টিকিট কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু
Published: 6th, February 2025 GMT
রাজধানী ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও শতভাগ যাত্রীসেবা নিশ্চিতে টিকিট কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার উত্তরার বিডিআর মার্কেট এলাকায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. সাজ্জাত আলী।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা এতটাই ভঙ্গুর ও বিশৃঙ্খল তা মানুষের সামনে উপস্থাপনের উপায় থাকে না। এখানে একটি বাস আরেকটি বাসকে গরু-মহিষের মতো পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এসব নিয়ে অনেক টিকটক হয়। ফেসবুকে, এখানে-সেখানে মানুষ আমাদের নিয়ে অনেক উপহাস করে।’
সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এসব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেই লক্ষেই আজ একটি নতুন প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে, যেখানে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা ২১টি কোম্পানির বাস একক কোম্পানির অধীন পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। এর আওতায় প্রায় ২ হাজার ৬১০টি বাস চলাচল করবে। বাসগুলোর রং হবে গোলাপি।
এসব বাস চলবে কাউন্টার–পদ্ধতিতে। যাত্রীদের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে যাতায়াত করতে হবে। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া বাস দাঁড় করানো হবে না। যাত্রী ওঠানামাও করবে নির্দিষ্ট স্থানে। বাসে ওঠানামার জন্য ঢাকার বিভিন্ন অংশে থাকবে প্রায় ১০০টি স্টপেজ।
দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, আজমপুর বিডিআর মার্কেটের সামনে ঢাকামুখী সড়কের একাংশে বাস দাঁড় করানোর জন্য বিশেষ জায়গা বা স্টপেজ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সাত থেকে আটটি গোলাপি রঙের বাস। স্টপেজের পাশেই ফুটপাতের ওপর অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার। যাত্রীরা নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট কেটে বাসে উঠছেন।
এ সময় কথা হয় রাজধানীর বনানীগামী যাত্রী মো.
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এম এ বাতেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৪৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মিতা, এ পর্যন্ত আসতে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়েছে তাঁকে
মিতা তখন খুবই ছোট। একদিন শুনলেন, তাঁর বাবা মাহাবুল ইসলাম হারিয়ে গেছেন। বাড়ির সবাই পাগলপ্রায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল মিতার বাবা ঢাকায় আছেন। রিকশা চালাচ্ছেন। বার্তাবাহকের মাধ্যমে মিতাদের চিন্তা করতে নিষেধ করে বলেছেন, ঢাকায় গিয়ে কী করবেন, কোথায় উঠবেন, কিছুই ঠিক ছিল না। তাই কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম কাপড়চোপড়ের ব্যাগটা মাথার নিচে দিয়ে এখানে-সেখানে ঘুমিয়েছেন। তারপর রিকশা চালানোর সুযোগ পেয়েছেন।
মিতা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বাবা একবারে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তাঁদের বাড়ি বাঘা উপজেলার চকনারায়ণপুর গ্রামে। এই গ্রামের বাজারেই পরে চায়ের দোকান দেন। সঙ্গে বিস্কুট-কলাও রাখেন। সেটি এখনো তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস। তাতে কিছুতেই সংসার চলে না। বাবা তাই বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ করেন। মাসে মাসে সেই ঋণের কিস্তি টানেন।
না পাওয়ার আঘাত নিয়ে বড় হওয়াপ্রতিটি ক্লাসেই কিছু সহযোগী বই কিনতে হয়। কোনো দিনই সেই বই একসঙ্গে কেনা হয়নি মিতার। সময় নিয়ে একটার পর একটা করে কিনতেন। এ জন্য ক্লাসের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ভালো হতো না। শিক্ষকেরা নবম শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর এই সংকটের বিষয়টা বুঝতে পারেন। তখন থেকে তাঁদের সৌজন্য সংখ্যাগুলো সব দিয়ে দিতেন। ওই দুই বছর আর বই নিয়ে সমস্যা হয়নি। মিতার ভাষায়, ‘জীবনে প্রথম সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছিলাম নবম শ্রেণিতে ওঠার পর।
আমি ফার্স্ট হয়েছি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই জানে, আমি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হব। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবার মুখ ভারী। বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে অনেক খরচ। আমাদের অত সামর্থ্য নেই।’
এ কথা শুনে মিতার মতো তাঁর শিক্ষকদের মনেও বিষাদের ছায়া নেমে এল। তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সাজিদুল ইসলাম। মানবিক বিভাগের বই নিতে গেলে মিতাকে পরপর তিন দিন তিনি ফিরিয়ে দিলেন, যেন বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। শেষে মানবিকেই পড়তে হলো মিতাকে।
২০১৭ সালে বাঘার রহমতুল্লাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করলেন মিতা। নম্বর পেলেন ১১৯৪, মানবিক বিভাগ থেকে উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের যেকোনো কলেজে ভর্তি হতে পারতেন কিন্তু এবারও আর্থিক কারণে তাঁকে ভর্তি করে দেওয়া হলো স্থানীয় মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজে। ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ (১১৪১ নম্বর) পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এবারও উপজেলার মধ্যে মানবিকে সর্বোচ্চ নম্বর মিতার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ও বাধার মুখে পড়লেন মিতা। বললেন, ‘আমার মা (সেলিনা বেগম) অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাটা তিনি জানতেন। তাই আমার এসএসসির স্কলারশিপের ১৬ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ছাগল কিনে রেখেছিলেন। আমি জীবনে অনেক ‘‘না’’ শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় যেন আমাকে আরেকটা না শুনতে না হয়, সেই জন্য মা এই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।’
এইচএসসির ফল প্রকাশের পর মিতার বাবা রাজশাহীতেই মেয়েকে ভর্তি হতে বললেন। কিন্তু শিক্ষকদের চাপাচাপি আর পরামর্শে মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মিতার শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সহযোগিতা করলেন।
মিতা বলেন, ‘আমাকে না জানিয়েই তাঁরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখনকার ইউএনও শাহীন রেজাও সহযোগিতা করেছিলেন।’
শিক্ষকের শাড়ি পরে ভাইভা দিয়েছেন মিতা খাতুন