নোয়াখালী-১ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়া দুই নেতা দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে হাত উঁচিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে আয়োজিত এক বৈঠকে মনোনয়ন না পাওয়া সৌদি আরব বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও সেনবাগ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মফিজুর রহমান এমন অঙ্গীকার করেন। আজ বুধবার দুপুরের দিকে ওই বৈঠকের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।

গতকাল রাতে সৌদি আরব বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বনগর গ্রামের বাড়িতে ওই সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই নেতার অনুসারীরাও প্রার্থী পরিবর্তনে একসঙ্গে হাত উঁচিয়ে কাজ করার শপথ করেন। বৈঠকে বিএনপির সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নাম জানা গেছে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মমিন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ওবায়দুল হক, সদস্যসচিব মুক্তার হোসেন, সেনবাগ পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।

সমঝোতা বৈঠক ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপির নেতা কাজী মফিজুর রহমান। আজ দুপুরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সেনবাগ-সোনাইমুড়ী এলাকায় সবাই প্রার্থী পরিবর্তন চান। এখন এক হয়ে সেই পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা করছি আমরা। জ্যেষ্ঠ যত নেতা আছেন, সবাই এই দাবি জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁরাও পরিবর্তন চান। তৃণমূলের নেতাদের কথা হলো এই পরিবর্তন দল থেকে না করা হলে আমরা করব।’

এর মধ্য দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার দিকে হাঁটছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী মফিজুর রহমান বলেন, ‘না সে রকম কিছু নয়, আমরা তৃণমূলের এই বার্তা কেন্দ্রকে দিচ্ছি। তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা এই মনোনয়ন পরিবর্তন চান।’

মনোনয়ন না পাওয়া অন্য বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা আছি জনগণের সঙ্গে। জনগণ যেদিকে, আমরা সেদিকে। সেনবাগ-সোনাইমুড়ীর মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে। আমরাও তাঁদের পক্ষে। যাঁরা বিগত ৩০ বছরে কিছু করতে পারেননি, তাঁরা এখন আর কিছু করতে পারবেন না।’

প্রসঙ্গত, ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে নোয়াখালী-১ আসনে জয়নুল আবদিন ফারুককে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ফারুক বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ। দলের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মনোনয়ন না পাওয়া স্থানীয় বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা কাজী মফিজুর রহমান ও আবদুল মান্নানের অনুসারীরা। তাঁরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে উপজেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজারে প্রতিবাদ বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

দুই নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবদিন ফারুক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না, কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি দলের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি, দলের নেতা-কর্মীরা সবাই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্র যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, জেলা বিএনপি তাঁর পক্ষে থাকবে। আমরা এরই মধ্যে ছয় আসনে ছয়জন প্রার্থীর পক্ষে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। কেন্দ্র যদি কখনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, সেটি পরে দেখা যাবে। তবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার উচিত।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন ব এনপ র স ক জ কর র স নব গ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৬ হার

দেশের মাটিতে রানের দিক দিয়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে টেস্ট পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল ভারত। গুয়াহাটিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৪০৮ রানে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশও হয়েছে। এতে করে ঘরের মাঠের দূর্গ ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়ার গল্প রচিত হলো।

কলকাতায় তিন দিনে হারানোর পর গুয়াহাটিতে পাঁচ দিনের ম্যাচেও দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতকে উড়িয়ে দিল। ২০০০-০১ সালের পর প্রথমবার ভারতের মাটিতে সিরিজ জিতলো প্রোটিয়ারা। শুধু তাই নয়, ভারতকে টেস্টে ৪০০ রানের বেশি ব্যবধানে হারানো ইতিহাসে প্রথম দলও হলো তারা। আগের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে।

আরো পড়ুন:

৪০৮ রানে ভারতকে হারিয়ে ২৫ বছরের পুরনো রেকর্ড ছুঁল দ. আফ্রিকা

সাকিবকে ছাড়িয়ে উইকেট শৃঙ্গে তাইজুল

ভারতের আগের সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে হার ছিল ২০০৪ সালে নাগপুর টেস্টে। সেবার তারা হেরেছিল ৩৪২ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডও নবায়ন হলো, ১৯৯৬ সালের রেকর্ডকে পেছনে ফেলে।

রানের ব্যবধানে ভারতের সবচেয়ে বড় টেস্ট পরাজয়গুলো:
৪০৮ রানে - দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০২৫
৩৪২ রানে - অস্ট্রেলিয়া, ২০০৪
৩৪১ রানে - পাকিস্তান, ২০০৬
৩৩৭ রানে - অস্ট্রেলিয়া, ২০০৭
৩৩৩ রানে - অস্ট্রেলিয়া, ২০১৭
৩২৯ রানে - দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯৯৬।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টেস্ট ৩০ রানে জয় তুলে নেওয়ার পর গুয়াহাটিতে ৪০৮ রানের দুর্দান্ত জয়ে সিরিজটাই পকেটে পুরে ফেললো।

৫৪৯ রানের অবিশ্বাস্য লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতের শুরুই হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। চতুর্থ দিনের শেষে স্কোরবোর্ডে ২৭ রানে ২ উইকেট। পঞ্চম দিনে নেমে একে একে উইকেটগুলো ভাঙা ঘরের মতো ধসে পড়তে থাকে। সাই সুদর্শনের ১৩৯ বল খেলে ১৪ রানের লড়াই ছিল ড্র বাঁচানোর মরিয়া প্রচেষ্টার প্রতিচ্ছবি। রবীন্দ্র জাডেজা একটি প্রতিরোধী অর্ধশতক করলেও দলকে রক্ষা করার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিন ত্রাস সাইমন হারমার ও সেনুরান মুথুসামি ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে এমনভাবে ঘিরে ধরেন যে বের হওয়ার কোনো পথই ছিল না। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত থামে মাত্র ১৪০ রানে। হারমার নেন ৬ উইকেট ৩৭ রানে। কেশব মহারাজ, মুথুসামি ও মার্কো ইয়ানসেন নেন যথাক্রমে ২, ১ ও ১ উইকেট।

প্রথম ইনিংসেই প্রোটিয়াদের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট। মার্কো জানসেনের (৪৮ রানে ৬ উইকেট) বোলিংয়ে ভারত ২০১ রানে গুটিয়ে যায়। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে করে ৪৮৯ রান। তাতে প্রথম ইনিংসে ৩১৪ রানে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে পড়ে ভারত।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ২৬০ রান করে ঘোষণা করলে ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় অসম্ভব ৫৪৯ রান। সেটা তাড়া করতে নেমে ১৪০ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। আর দক্ষিণ আফ্রিকা পায় ৪০৮ রানের বিরাট জয়। 

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ