শিগগিরই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আসছে: আসিফ মাহমুদ
Published: 7th, February 2025 GMT
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আসিফ মাহমুদ বলেন- প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
শুক্রবার বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার সহসাই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন- আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেনো, আমরা এ দেশের জনগণকে ‘রিপ্রেজেন্ট’ করি। ফলে, ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে জায়গা থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, আমি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও ৪টি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যে কোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে, এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জুলাই আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যে কোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু আইনের বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, সেক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে।
তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া প্রতিফলন ঘটাতে সরকার এ ব্যাপারে দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। একটি গণঅভ্যুত্থান যারা ঘটায়, পরবর্তী প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আমরা অতীতে দেখেছি যে, অভ্যুত্থানের অর্জনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই যারা স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করেছে। তাছাড়া ৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া অনেকেই কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে যায়নি।
আসিফ বলেন, ‘বর্তমানে তাদের ভেতরেও রাষ্ট্র গঠনের স্পৃহা তৈরি হয়েছে। এই শক্তিটাকে সংহত করার জন্য একটা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এ দলের কোন নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।’
ছাত্রদের নতুন দলে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন- এ বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো- বর্তমান সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন তাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তাদের সরকারে থাকাটা ঠিক হবে না। কেউ যদি সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যায় তো অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে তবেই সেখানে যাবে।
কারণ, এ সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব নিয়েছে। পাশাপাশি, দেশের সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার কাজ শেষ করার দায়িত্বও তাদের উপর অর্পিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন ধরনের ‘কনফ্লিক্ট’ যেন তৈরি না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেই সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলে তিনি থাকবেন কি না এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে আমি ভাবিনি। কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবে।
সরকার চায় সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্বাচন, এক্ষেত্রে বিষয় দুইটি সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন- না, মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। এ বিষয়গুলোর পুরোটাই আমাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকার স্পষ্টই একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ আগস্টের পরে মানুষের মধ্যে এই মনোভাবই ছিল যে- যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়, তবে সেও ওই একই গতানুগতিক ধারায় কাজ করবে। তবে এসব বিষয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এই সরকারও ফেইস করছে। কারণ, সমাজের প্রত্যেকটি কাঠামোতেই স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে।
আসিফ মাহমুদ সংস্কার কমিশন যে ৬ রির্পোট দেওয়া হয়েছে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, এই রিপোর্টগুলো যথাযথ স্টেক হোল্ডারের কনসালটেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাঠ তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যে রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার সময় বলে আসছিল, বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন সম্ভব নয়, তারা এখন আবার একই বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনের কথা কোন গ্রাউন্ড থেকে বলছে এটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। সেটাও তাদেরকে স্পষ্ট করতে হবে। একই সংবিধান, আইনকানুন রেখে নির্বাচন করলে সেটা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলের নির্বাচন থেকে কতটা আলাদা হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়।’
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে কোনো দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিই, তাদের জন্য সরকার চালানো কঠিন হবে। এ কারণেই ছয়টা সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এগুলো শাসনতান্ত্রিক। বাকি সংস্কারগুলো জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ সুতরাং আমরা মনে করি, এখানে মিনিংফুল সংস্কারের মাধ্যমেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে এবং সংস্কার কার্যক্রম ও আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমেই নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।
সূত্র- বাসস
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ন ষ দ ধ কর র ব ৫ আগস ট র পর গণঅভ য ত থ ন উপদ ষ ট সরক র র আওয় ম ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদ ও গণপরিষদ নির্বাচনকে মুখোমুখি করে নতুন চক্রান্ত চলছে: আখতার
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করার যে চক্রান্ত চলছে, এটা বাংলাদেশকে নতুনভাবে পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
বুধবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনে জাতীয় নাগরিক কমিটি কর্তৃক আয়োজিত গণ ইফতার আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হবেন তাদের সংসদ হিসাবে ভূমিকা পালন করতে পারে, সে প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ মেয়াদি মুক্তির সংগ্রামের সুফল রয়েছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আহ্বান জানাব; বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদের যে বাস্তবতা সেটাকে আমলে নিয়ে সামনের বাংলাদেশের যে রোডম্যাপ, সেটা ঘোষণা করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির এই সদস্য সচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে যে রাষ্ট্র কাঠামো দেখতে চেয়েছে, তাকে পেতে হলে আমাদের নতুন সংবিধান পেতে হবে। আর নতুন সংবিধানের জন্য অবশ্যই গণপরিষদের নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
আক্তার হোসেন আরো বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতা এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে যে পরস্পরবিরোধী করার যে নীল চক্রান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটার তীব্র বিরোধিতা করি। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের যত অধ্যায় রয়েছে তার মধ্যে একাত্তর একটি অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায় বলে মনে করি। আর এই উজ্জ্বল অধ্যায় যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত করা হয়েছিল তখন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২৪-এর সৈনিকেরা তাদের জীবন দিয়ে মানুষকে আরেকবার মুক্ত করেছিল। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান না হলে আমরা একাত্তরের স্বাধীনতাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলতাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একাত্তরের শহীদ এবং ২৪-এর শহীদদের স্মরণ রাখবার পক্ষপাতী। আমরা যে সময় গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গেছি, সে গণ আন্দোলনকে সফল করতে হলে অবশ্যই সম্প্রতি বাংলাদেশের যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, এর বিচার দৃশ্যমান করতে হবে।
ঢাকা/রায়হান/এনএইচ