এক ব্যক্তি যদি বেশি দিন ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে তিনি কর্তৃত্ববাদী হয়ে যান: ফখরুল
Published: 25th, November 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এক ব্যক্তি যদি বেশি দিন ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে তিনি কর্তৃত্ববাদী হয়ে যান। এ কারণে আমরা একমত হয়েছি, দুই টার্মের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে এসেছি। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার কথা বলেছি। এসব বিষয় নিয়ে রাজনীতিতে কোয়ালিটি অব চেঞ্জ নিয়ে আসছে। এসব পরিবর্তনের মধ্যে আসতে গিয়ে কিছু বাধা তো থাকবেই।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির হলরুমে জেলার আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছি। কর্তৃত্ববাদী অবস্থা থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। এর মধ্যে কিছু কাজও হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাংবিধানিক পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তনের জন্য ছয়টি কমিশন তৈরি করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন। এই প্রথম দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাব করা হয়েছে। আপার হাউস, লোয়ার হাউস—এ ব্যবস্থায় আমরা খুব একটা পরিচিত না। তবে আমরা একমত হয়েছি। আমরা মনে করেছি, এই ব্যবস্থাটা একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স তৈরি করবে। লোয়ার হাউস এককভাবে ক্ষমতাশালী হবে না। আবার আপার হাউসে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এনসিপি নামে ছেলেদের একটা দল হয়েছে, কমপ্লিটলি ইয়াং ভয়েজ। আমাদের উচিত এ ধরনের ইয়াং ছেলেদের স্বাগত জানানো। কারণ, আমাদের পরে নিউ জেনারেশন প্রকৃত অর্থে দেশকে কিছু দিতে পারবে।’
আজ নতুন প্রজন্মকে স্বীকার করে নিতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে আছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছে। আমরা অনেকেই একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। তারপর যে পরিবর্তনটা হয়েছে তা ম্যাজিক পরিবর্তন। অনেক বড় পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের মধ্যে আজকে নতুন প্রজন্মকে স্বীকার করে নিতে হবে। নতুন ধারণাকে স্বীকার করতে হবে। নতুন চিন্তাগুলোকে কাছে নিতে হবে। আমরা বয়স্করা বলি, ছেলেরা এসব কী বলছে? এমন কথা বললে আমাদের হবে না। ছেলেরা কী বলছে, তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এটা নিউ জেনারেশন। তাদের ভাষা, তাদের কথা আর আমাদের কথা এক হবে না। এটা বুঝে নিয়ে, তাদের সঙ্গে যদি আমরা এগোতে পারি; তাহলে একটা সমন্বয় ঘটনো যাবে। আজকে এই জায়গাতেই কিছু সমস্যা হচ্ছে।’
একটা মানুষের কাজ করার একটা সময় থাকে, বয়স থাকে—এ কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মেধা, বুদ্ধি, মননশীলতা, কর্মদক্ষতা—সবকিছু একটা বয়সের পরে স্তিমিত হয়ে যায়। অ্যাকটিভ থাকা পর্যন্ত তাঁর কাজ করে যাওয়া উচিত। তারপর অবসরে যেতে হবে। এ কারণে আমি ঠিক করেছি, এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন।’
নিজের সমালোচনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকেই আমার সমালোচনা করেন। আমার সবচেয়ে বড় সমালোচনা হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। সেখানে আমাকে তাঁরা বলতে চেষ্টা করেন আমি নাকি সমঝোতার পক্ষের মানুষ। আর কত দিন যুদ্ধ করব? আর কত দিন মারামারি করতে হবে? আর কত দিন আমরা হিংসা, খুন, জখমের মধ্যে থাকব? আমাদের একটা জায়গায় আসা উচিত। আমাদের সমাজটাকে সত্যিকার অর্থে শান্তির মধ্যে নিতে পারব।’
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র আইনজ ব আম দ র ক ষমত ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় হাফিজুর রহমানের হাইকোর্টে জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জামিন চেয়ে হাফিজুর রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
এই মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে গত সপ্তাহে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন হাফিজুর রহমান।
আদালতে হাফিজুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনিসুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
পরে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট রুল দিয়ে হাফিজুর রহমানকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। ফলে তাঁর কারামুক্তিতে আপাতত বাধা নেই।’
এর আগে আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গত ২৮ আগস্ট সকালে লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ছিল। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে শুরু হয় বেলা ১১টায়।
আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন হাফিজুর রহমান। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের একটি দল আসে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান, মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ১০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। এতে করে তাঁদের হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকে।
হাফিজুর রহমানের আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের যে ধারায় মামলাটি করা হয়েছে, সেই অপরাধের উপাদান এজাহারে নেই। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকও ছিলেন না হাফিজুর রহমান। মামলায় লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। হাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। তাঁর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত এসব যুক্তিতে তাঁর জামিন চাওয়া হয়।