আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করে বাংলাদেশ। ৩০০ বলের এই খেলায় ১৮১ বল ডট খেলেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। মানে ৩০.১ ওভার কোনো রানই নেননি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এজন্যই পেরে উঠেনি বাংলাদেশ। তাতে শেষ ম্যাচ খেলার আগে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। এর আগে প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৫৯ বল ডট দিয়েছিলো বাংলাদেশ। ভারত ও নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচ মিলিয়ে বাংলাদেশের ডট দিয়েছে ৩৪০ বল বা ৫৬ দশমিক ৪ ওভার।

এমনিতেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সমস্যার শেষ নেই। ইনিংস বড় করায় মনোযোগে ঘাটতি, ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে না পারা, বল নির্বাচন ঠিকঠাক করতে না পারা, প্রয়োজনের সময় বিস্ফোরক হতে না পারা, এমন অনেক ঘাটতিই আছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির একটি এই ডট বলের আধিক্য। তিনশ ছোঁয়া স্কোর বা বড় ইনিংস নিয়মিত গড়তে না পারার পেছনে বড় একটি কারণ এটি।

বর্তমানে ক্রিকেটে চলছে ‘বাজবল’ যুগে। যেখানে ওয়ানডেতেও ব্যাটাররা খেলে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে। ফরম্যাট বিবেচনা না করেই দ্রুত রান তুলতে মনোযোগী তারা। কিন্তু বাংলাদেশ সেসবের ধার ধারতে রাজি নয়। চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তারা ‘ডট বল’ দেওয়াকে যেন ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত করেছে! 

বাংলাদেশ যে এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে, তা মেনে নিলেন দলটির অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। ম্যাচ শেষে এর ব্যাখ্যা দিয়ে নামজুল হোসেন শান্ত বললেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই এই জায়গাটায় উন্নতির সুযোগ আছে। আমরা নিয়মিত ৩০০ করি না। এটি সত্যি কথা। এটি মেনে নিতেই হবে। তবে আমার মনে হয় আজ যদি ডট বলের কথা বলেন, একটা সময় ৫–১০ ওভার পরপরই আমাদের উইকেট পড়েছে। এটা ডট বল বেশি হওয়ার একটা কারণ। বড় জুটি গড়তে পারলে এত বেশি ডট বল হয়তো হতো না।’

শান্ত বলেন, ‘এই অভ্যাসটা তৈরি করা জরুরি যে, নিয়মিত আমরা কীভাবে তিনশ করতে পারি। আমরা হয়তো একদিন-দুদিন তিনশ করি। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য অনুশীলনে বলেন, নিয়মিত কীভাবে ভালো উইকেটে খেলা যায়, নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে এই ধরনের স্কোর গড়া যায়, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকের ম্যাচে ডট বল হওয়ার কারণ, আমরা মাঝের ওভারগুলোয় কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট দিয়ে দিয়েছি।’

শান্তদের সাম্প্রতিক হতশ্রী পারফরম্যান্স দেখে ক্রিকবাজের ম্যাচ বিশ্লেষণে সাবেক ভারতীয় ওপেনার দিনেশ কার্তিক বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট খুব শিগগির জিম্বাবুয়ে বা আয়ারল্যান্ডের পর্যায়ে নেমে যেতে পারে। সাকিবের পর তারা যেন সব বিভাগে নিষ্প্রভ। এটা সত্যিই হতাশাজনক।’

এই ব্যর্থতার বলয় ভাঙতে এলোমেলো ক্রিকেট থেকে বের হয়ে আসতে চান শান্ত, ‘আমরা সিরিজ জিতলেও বেশির ভাগ সময় ঘরের মাঠে জিতি। দেশের বাইরে সিরিজ কমই জেতা হয়। আইসিসি ইভেন্টেও একই অবস্থা। একদিন বোলিং ভালো হয় না, আরেক দিন ব্যাটিং খারাপ হয়, আরেক দিন ফিল্ডিং খারাপ হয়। কেমন যেন এলোমেলো ক্রিকেট হয়। আমাদের এটা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষ কি আসলেই স্বার্থপর

বিজ্ঞান বলছে, আমরা জন্মগতভাবে পরোপকারী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি সত্যিই সব সময় অন্যদের কথা ভাবতে বাধ্য?

উড়োজাহাজ উড়াল দেওয়ার আগমুহূর্তে যাত্রীদের সচেতন করার জন্য নিরাপত্তাবিষয়ক কিছু ঘোষণা দেওয়া হয়। যেমন ‘স্বাগতম’ এবং ‘এই বাঁশিটি বাজিয়ে সাহায্য চান’। এসবের মাঝখানে বলা হয়, ‘আগে নিজের অক্সিজেন মাস্ক পরুন, তারপর অন্যকে সাহায্য করুন।’

এই কথাকে বলা চলে ‘স্বার্থপরতা’ দেখানোর একরকম আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা। যদি আপনি আকাশে ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায় এবং ঘণ্টায় ৫৫০ মাইল গতিতে থাকা অবস্থায় কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে এ নির্দেশনা ভালো কাজে দেবে।

ধরুন, পরিস্থিতি এমন হলো যে হঠাৎ করে কেবিনের ভেতরে চাপ কমে গেল। এই পরিস্থিতিতে যদি আপনি আগে নিজের অক্সিজেন মাস্ক না পরেন, তাহলে হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন। আর তখন আপনি আর কাউকে সাহায্য করার মতো অবস্থাতেই থাকবেন না।

বিজ্ঞান বলছে, আমাদের বেশির ভাগের মধ্যেই নিঃস্বার্থ হওয়ার স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। কখনো কখনো তা আশ্চর্য রকমের বেশি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা সব সময় নিঃস্বার্থ হতে পারি বা হওয়া উচিত।

কিন্তু অন্যভাবে ভেবে দেখলে, এই কথাটাতে অনেকে ভুল বার্তাও পেতে পারেন। আজকের দুনিয়ায় যেখানে আত্মকেন্দ্রিক মানুষদেরই অনেক সময় বেশি সফল বলে মনে হয়, সেখানে এই লাইন যেন বলছে, সব সময় আগে নিজের কথা ভাবো আর নিজের স্বার্থই সবচেয়ে বড়।

সামাজিক মনোবিজ্ঞানী গির্ট হফস্টেডের মতে, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা হলো মানুষ কতটা নিজেকে স্বাধীন মনে করে, সেটির পরিমাপ। অর্থাৎ বড় একটি গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল থাকার বিপরীত দৃশ্য এটি।

বিশ্বের অনেক জায়গায়, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রবণতা দিন দিন প্রবল হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি ভালো, না খারাপ?

লিডস বেকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক স্টিভ টেলর বলেন, ‘শুধু সেলফিশ জিন’ ও ‘নিও-ডারউইনিজম’ তত্ত্বই নয়; মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও জীববিজ্ঞানের বেশ কিছু তত্ত্ব এই বিশ্বাসকে স্বাভাবিক করে তুলেছে যে প্রতিযোগিতা মানেই মানুষ স্বভাবতই নিষ্ঠুর, নির্মম বা স্বার্থপর।

তবে টেলর এটাও মনে করেন যে মানুষ অবশ্যই স্বার্থপর হতে পারেন। কারণ, আমাদের মস্তিষ্কের প্রথম কাজই হলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো আরও আশাব্যঞ্জক কথা বলছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যে সব সময় নিজের কথাই আগে ভাবেন, এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।

আমরা কখন নিজের কথা আগে ভাবি আর কখন অন্যের কথা আগে ভাবি, তা অনেকটাই পরিস্থিতি, আমাদের আগের অভিজ্ঞতা এবং সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে।

১৯৬০-এর দশকে ‘বাইস্ট্যান্ডার ইফেক্ট’ নামের একটি তত্ত্ব আলোচনায় আসে। এই তত্ত্বে বলা হয়, কেউ বিপদে পড়লে আশপাশের মানুষেরা খুব কমই এগিয়ে যান। ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্কে কিটি জেনোভেস নামের ২৮ বছরের এক নারী বারকর্মীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর তত্ত্বটি দেওয়া হয়েছিল। তত্ত্ব অনুসারে, কিটি জেনোভেসকে হত্যার দৃশ্যটি প্রায় ৪০ জন মানুষ দেখেছেন, কিন্তু কেউই তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি।

‘বাইস্ট্যান্ডার ইফেক্ট’-এর পেছনের ঘটনাটি নিয়ে যে গল্প সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে, তার শেষাংশ এখন অনেকটাই বিতর্কিত বলে ধরা হয়। হ্যাঁ, কিটি জেনোভেসকে যে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল, এটা সত্যি এবং তা মর্মান্তিক। তবে তদন্তে দেখা গেছে, ৩৮ জন নির্লিপ্ত প্রত্যক্ষদর্শীর কথাটি সত্য নয়। ২০০৭ সালের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনোভেসের হত্যাকাণ্ড যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা কেউই কিছু করেননি, এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।

গবেষকেরা মনে করেন, এই গল্প একধরনের আধুনিক উপকথা হয়ে গেছে। তাঁদের মতে, এ ধারণা আসলে জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের সহানুভূতি বা সাহায্য নিয়ে আরও গভীরভাবে গবেষণার সুযোগকে সীমিত করে দিয়েছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক পরিস্থিতিতে মানুষ আসলে নিজের নিরাপত্তার চেয়েও অন্যের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত থাকে।

কিছু নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা এখনো আমাদের পূর্বসূরিদের মতো করে জীবন যাপন করেন, তাঁরা সম্পদ ভাগাভাগিতে সমতা বজায় রাখেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ