ঘন কুয়াশার কারনে যমুনা সেতুর উত্তর লেনের ওপর আজ সোমবার সকালে দুটি যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এর ফলে উত্তরাঞ্চল-ঢাকা অভিমুখে উত্তর লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে পশ্চিমপাড়ের টোল কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকা অভিমুখে উত্তরাঞ্চলের হাজারো যাত্রী। 

জানা যায়, আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় সেতুর বাম লেনে পেছন থেকে ট্রাককে ধাক্কা দিলে লেনটি বন্ধ হয়ে যায়। যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ খবর পেয়ে লেনটি চালুর জন্য চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনার কারণে সেতুর পশ্চিম পাড়ে সায়দাবাদ থেকে কড্ডার মোড় পর্যন্ত ঢাকা- রংপুর- রাজশাহী মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। 

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল জলিল মুঠোফোনে সমকালেকে জানান, ‘আমরা পিকনিক করতে কাজিপুর থেকে নরসিংদী যাচ্ছিলাম। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে আমাদের গাড়ি আটকে রয়েছে। কখন লেনটি চালু হবে বুঝতে পারছি না।’

যমুনা সেতু পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল ৭টার পর না সেতুর উপরে ২০ নম্বর পিলারের কাছে ফোর এক্সেল ভেহিকল পেছন থেকে একটি যানবাহনকে ধাক্কা দিলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপর পেছনে আরও দুই তিনটি যানবাহন কুয়াশার কারণে ধাক্কা লেগে লেনটিতে আটকে যায়। সেতু কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন সরিয়ে ফেললেও দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকলেও থেকে উত্তরাঞ্চল অভিমুখে দক্ষিণ লেনটি চালু রয়েছে।’

যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেলকে বারবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে যমুনা সেতু ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মাহবুর রহমান সকাল সাড়ে ৯টায় জানান, ‘ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সেতুর উপর দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে টোল বন্ধ রাখা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হলে টোল কার্যক্রম শুরু হবে। ঢাকার অভিমুখে যানচলাচল সাময়িক ব্যাহত হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশা করছি, স্বাভাবিক হবে।’

সকাল সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। সেতুর পশ্চিম পাড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘন ক য শ স র জগঞ জ দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ