কাঁচা পাট রপ্তানির জন্য সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়েছে। জাহাজীকরণ বিল দাখিল করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দরেও পৌঁছে গেছে পাটের চালান। এমন সময় সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, অনুমতি ছাড়া কাঁচা পাট রপ্তানি করা যাবে না। ফলে বন্দরে আটকে থাকা পণ্যের চালান নিয়ে বিপাকে পড়েন রপ্তানিকারকেরা। তাঁদের জন্য স্বস্তির খবর দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রপ্তানিকারকদের ১০ দিন এমন ভোগান্তি দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশ এখন বলছে, বন্দরে আটকে থাকা কাঁচা পাট রপ্তানি করা যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৮ সেপ্টেম্বর এক পরিপত্র জারি করে বলেছিল, এখন থেকে কাঁচা পাট রপ্তানি করতে হবে সরকারের অনুমতি নিয়ে। এ পরিপত্র জারির পর রপ্তানির সব ধাপ শেষ করা কাঁচা পাটকেও আটকে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কাঁচা পাট রপ্তানিকারকেরা তখন হঠাৎ বিপাকে পড়েন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি ও তাৎক্ষণিক প্রভাবগুলো কী হবে, তা বিবেচনায় না নিয়েই ৮ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনটি জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এ কারণে বন্দরের জরিমানা ও বাড়তি ট্রাকভাড়া দিতে হয়েছে তাঁদের। প্রায় ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি কাঁচা পাটের চালান আটকে ছিল।

এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সময়মতোই পদক্ষেপ নিয়েছি। সমস্যার সমাধান হয়েছে।’

রপ্তানিকারকেরা অবশ্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের শরণাপন্ন হলে তিনি এতে সাড়া দেন। রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ চিঠির মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গেল। আমরা এখন বন্দরগুলোকে বলে দেব।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, আগের পরিপত্র অনুযায়ী কাঁচা পাট রপ্তানিতে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। যেসব চালানে কাঁচা পাট রপ্তানির উদ্দেশ্যে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাহাজীকরণ বা শিপিং বিল দাখিল করা হয়েছে, সেসব চালান উল্লিখিত পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) যৌথভাবে গত ২৫ আগস্ট বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছে একটি আবেদন করে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা পাট রপ্তানিতে সরকারের অনুমতির বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল।

কত কাঁচা পাট রপ্তানি হয়

বিজেএসএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে ৬০ লাখ বেল। পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ ১৩টি দেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করা হয়েছে। ওই অর্থবছরে কাঁচা পাট রপ্তানি হয় ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বা ১৬ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ৯ কোটি ডলারের বেশি আয় আসে ভারত থেকে।

বিজেএসএ সভাপতি তাপস প্রামাণিক এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব প্রক্রিয়া শেষ করে কাঁচা পাট রপ্তানির শেষ মুহূর্তে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জন্য এ চিঠি ইতিবাচক হয়েছে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানাই যে তারা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে।’

বিজেএমএ ও বিজেএসএর আবেদনে বলা হয়েছিল, বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুমে প্রতি মণ পাটের দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। অথচ আগের বছরগুলোতে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা। পাটশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল কাঁচা পাট। এই কাঁচা পাটের অভাবে কারখানাগুলো প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পারে না। মাঝখানে সুযোগ নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

বন্দরে কাঁচা পাট নিয়ে আটকে থাকা রপ্তানিকারক শামীম আহমেদ বিষয়টি নিয়ে আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যানকে যে চিঠি আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিল, তা ৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রেই উল্লেখ করতে পারত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে ১০ দিন ধরে আমরা বন্দরকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি এবং বাড়তি গাড়িভাড়া বহন করছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৮ স প ট ম বর প রথম আল ক এনব আর র পর প র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ