহাম্মদপুরে অভিযানের মধ্যেই ঘটছে অপরাধ
Published: 31st, January 2025 GMT
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মধ্যে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় একের পর এক চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ ঘটছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়েছে সুমন শেখের (২৬)। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে আদাবর বালুর মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া কবজি কাটা আনোয়ার গ্রুপের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আহত সুমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তিনি পিরোজপুর সদরের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত শেখের ছেলে।
ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী লিটন শেখ জানান, আদাবর বালুর মাঠ এলাকায় ছিনতাইকারীরা কোপ দিয়ে সুমনের বাঁ হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাঁকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে
নেওয়া হয়।
কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য গ্রেপ্তার
ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে কবজি কাটা আনোয়ারের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে–প্রধান সহযোগী রবিন, সাগর, রায়হান ও মুন্না। তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
কবজি কাটা আনোয়ার তার সহযোগীদের সঙ্গে ঢাকা উদ্যান এলাকায় বৈঠক করে। এ তথ্যের ভিত্তিতে বছিলা আর্মি ক্যাম্প থেকে একটি দল অভিযান চালায়। ছিনতাই, মাদকদ্রব্য সেবন, চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে রবিন। তারা কবজি কাটা আনোয়ারের ছত্রছায়ায় থেকে ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর ও আদাবরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভিডিও তৈরি করে টিকটক ও ফেসবুকে আপলোড করে।
এদিকে আধিপত্য বিস্তার ও টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মিরপুর পল্লবীতে মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু ওরফে ব্লেড বাবু খুন হয়। ওই ঘটনায় এজাহারনামীয় প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো– রাজন ওরফে পিচ্চি রাজন ও তার ভাই রনি। গত বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে স্বপ্ননগর নতুন রোডের একটি চায়ের দোকানের পাশ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে গতকাল মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মিজানুর রহমান জানান, গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে পল্লবীর বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে আধিপত্য এবং চুরি ও ছিনতাইয়ের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সন্ত্রাসী রাজন গ্রুপের সদস্যরা ব্লেড বাবুকে খুন করে। নিহতের স্ত্রী পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেছে।
মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যায় জড়িত সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে ওমান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বাবু হত্যায়ও তার নাম শোনা যাচ্ছে। মুসার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুসা এই হত্যাকাণ্ডের ১ নম্বর আসামি।
কিশোর গ্যাং গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, যেসব গ্যাংয়ের মাধ্যমে যে অপরাধ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র গ র প ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।