আজও শাহবাগে প্রাথমিকের নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীদের অবস্থান
Published: 11th, February 2025 GMT
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকার শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন তৃতীয় ধাপের প্রার্থীরা। এদিকে, আলোচনার জন্য তাদের একটি প্রতিনিধিদল যাচ্ছে সচিবালয়ে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ২টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে প্রতিনিধিদল সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
প্রতিনিধিদলে রয়েছে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক পিয়াস তালুকদার, নওরিন আক্তার, জান্নাতুল নাইম, মালা বোস, শামীমা আক্তার, রাশেদ শাহরিয়ার।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা প্রথমে শাহবাগ মোড় অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশের বাধায় সেখানে যেতে না পেরে জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন।”
আন্দোলনরত সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক নওরীন চাঁদনী রাইজিংবিডি বলেন, “আমাদের ওপর গতকাল যে হামলা হয়েছে তার তীব্র নিন্দ্রা ও প্রতিবাদ জানাই। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারে শতাধিক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক গুরুতর আহত হন এবং সুপারিশপ্রাপ্ত অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকা ও ছোট বাচ্চারাও পুলিশের নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাবো না।”
এর আগে গতকাল সোমবার একই দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগ করে পুলিশ; লাঠিচার্জ করে তাদের সরাতে না পেরে একইসঙ্গে জলকামান ব্যবহার করে। একপর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয় তাদের ওপর।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগদান করার কথা, কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে তারা তা পারেননি। যারা সুপারিশপ্রাপ্ত হননি, এমন ৩১ জনের রিটে তাদের ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। তারা বলছেন, এ কেমন প্রহসন? এ দায় আসলে কে নেবে? তারা একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এর আগে আন্দোলনকারীরা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম ও অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন যেন থামছেই না। ২০২৩ সালের ১৪ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। এ ধাপের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল এবং ভাইভা সম্পন্ন হয় ১২ জুন।
বিজ্ঞপ্তির বর্ণনা অনুযায়ী, আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়। ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করেন, যারা সুপারিশপ্রাপ্ত হননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এরইমধ্যে চেম্বার জজ আদালত, আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্টে চারটি শুনানির পর চূড়ান্ত জাজমেন্টে ৬ তারিখ বাতিল ঘোষণা করা হয়।
প্রার্থীরা বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলেন, ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫ ডিসেম্বর জেলা শিক্ষা অফিস এবং ৮ ডিসেম্বর স্কুল পদায়ন সম্পর্কিত নিয়োগ আদেশ জারি করে। সে অনুযায়ী, প্রার্থীরা নিজ নিজ জেলা সিভিল সার্জন অফিসে মেডিকেল টেস্ট এবং জেলা শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। অনেক জেলার কিছু কিছু উপজেলায় চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তরা যোগদানপত্র হাতে পেয়েছেন। সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যোগদান করতে না পেরে ৬ হাজার ৫৩১টি পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। সবাই এক প্রকার মানসিক বিপর্যয় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ঢাকা/রায়হান/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ