আয় না থাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার আটটি স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন উপদেষ্টা। এদিকে বন্দরের কার শেড পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে শ্রমিক দলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা। বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি ইয়ার্ডকে বেসরকারিকরণ না করার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন শ্রমিক দলের নেতারা। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে শ্রমিক নেতাদের কথা শোনেন।

নৌ পরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন,‘আমি আটটি স্থল বন্দরকে শনাক্ত করেছি, যার একপাশে কোনো আমদানি নেই। ১০ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু এক পয়সারও আমদানি নেই। আমরা রাজস্ব থেকে সেখানে খরচ করছি। এগুলো যাতে কিছু করা যায় বা বন্ধ করার কী প্রক্রিয়া হবে সেটা ফিরে গিয়ে শুরু করব।’ বন্দরগুলোতে কী লাভ হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে একটি স্থলবন্দর করার কথা জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘টেকনাফে আমাদের একটি বন্দর আছে মিয়ানমারের সাথে। ওখানে কিছু আমদানি হয়। সে জায়গাটি একটু দেখব। একইসঙ্গে ঘুমধুম নামে একটি জায়গা আছে। সেখানে আরাকান ও রাখাইনের সঙ্গে আমাদের ল্যান্ড কানেকশন। ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে দেখব যে, সেখানে একটি স্থলবন্দর করা যায় কিনা। আগামীতে মিয়ানমারের মধ্যে যা হোক না কেন, রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল এবং থাকবে। যেহেতু রোহিঙ্গারা সেখানে থাকে। যদি দরকার হয় সেখানে একটি পোর্ট করব। টেকনাফ পোর্টটি আমরা স্থলবন্দর বললেও সেটা কিন্তু সেটা না। এটা হয়তো নৌবন্দরে পরিণত হবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য কিছু আইনি পরিবর্তন আনা হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন,‘কাস্টমসের নিলামের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। বেশকিছু নিলাম তারা করেছে। কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে। গতবার এসে যেগুলো সরাতে বলেছিলাম। আগামী রোববারের মধ্যে তারা সেগুলো সব সরিয়ে ফেলবেন। বেশকিছু আইনি পরিবর্তন আনতে হচ্ছে যাতে এসব জঞ্জাল বছরের পর বছর বন্দরে পড়ে না থাকে।’

শ্রমিক দলের বিক্ষোভের মুখে উপদেষ্টা: এদিকে সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেড পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে শ্রমিক দলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক ইব্রাহিম খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি ইয়ার্ড দুটি তৈরি করা ইয়ার্ড। এ দুটি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আরও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পারে। পাশাপাশি বন্দরের নিজস্ব পরিচালনায় এ দুটি ইয়ার্ড থাকলে প্রায় চার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই আমরা এ দুটি ইয়ার্ডকে বেসরকারিকরণ না করার জন্য উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর ৪ ফেব্রুয়ারি চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে আমরা আজ বাধ্য হয়ে বিক্ষোভ করছি।’

নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যেহেতু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শ্রম মন্ত্রণালয়ও দেখি, সেহেতু তাদের কথাগুলো আমি শুনেছি। আমি তাদের সঙ্গে আরও গুরুত্ব দিয়ে কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তাদের বলেছি, পরের বার আসলে আমি শুধু তাদের সঙ্গেই বসব।’ 

এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান ও সচিব ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আমদ ন ন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: ডাকসু

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত সীমান্তে হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। বুধবার ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৩০ নভেম্বর মধ্যরাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক দুই বাংলাদেশি যুবক ইব্রাহিম রিংকু ও মমিন মিয়াকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে পদ্মা নদীতে নিক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সীমান্তে অব্যাহত বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

ডাকসুর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য হত্যাকারী বিএসএফের বিরুদ্ধে অবশ্যই কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্ত হত্যার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উত্থাপন করে বিচার নিশ্চিত করতেও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করছে। কিশোরী ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলে থাকা লাশ কিংবা স্বর্ণা দাসকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা সারা বিশ্বের বিবেক নাড়া দিলেও বিএসএফের মনোভাব বদলায়নি। ভারত বারবার সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার উল্টো চিত্রই দেখা গেছে। মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে প্রায় ৬৫৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। আজ পর্যন্ত এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো তদন্ত বা বিচার হয়নি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চলতি বছরেই ভারত থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষকে অবৈধভাবে ‘পুশইন’ করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা ও ভারতীয় নাগরিকও রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিস্ফোরণ, ড্রোন ওড়ানো এবং গুলিবর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ভারত থেকে অবৈধ পুশইন ও বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু ও দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে বিএসএফ বছরের পর বছর সীমান্তে হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। জুলাই বিপ্লব–পরবর্তী সময়েও বর্ডার ভায়োলেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কঠোর অবস্থান না থাকায় সীমান্ত হত্যাকাণ্ড একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ