এত দিন যে লিখতে পারা যায়নি, এখন যে যাবে, এটাই সাহিত্যের জন্য একটা নয়া বন্দোবস্ত। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার সমালোচনা করেও কেউ যদি সাহিত্য তৈরি করতে চান, তাঁকে সেটা করতে দেওয়া উচিত। না হলে ‘জুলাই ফ্যাসিজম’ নামে আলাদা একটা ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত তৈরি হতে পারে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে সাহিত্য বা আর্ট-কালচারে একটা মুভমেন্ট (আন্দোলন) হিসেবে হাজির করা যেতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের সিরিজ বক্তব্যের প্রথম পর্বের আলোচনায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেছেন। ‘জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সাহিত্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ভাষা নির্মাণ’ শিরোনামে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি হাসান রোবায়েত বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে ক্রিটিক (সমালোচনা) করেও যদি কেউ সাহিত্য তৈরি করেন, আমার মনে হয় তাঁকেও তাঁর মতো করে সেটা সেলিব্রেট করতে দেওয়া উচিত। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে সম্মিলিত আইনি ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর কণ্ঠরোধ করতে হবে বলে আমি মনে করি না। জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে (চেতনা) ক্রিটিক করেও কেউ সাহিত্য তৈরি করতে চাইলে তাঁকে সেটা করতে দেওয়া উচিত। না হলে তখন “জুলাই ফ্যাসিজম” নামে আলাদা একটা ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত তৈরি হতে পারে। এত দিন লিখতে পারা যে যায়নি, এখন যে যাবে, এটাই আমার কাছে মনে হয় সাহিত্যের জন্য একটা নয়া বন্দোবস্ত।’

জুলাই অভ্যুত্থানকে সাহিত্য বা আর্ট-কালচারে একটা মুভমেন্ট (আন্দোলন) হিসেবে হাজির করা যেতে পারে উল্লেখ করে হাসান রোবায়েত বলেন, ‘আমাদের এখানে বাঙালির বাইরেও অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আছেন। তাঁদের সাহিত্য তো আমরা জানি না। তো, জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী সাহিত্য বলতে কি আমরা বাংলা সাহিত্যের কথা চিন্তা করব? অন্য ভাষার সাহিত্যগুলো কেন তাদের হিস্যা বুঝে পাচ্ছে না, বাংলা ভাষা–সাহিত্য অন্য ভাষা–সাহিত্যগুলোকে ডমিনেট করছে কি না, তাদের নিজেদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে কি না—এ বিষয়গুলোর ফয়সালা করা গেলে একটা নতুন বন্দোবস্ত হবে বলে আমার মনে হয়।’

এ সময় আমজনতার বোধগম্য ভাষায় সংবিধান বা গঠনতন্ত্র লেখার আহ্বানও জানান হাসান রোবায়েত। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর সংবিধান যদি নতুন করে লেখা হয়, তাহলে তা জটিল ভাষায় লেখা যাবে না। এটা এমন ভাষায় লিখতে হবে, যা পড়ে সংবিধানের মূল বিষয়গুলো অন্তত আমজনতা বুঝতে পারে।

‘মুখের ভাষার মর্যাদা দরকার’

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সংস্কৃতায়িত বাংলাকে বাংলাদেশের বাংলা ভাষার লেখ্য রূপ করে তোলা হয়েছে বলে আলোচনায় অভিযোগ করেন কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ফয়েজ আলম। তিনি বলেন, ‘ভাষার মধ্যে আমার চিন্তা, ইতিহাস ও সংস্কৃতির বয়ান জমাচ্ছি, তার ওপর নির্ভর করছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, সেই ভাষা আমাদের বইয়ের ভাষা নয়। আমরা কথা বলি এক ভাষায় আর পড়ি আরেক ভাষায়। তাহলে কোন ভাষায় আমরা লিখব? কথ্যরীতির একটা আদর্শ রূপ আমাদের আছে।’

দেশের মাটি ও জনসমাজ থেকে উঠে আসা সাহিত্যই নতুন প্রজন্মকে পড়াতে হবে উল্লেখ করে ফয়েজ আলম আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের জন্য সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের কথাবার্তা ও স্লোগান আমাদের মুখের ভাষায় হয়েছে। কিন্তু প্রায় অপাঠ্য একটা ভাষাকে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন দরকার আমাদের পেছনের ভুল সংশোধন করে দেশের মানুষের ভাষা ও সাহিত্যকে সামনে নিয়ে আসা। আমাদের মুখের ভাষাটাকে মর্যাদার জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।’

আমরা কী করতে চাই, এটা ঠিক হলে ভাষা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে বলে আলোচনায় মন্তব্য করেন কবি এস এম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন শান্ত সময়ের কবিতা দরকার।’ এ প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দাশের ‘অবসরের গান’ কবিতার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন কবি বায়েজিদ বোস্তামী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে