সাত বছর পর মেলায় অলাত এহ্সানের বই
Published: 19th, February 2025 GMT
সাত বছর পর মেলায় এসেছে প্রতিশ্রুত গল্পকার অলাত এহ্সানের দ্বিতীয় গল্প সংকলন। ‘বৃদ্ধাশ্রম হয়ে ওঠা কফি হাউসটি’ বইটি প্রকাশ করছে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী। এ ছাড়া ‘দশ কথা: বিশিষ্টজনের মুখোমুখি’ শীর্ষক সাক্ষাৎকার সংকলন প্রকাশ করেছে বেঙ্গলবুকস। বই দুটি মনোযোগী পাঠকের আনন্দ ও চিন্তার খোরাক হবে।
অলাত এহ্সানের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘বৃদ্ধাশ্রম হয়ে ওঠা কফি হাউসটি’। প্রথম বইয়ের চরিত্র যেন সময়ের অভিঘাতে বিবর্তিত হয়ে দ্বিতীয় গ্রন্থে উপস্থিত হয়েছে। যারা স্থান-কালের বাইরে চরিত্রের বদলের ভেতর পাঠকে উপভোগ করেন, এসব গল্পের ধারাবাহিকতা হয়তো তাদের উপন্যাসের স্বাদও পেতে পারেন। আলাদা গল্প, আলাদা চরিত্র, আলাদা প্লট; কিন্তু সময়ের ধারাবাহিক সমীক্ষা যেন!
বইটিতে গল্পের সংখ্যা দশ। এর মধ্যে প্রেম, ফ্যান্টাসি, মানুষের দূরত্ব, রাজনৈতিক বাস্তবতা, পরিবেশে-প্রকৃতি, পেশাজীবনের ধকল, ব্যক্তিজীবনের রাজনীতির প্রভাব, সময়ে বদলে সঙ্গে জীবনের উন্নতি বা অনুপোযোগী হয়ে পড়া, দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের দূরত্বের গল্প রয়েছে।
বইটি নিয়ে অলাত এহ্সান বলেন, ‘প্রথম বইয়ের গল্পগুলোর ভেতর অবস্থাকে মেনে না নেওয়ার একটা প্রবণতা ছিল, চরিত্রগুলো বিদ্যামান অবস্থার সঙ্গে অনভ্যস্ত হতে পারছিল না, প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এবারের বইয়ের অনেক চরিত্র সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে, নিজের ভেতর একটা অবগুণ্ঠন তৈরি করেছে। এটা মানুষের জীবন ও চিন্তার ধারাবাবিক বদলেরও ইঙ্গিত দেয়। মানসিক সমৃদ্ধিকেও তুলে ধরে।’
বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে। তারা হলেন– প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও জনবুদ্ধিজীবী আনু মুহাম্মদ এবং জাপানি ভাষার প্রখ্যাত অনুবাদক ও অধ্যাপক অভিজিৎ মুখার্জি।
বইটি প্রকাশ করেছে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী। প্রচ্ছদ এঁকেছেন পরাগ ওয়াহিদ। ১৬৮ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪০০ টাকা। অমর একুশে বইমেলার ২৪ নম্বর প্যাভিলিয়ন এবং চট্টগ্রামে বইমেলায় ১১৮ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে।
‘দশ কথা: বিশিষ্টজনের মুখোমুখি’ বইয়ে হাসান আজিজুল হকের দুটি সাক্ষাৎকার আছে। এছাড়া উর্দু ভাষার প্রয়াত প্রখ্যাত অনুবাদক জাফর আলমের একমাত্র সাক্ষাৎকারই এটি এখন পর্যন্ত। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীরের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার আছে এতে। এ ছাড়া অনুবাদক, প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিন, কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান এবং চিত্রশিল্পী ও কবি রনি আহম্মেদের সাক্ষাৎকার সংকলিত হয়েছে।
বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গলবুকস। প্রচ্ছদ এঁকেছেন আজহার ফরহাদ। ২৯৬ পৃষ্ঠার বইটির মূদ্রিত মূল্য ৪৯০ টাকা। ঢাকায় একুশে বইমেলায় বেঙ্গলবুকসের স্টল ১১৮-১১৯ নম্বরে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
অলাত এহ্সানের পূর্ব প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অনভ্যাসের দিনে’র দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশ করেছে অর্জন প্রকাশন। বইমেলায় তাদের স্টল নম্বর ৫২।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।