রাজধানীতে ২০১২ সালে বিএনপির কর্মসূচিতে গিয়ে নিখোঁজ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ১৩ নম্বর লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শহিদুল আলম সিরাজ চেয়ারম্যানের সন্ধান দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ছেলে সাংবাদিক আজীম অনন ও তাঁর সহকর্মীরা এ মানববন্ধন করেন।
এ সময় আজীম অনন বলেন, ২০১২ সালের ৬ মার্চ বিএনপির ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ঢাকায় যান বাবা। এর পর আর ফেরেননি। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের গুম, খুনের শিকারদের একজন আমার বাবা। তিনি গুম হওয়ার পর থেকে আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সন্ধান পাইনি। ১২ বছর ধরে আমার মা ও ছোট ভাই বাবার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আয়না ঘর থেকে অনেককে বের হতে দেখছি। কিন্তু প্রায় ৬ মাস পার হয়ে গেলেও বাবার সন্ধান পাইনি। জীবিত হোক, মৃত হোক, আমি বাবার শেষ অবস্থানটুকু জানতে চাই। বাবার শেষ চিহ্নটুকু নিয়ে আমরা সারাজীবন বেঁচে থাকব।
সাংবাদিক ইমরান এমির পরিচালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার মিয়া মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন
বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘গুমের শিকার’ হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারাও।
আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে ছাত্রদল ও শিক্ষকনেতারা মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আসাদুজ্জামান রানা ও আল আমিনের সন্ধান দাবি করেন। একই সঙ্গে তাঁরা ‘গুমের শিকার’ সব নেতা-কর্মী ও নাগরিককে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নির্যাতন, হামলা ও হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন বক্তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ‘আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন। কতজনের বিচার চাইব আমরা?’
খাদিজাতুল কোবরা আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশে আমরা আমাদের ভাইদের সন্ধানে দাঁড়িয়েছি। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে কেউ গুম হবে না, সবাই ন্যায্য বিচার পাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে অনেক বিএনপি নেতা গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হাতে হামলার শিকার হয়েছে। আমাদের অনেক ভাই গুম হয়েছে, অনেককে ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তিন ভাইকে এখনো আমরা খুঁজে পাইনি।’
মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর আমরা মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছি। প্রশাসনের যারা গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার চাই। যারা হয়রানির শিকার তাদের সহমর্মিতা জানাচ্ছি। সামনের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কাজ করবে।’
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে গুম ও খুন একটি নৈমিত্তিক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জুলাইয়ের পর আমরা এখনো অনেকের সন্ধান পাইনি। আমাদের ক্যাম্পাসের ৩ ছাত্রদল নেতাসহ আরও অনেকে গুমের তালিকায় রয়েছে।’
রইছ উদ্দীন প্রশ্ন রাখেন, ‘১০ ডিসেম্বর আসে, আর আমরা মানববন্ধন করে তাদের সন্ধান চাই, স্মরণ করি, আবার পরদিন ভুলে যাই। তাদের পরিবারের এখন কী অবস্থা, আমরা কি তা জানি?’
এ সময় রইছ উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা গুম হয়েছে, সব ক্যাম্পাসে তদন্ত কমিটি হয়েছে। দুঃখজনক বিষয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি। আমি এই দিনে আহ্বান জানাচ্ছি, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা গুম হয়েছে, তাদের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক।’
মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।