‘আমি প্রবাসী’র বার্ষিক প্রতিবেদন: ২০২৪ সালে বিদেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমেছে ২৭%
Published: 5th, February 2025 GMT
২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা ২৭ শতাংশ কমেছে। গত বছর মোট ১০ লাখ ৯ হাজার ১৪৬ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। আগের বছর গিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৯০ হাজার ৮১১ জন।
ডিজিটাল অভিবাসন প্ল্যাটফর্ম ‘আমি প্রবাসী’র বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৪-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নিম্নগামী ধারার মধ্যেও একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেটি হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিএমইটি নিবন্ধনে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
২০২৪ সালে আগের বছরের মতো বাংলাদেশি কর্মীদের শীর্ষ গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। মোট কর্মীর ৬২ শতাংশ গেছেন সৌদি আরবে। দেশটিতে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য মালয়েশিয়া। সেখানে কর্মীদের যাওয়া উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২৪ সালে ৯৩ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন। ‘আমি প্রবাসী’র বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, মালয়েশিয়ার নতুন শ্রমনীতি বাংলাদেশি কর্মী কমে যাওয়ার মূল কারণ।
অভিবাসন কমে যাওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা কারণও ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আমি প্রবাসী’র বার্ষিক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিদেশগামী কর্মীদের কিছুটা অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। দক্ষ কর্মী তৈরির অন্যতম মাধ্যম, কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সেও ভর্তির সংখ্যা কমেছে। ২০২৪ সালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ১৬৬ জন, যা আগের বছর ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ২৭০ জন।
২০২৪ সালে বিএমইটি নিবন্ধনের মোট সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৭৬, যা ২০২৩ সালের ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৮টি।
আমি প্রবাসীর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট বিএমইটি নিবন্ধনে নারী অভিবাসীদের নিবন্ধনের হার ছিল ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশে।
আমি প্রবাসীর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক ই হক বলেন, নারীদের বিএমইটি নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রমাণ করে বাংলাদেশের নারীরা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার (পেশাজীবন) গড়তে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। এটি বৈশ্বিক শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’