১০ দিন ভোগান্তির পর কাঁচা পাট রপ্তানিকারকদের স্বস্তি, আটকে থাকা চালান রপ্তানির অনুমতি পেল
Published: 18th, September 2025 GMT
কাঁচা পাট রপ্তানির জন্য সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়েছে। জাহাজীকরণ বিল দাখিল করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দরেও পৌঁছে গেছে পাটের চালান। এমন সময় সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, অনুমতি ছাড়া কাঁচা পাট রপ্তানি করা যাবে না। ফলে বন্দরে আটকে থাকা পণ্যের চালান নিয়ে বিপাকে পড়েন রপ্তানিকারকেরা। তাঁদের জন্য স্বস্তির খবর দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রপ্তানিকারকদের ১০ দিন এমন ভোগান্তি দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশ এখন বলছে, বন্দরে আটকে থাকা কাঁচা পাট রপ্তানি করা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৮ সেপ্টেম্বর এক পরিপত্র জারি করে বলেছিল, এখন থেকে কাঁচা পাট রপ্তানি করতে হবে সরকারের অনুমতি নিয়ে। এ পরিপত্র জারির পর রপ্তানির সব ধাপ শেষ করা কাঁচা পাটকেও আটকে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কাঁচা পাট রপ্তানিকারকেরা তখন হঠাৎ বিপাকে পড়েন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি ও তাৎক্ষণিক প্রভাবগুলো কী হবে, তা বিবেচনায় না নিয়েই ৮ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনটি জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এ কারণে বন্দরের জরিমানা ও বাড়তি ট্রাকভাড়া দিতে হয়েছে তাঁদের। প্রায় ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি কাঁচা পাটের চালান আটকে ছিল।
এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সময়মতোই পদক্ষেপ নিয়েছি। সমস্যার সমাধান হয়েছে।’
রপ্তানিকারকেরা অবশ্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের শরণাপন্ন হলে তিনি এতে সাড়া দেন। রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান মো.
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ চিঠির মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গেল। আমরা এখন বন্দরগুলোকে বলে দেব।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, আগের পরিপত্র অনুযায়ী কাঁচা পাট রপ্তানিতে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। যেসব চালানে কাঁচা পাট রপ্তানির উদ্দেশ্যে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাহাজীকরণ বা শিপিং বিল দাখিল করা হয়েছে, সেসব চালান উল্লিখিত পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) যৌথভাবে গত ২৫ আগস্ট বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছে একটি আবেদন করে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা পাট রপ্তানিতে সরকারের অনুমতির বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল।
কত কাঁচা পাট রপ্তানি হয়বিজেএসএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে ৬০ লাখ বেল। পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ ১৩টি দেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করা হয়েছে। ওই অর্থবছরে কাঁচা পাট রপ্তানি হয় ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বা ১৬ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ৯ কোটি ডলারের বেশি আয় আসে ভারত থেকে।
বিজেএসএ সভাপতি তাপস প্রামাণিক এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব প্রক্রিয়া শেষ করে কাঁচা পাট রপ্তানির শেষ মুহূর্তে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জন্য এ চিঠি ইতিবাচক হয়েছে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানাই যে তারা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে।’
বিজেএমএ ও বিজেএসএর আবেদনে বলা হয়েছিল, বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুমে প্রতি মণ পাটের দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। অথচ আগের বছরগুলোতে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা। পাটশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল কাঁচা পাট। এই কাঁচা পাটের অভাবে কারখানাগুলো প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পারে না। মাঝখানে সুযোগ নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।
বন্দরে কাঁচা পাট নিয়ে আটকে থাকা রপ্তানিকারক শামীম আহমেদ বিষয়টি নিয়ে আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যানকে যে চিঠি আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিল, তা ৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রেই উল্লেখ করতে পারত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে ১০ দিন ধরে আমরা বন্দরকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি এবং বাড়তি গাড়িভাড়া বহন করছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৮ স প ট ম বর প রথম আল ক এনব আর র পর প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের মঞ্চে বাংলাদেশি মডেল নিবিড় আদনান
ছবি: নিবিড় আদনানের সৌজন্যে