নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভার আকার বেঁধে দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এতে সর্বোচ্চ ২৩ মন্ত্রী এবং ১২ প্রতিমন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান ৪৩ মন্ত্রণালয় ও ৬১ বিভাগকে ২৫ মন্ত্রণালয় ও ৪০ বিভাগে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে এই কমিশন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হাতে কোন কোন মন্ত্রণালয় থাকবে, তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে প্রস্তাবে। 

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ এর আগে প্রকাশ করা হলেও গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার হাতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হয়। পরে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। 

প্রস্তাবিত সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মন্ত্রণালয় হবে ২৭টি। এতে দু’জন টেকনোক্র্যাটসহ মন্ত্রী হবেন ২৩ জন। প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হবেন ১২ জন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব একজন, মুখ্য সচিব ১৭ জন ও সচিব থাকবেন ৪২ জন। একাধিক বিভাগ সংবলিত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়া এবং সমন্বয়ের জন্য একজন মুখ্য সচিব থাকবেন। 

রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের আপন বিভাগ ও জনবিভাগ থাকবে রাষ্ট্রপতির অধীনে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি একজন প্রতিমন্ত্রী রাখার ব্যাপারে প্রস্তাব করেছে কমিশন। এ ছাড়া অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোতে একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বাকি মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোতে একজন মন্ত্রী থাকবেন। 

পাঁচ গুচ্ছে থাকবে ৩৫টি মন্ত্রণালয় 
মন্ত্রণালয়গুলোকে সমপ্রকৃতির পাঁচটি গুচ্ছে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিধিবদ্ধ প্রশাসনে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, ভূমি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদ, পররাষ্ট্র  এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যে থাকবে অর্থ, পরিকল্পনা, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগে থাকবে যোগাযোগ, নৌপরিবহন, অসামরিক বিমান চলাচল, 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, গণপূর্ত ও নগরায়ণ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কৃষি ও পরিবেশে– কৃষি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পানিসম্পদ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়নে– শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু এবং শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়।

নারীদের দেখভালে সব মন্ত্রণালয়ে নারী কর্মকর্তা
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এখন প্রচুরসংখ্যক নারী কর্মরত রয়েছেন। কমিশন মনে করে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও তার অধীন অফিসে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে তদারকির জন্য একজন নারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। অবদলিযোগ্য পদে নারীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার  কথা বলা হয়েছে। পুলিশের কাছে মামলা বা অভিযোগ করার ব্যাপারে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। এ সমস্যা সমাধানে প্রতিটি থানায় নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া উচিত। জেলা মহিলা অধিদপ্তরে জনবল বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়।

জনপ্রশাসন সংস্কারে স্থায়ী কমিশন 
স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এই স্থায়ী কমিশনের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সংস্কার বাস্তবায়ন প্রস্তাব সরকারের কাছে উপস্থাপন এবং তা বাস্তবায়নে সরকারকে ক্রমাগত কারিগরি সহায়তা দেওয়া। এ লক্ষ্যে স্থায়ী সংস্কার কমিশন প্রথমেই সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। দ্বিতীয়ত, সময় স্বল্পতার কারণে এই কমিশন যেসব সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করতে পারেনি, সেগুলো এবং অন্যান্য নতুন নতুন উদ্ভাবনী সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত স্থায়ী সংস্কার কমিশন কাজ করতে পারে। সরকারি বিভাগের/দপ্তরের জনবলের যৌক্তিকীকরণ এবং সরঞ্জামের তালিকা হালনাগাদ করা দীর্ঘদিনের মুলতবি বা অনিষ্পন্ন কাজ। সরকারি বিভাগ ও দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি করপোরেশন ও কোম্পানির পুনর্গঠনসহ সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বা কাঠামোগত সংস্কার; যেমন বিলুপ্তি, একত্রীকরণ, বেসরকারীকরণ নিয়েও প্রস্তাবিত স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন কাজ করতে পারে।

এই কমিশন পাঁচ কমিশনার নিয়ে গঠিত হতে পারে, তাদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রস্তাবিত এই কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির পদমর্যাদার, চারজন কমিশনার হবেন সরকারের মুখ্য সচিবের পদমর্যাদার।

প্লট বরাদ্দ ও শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা কমানোর সুপারিশ
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে গণভোট চালুর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাবে স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের ভোট, বাজেটের ৩০ শতাংশ স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ, বিতর্কিত সংসদ সদস্যের প্রত্যাহারের বিধান এবং বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার হওয়ার সুপারিশ রাখা হয়েছে।

পাশাপাশি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা ইসির হাত থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন আপত্তি জানালেও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবে সুপারিশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে বিদ্যমান শর্ত শিথিল করে ১০ শতাংশ ১০ জেলা এবং ৫ শতাংশ উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের মেয়াদকালে কমিশনারদের দায়িত্বে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগ উঠলে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সুরাহার চলমান বিধান কার্যকর করার কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি চলমান আসনভিত্তিক নির্বাচনের বদলে আনুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হলেও কোনো সুপারিশ করা হয়নি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে সুপারিশ করা থেকে তারা বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দেওয়াই যৌক্তিক বলে কমিশন মনে করছে।

সংসদের আগে স্থানীয় সরকারের ভোট আয়োজনের সুপারিশ করে কমিশন বলেছে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে পরিচালিত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশই মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত।

গণভোট চালুর সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার রায়ে আদালত গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনেন। তবে আদালতের রায়ে গণভোটের বিধানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে আসা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই গণভোটের বিধানটি আগামী সংসদে পাসের সুপারিশ করা হচ্ছে।

নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মেয়াদ পূরণের আগে প্রত্যাহারের বিধান চালুর সুপারিশ করে বলা হয়েছে, রিকল বা প্রতিনিধি প্রত্যাহারের মাধ্যমে কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা নির্ধারিত সংখ্যক স্বাক্ষরের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে পদচ্যুত করার জন্য পুনর্নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশ ইসির মাধ্যমে একজন নতুন জনপ্রতিনিধি নিয়োগ বা  পুনর্নির্বাচন।

জাতীয় নির্বাচনে ‘না ভোট’ ফের চালুর প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, ‘না ভোট’ নির্বাচনে যদি সর্বোচ্চ ভোট পায়, তাহলে সেই নির্বাচন বাতিল করে আবার নির্বাচনের বিধান করা। সে ক্ষেত্রে বাতিল নির্বাচনের কোনো প্রার্থী নতুন করে আর প্রার্থী হতে পারবেন না– এমন বিধান রাখা।

গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ে। সেদিন কমিশনগুলোর প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র র স প র শ কর ন মন ত র মন ত র র ত মন ত র সরক র র র জন য রপত র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি

প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।

ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।

ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।

তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।

মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।

আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।

আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদ

আনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।

সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি