জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মোশাররফ হোসেন হলে ইন্টারনেট সংযোগের কাজ করার সময় ছাদ থেকে পড়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

নিহত শ্রমিকের নাম প্রীতম (১৮)। তিনি ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মাস্টারনেটের কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মীর মোশাররফ হোসেন হলের এ ব্লকের পশ্চিম পাশে নতুন স্থাপিত আনসার ক্যাম্পে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল। রাত ১১টার দিকে আনসার সদস্য রবিউলকে ফোন করে সংযোগ দিতে এসেছিলেন প্রীতম। রবিউল তাকে নিচতলার কক্ষে রাউটার ও সংযোগের স্থান দেখিয়ে দিয়ে চলে যান। পরে ইন্টারনেটের তার টেনে নিয়ে আসার জন্য এ ব্লকের ছাদে উঠেন প্রীতম

ছাদের সর্বশেষ কোণায় রেলিংয়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় ইট খসে পড়ে। এতে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে তাকে গুরুতর আহত ও অচেতন অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রীতমের সহকর্মী লিংকন বলেন, “আমরা রাত ১০টা থেকে একসঙ্গে কাজ করছিলাম। রাত ১১টার দিকে আনসারের ক্যাম্প থেকে ফোন আসলে প্রীতম ওইদিকে কাজ করতে যায়। পরে দেখি দেড় -দুই ঘণ্টা হয়ে গেলে সে আসছে না এবং ফোন দিলেও ধরছে না।”

তিনি বলেন, “আমি সেখানে গিয়ে আশেপাশে আনসারদের জিজ্ঞেস করি- যে ক্যাম্প কোথায়। তাদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ি আমি ছাদে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করে দেখি সে নিচে পড়ে আছে। প্রথমে আমি ভাবছিলাম হয়তো মারা গেছে। কিন্তু ছাত্র ভাইরা বলল, বেঁচে আছে। পরে ওনারাই অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।”

মীর মশাররফ হলের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাহাত বলেন,  “সন্ধ্যা থেকে ওরা হলে ইন্টারনেটের কাজ করছে। হঠাৎ করে রাত ১টার দিকে মাস্টারনেটের মালিক আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে, আপনাদের হলে কাজ করতে গিয়ে আমার একটা ছেলে মারা গেছে; একটু দেখেন। পরে আমি হলের পেছনে এসে দেখি ও পড়ে আছে। প্রথমে মৃত ভেবে কেউ সামনে যাইনি।”

তিনি বলেন, “আশেপাশে আরো কয়েকজনকে ডেকে তাকে ধরে দেখি পালস আছে। তার মুখ দিয়ে প্রচুর ফেনা বের হচ্ছিল। আমরা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে এনাম মেডিকেলে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।”

৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের শাবাব বলেন, “স্বাভাবিকভাবে ছাদ থেকে পিছলে পড়লে দেয়ালের খুব কাছে থাকার কথা ছিল। কিন্তু অন্তত ১০ ফিট দূরে সে চিৎ হয়ে পড়ে ছিল। কোনভাবে এত দূরে তো পড়ার কথা না। আমরা বিষয়টা নিয়ে সন্দিহান।”

তবে আনসার সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, “আমি রাত ১০টা থেকে প্রকৌশল অফিসে ডিউটি করছিলাম। ১১টার দিকে ইন্টারনেটের লোক আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনাদের এখানে কাজ করতে আসছি। আমি তাকে রাউটার ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে আবার ডিউটিতে চলে যাই। পরে ছাত্র ভাই ও আনসারদের ফোন পেয়ে আবার আসছি।”

এ ব্যাপারে জাবি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমি রাত ১টার দিকে খবর পেয়ে কোয়ার্টার থেকে বের হই। ছাত্ররা তখন তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনই প্রক্টরিয়াল টীম ও নিরাপত্তা কর্মীরা আসেন। প্রাথমিকভাবে, ছাদের রেলিংয়ের খসে যাওয়া ইট দেখে ধারণা করছি, তার টানতে গিয়ে সে হয়তো পা পিছলে পড়ে মারা গেছে।”

সাভারের এনাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, “আমাদের এখানে তাকে রাত দেড়টার দিকে নিয়ে আসে। আমরা জরুরি বিভাগে ইসিজি করে তাকে মৃত বলে নিশ্চিত হই। তিনি এখানে আসার অন্তত ৩০ মিনিট আগে মারা গেছেন।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর আনস র

এছাড়াও পড়ুন:

সাঁথিয়ায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন যাত্রী নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম পূর্বপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পাবনাগামী ‘পাবনা এক্সপ্রেস’ নামের একটি বাস ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাঁথিয়ার বনগ্রাম পূর্বপাড়ায় এসে পৌঁছায়। এ সময় পাবনা থেকে ছেড়ে আসা একটি মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস ও ট্রাকটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ফলে ঘটনাস্থলেই বাসের তিনজন যাত্রী নিহত হন।

নিহতরা হলেন- আবেদ আলী (৩৮), মনসুর আলী (৪০) ও অজ্ঞাত এক পুরুষ। এ ছাড়াও বাসের ১০ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময়ের জন্য মহাসড়কের ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে মাধপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, দুর্ঘটনার কথা শোনা মাত্রই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেই। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। এ ছাড়া উদ্ধার করা মরদেহগুলো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রাকে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে এ দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালককেই বেশি দায়ী মনে হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।   

সম্পর্কিত নিবন্ধ