রাজধানী ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও শতভাগ যাত্রীসেবা নিশ্চিতে টিকিট কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার উত্তরার বিডিআর মার্কেট এলাকায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. সাজ্জাত আলী।

এ সময় ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা এতটাই ভঙ্গুর ও বিশৃঙ্খল তা মানুষের সামনে উপস্থাপনের উপায় থাকে না। এখানে একটি বাস আরেকটি বাসকে গরু-মহিষের মতো পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এসব নিয়ে অনেক টিকটক হয়। ফেসবুকে, এখানে-সেখানে মানুষ আমাদের নিয়ে অনেক উপহাস করে।’

সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এসব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেই লক্ষেই আজ একটি নতুন প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে, যেখানে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা ২১টি কোম্পানির বাস একক কোম্পানির অধীন পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। এর আওতায় প্রায় ২ হাজার ৬১০টি বাস চলাচল করবে। বাসগুলোর রং হবে গোলাপি।

এসব বাস চলবে কাউন্টার–পদ্ধতিতে। যাত্রীদের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে যাতায়াত করতে হবে। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া বাস দাঁড় করানো হবে না। যাত্রী ওঠানামাও করবে নির্দিষ্ট স্থানে। বাসে ওঠানামার জন্য ঢাকার বিভিন্ন অংশে থাকবে প্রায় ১০০টি স্টপেজ।

দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, আজমপুর বিডিআর মার্কেটের সামনে ঢাকামুখী সড়কের একাংশে বাস দাঁড় করানোর জন্য বিশেষ জায়গা বা স্টপেজ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সাত থেকে আটটি গোলাপি রঙের বাস। স্টপেজের পাশেই ফুটপাতের ওপর অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার। যাত্রীরা নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট কেটে বাসে উঠছেন।

এ সময় কথা হয় রাজধানীর বনানীগামী যাত্রী মো.

ইউসুফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি টিকিট কেটে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে উঠেছেন। ইউসুফ বলেন, ‘সিস্টেমটা নতুন। তবে ঘুরেফিরে পুরোনো বাসই রং করে নতুনভাবে আনা হয়েছে। বাসের সিটগুলো আগের মতোই নোংরা, ছোট। নতুন সিস্টেম হিসেবে যাচাই করার জন্য টিকিট কাটলাম। সার্ভিস ভালো পেলে প্রতিদিন এসব বাসেই যাব।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এম এ বাতেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সুরক্ষার দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের

মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী মো. আবুল সরকারকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং পরে বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানায় দলটি। বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংগঠিতভাবে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলা, হুমকি এবং প্রাণনাশের আশঙ্কাজনক প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মানিকগঞ্জ কোর্ট এলাকায় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মিছিল, সহিংস আচরণ ও উসকানিমূলক স্লোগান বাংলার বাউল ঐতিহ্য, শিল্প–সংস্কৃতির বহুত্ব ও মানবিকতার চেতনাকে অবমাননা করেছে।

বিবৃতিতে দলটি চার দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো গ্রেপ্তার বাউলশিল্পীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচার, বাউলশিল্পীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিল্প–সংস্কৃতির স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলার লোকসংস্কৃতি, বাউল দর্শন ও মানবতাবাদী চর্চা জাতির ইতিহাস ও পরিচয়ের অংশ। এ ঐতিহ্য দমনে কোনো উগ্রবাদী চক্রের স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না।

৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা এলাকায় খালা পাগলির মেলায় পালাগানের আসরে বাউলশিল্পী আবুল সরকার ধর্ম অবমাননা করে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। তাঁর মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ নভেম্বর রাতে মাদারীপুরে একটি গানের আসর থেকে আবুল সরকারকে আটক করে মানিকগঞ্জ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরের দিন সকালে তাঁকে জেলা ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। ওই দিন দুপুরে মুফতি মো. আবদুল্লাহ বাদী হয়ে আবুল সরকারকে আসামি করে ঘিওর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা, আহত ৪৬ ঘণ্টা আগে

আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মানিকগঞ্জে আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন ভক্ত-অনুরাগীসহ মোট চারজন আহত হয়েছেন। ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে থাকা একদল ব্যক্তি এবং আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে এ ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকার কারাগারে২১ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ