চিকিৎসকেরা ভালোভাবে রোগের কথা না শুনেই ব্যবস্থাপত্র লেখেন এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দেন জা‌নি‌য়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তা‌দের উদ্দেশে ব‌লে‌ছেন, “অনর্থক পরীক্ষার এই অত্যাচার বন্ধ করেন। মানুষ অনেক গরিব। বড়লোকদের গলা কাটেন সমস্যা নাই। গরিব রোগীদের ১৪-১৫টি টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করান।”

শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ স্বাস্থ্য সহকারী সায়েদুর রহমান।

আরো পড়ুন:

প্রিজন সেল থেকে পালানোর ৬ দিন পর গ্রেপ্তার

শ্রেণিকক্ষে বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালে

হাসপাতালে নিজে ভালো সেবা পেলেও চিকিৎসকদের বিষয়ে বেশ কিছু সাধারণ অভিযোগ প্রায়ই শোনেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

রোগীদের যেন চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে না হয়, তেমন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “দেশের কোনো রোগীই বিদেশে যেতে চান না। ভারতে-ব্যাংককে যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে যান, তারা অন্য কোনো উপায় না পেয়ে যান। দেশে সেবা পেলে কখনোই রোগীরা বিদেশে যাবেন না।”

“এতে চিকিৎসকদের নয়, দেশের লাভ হবে। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে যেন রোগীরা চিকিৎসা নিতে বিদেশে না যান, তেমন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।”

রোগীদের কেন নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলা হবে-এমন প্রশ্ন তুলে আসিফ নজরুল বলেন, “পৃথিবীতে কোন জায়গায় হসপিটালে, প্রাইভেট ক্লিনিকে সব সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট টাইম থাকে ডাক্তারের? আপনারা ওষুধ কোম্পানির দালাল? এ দেশে বড় বড় হসপিটালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের?”

স্বাস্থ্য খাতকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ স্বাস্থ্য সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, “দেশের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ এবং চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়ার যে প্রবণতা, তা দূর করতে বেসরকারি খাতকে সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে। সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ না করলে স্বাস্থ্য সেবাকে পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিপুল বিনিয়োগের বিপরীতে যুক্তিসঙ্গত মুনাফা থাকতে হবে। তবে অন্যায় মুনাফা করা বন্ধ হওয়া দরকার।”

সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষাসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের একই মান নিশ্চিত করার জন্য সরকার হেলথ ফ্যাসিলিটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে বলে জানান সায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, “দেশের নাগরিকদের একই মানের সেবা দিতে যা যা প্রয়োজন, সে উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএইচসিডিওএর সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বিপিএইচসিডিওএ সদস্য না হলে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স পুনর্নবায়ন হবে না-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা সরকার বাস্তবায়ন করলে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে বিপিএইচসিডিওএ সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।”

একই সঙ্গে বিপিএইচসিডিও এর অনেক সদস্য মানহীন প্রতিষ্ঠার গড়ে তুলেছেন উল্লেখ করে তিনি তাদের সতর্ক করেন।

বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বাজার হারাচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানান একজন চিকিৎসক।

স্বাগত বক্তব্যে বিপিএইচসিডিওএর সাধারণ সম্পাদক এ এম শামীম বলেন, “টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারছেন না, এমন রোগীদের জন্য আগামী এক বছর ২৫ থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ করবেন তারা।”

এ সময় ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় চিকিৎসক বা হাসপাতালে মালিকদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা বা গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “সেবা দিতে গেলে কিছু অভিযোগ থাকবে। তবে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিলে কোনো আপত্তি নেই।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিপিএইচসিডিও এর নতুন কমিটির সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এ বি এম হারুন।

এ সময় আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো.

মাহবুবুর রহমান, অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক তালহা ইসমাইল বারী প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট ব প এইচস ড ও ন উপদ ষ ট অন ষ ঠ ন ব সরক র র রহম ন ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আঁকিবুঁকি আর নয়: ভারতে চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত

কি–বোর্ডে লেখালেখির যুগে এসে হাতের লেখার গুরুত্ব কি এখনো আছে? ভারতের আদালতের মতে, হ্যাঁ, যদি লেখক হন একজন চিকিৎসক।

ভারতসহ সারা বিশ্বেই চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে রসিকতা চলে। বলা হয়, তাঁদের লেখা শুধু ফার্মেসির কর্মীরাই বুঝতে পারেন। তবে সম্প্রতি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তাঁদের আদেশে চিকিৎসকদের হাতের লেখা স্পষ্ট করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, পাঠযোগ্য চিকিৎসা–নির্দেশনা একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, এটি অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

তবে অবাক হলেও সত্য, হাতের লেখার কোনো সম্পর্ক ছিল না, এমনই একটি মামলায় এ রায় দিয়েছেন আদালত। একজন নারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন। বিচারপতি জশগুরপ্রীত সিং পুরি ওই ব্যক্তির জামিন আবেদনের শুনানি করছিলেন।

নারীর অভিযোগ ছিল, আসামি সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। ভুয়া সাক্ষাৎকারও নেন এবং তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালান।
আসামি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক হয় এবং অর্থ নিয়ে বিবাদ থেকে এ মামলা করা হয়েছে।

বিচারপতি পুরি জানান, তিনি যখন ওই নারীর চিকিৎসা–সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখেন, তখন সেটি একেবারেই দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন একজন সরকারি চিকিৎসক।

রায়ে আদালত বলেছেন, পাঠযোগ্য চিকিৎসা–নির্দেশনা একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, এটি অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

‘এমনকি একটি শব্দ বা অক্ষরও পাঠযোগ্য ছিল না। বিষয়টি আদালতের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে’, রায়ে লিখেছেন বিচারপতি।

বিবিসি যে রায়ের অনুলিপি দেখেছে, তাতে সেই প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের দুই পাতার প্রেসক্রিপশন রয়েছে। প্রেসক্রিপশনের লেখা এতটাই অস্পষ্ট যে কিছুই বোঝা যায় না।

আরও পড়ুনপ্রেসক্রিপশন পড়ার উপযোগী করার বিষয়ে নির্দেশ০৯ জানুয়ারি ২০১৭

বিচারপতি পুরি লিখেছেন, ‘প্রযুক্তি ও কম্পিউটার এত সহজলভ্য হওয়ার সময়ে এসে সরকারি চিকিৎসকেরা এখনো এমন প্রেসক্রিপশন হাতে লিখছেন, যা হয়তো শুধু কিছু ফার্মাসিস্টই পড়তে পারেন—এটি বিস্ময়কর।’

আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, মেডিকেল কলেজের পাঠ্যক্রমে হাতের লেখা উন্নত করার পাঠ যুক্ত করতে। সঙ্গে দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন চালুর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত। তত দিন সব চিকিৎসককে বড় হাতের অক্ষরে স্পষ্টভাবে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রযুক্তি ও কম্পিউটার এত সহজলভ্য হওয়ার সময়ে এসে সরকারি চিকিৎসকেরা এখনো এমন প্রেসক্রিপশন হাতে লিখছেন, যা হয়তো শুধু কিছু ফার্মাসিস্টই পড়তে পারেন—এটি বিস্ময়কর।জশগুরপ্রীত সিং পুরি, ভারতের হাইকোর্টের বিচারপতি

ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সভাপতি দিলীপ ভানুশালী বিবিসিকে বলেন, সমস্যার সমাধানে তাঁরা সহায়তা করতে ইচ্ছুক। আইএমএর সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।

ভানুশালী বলেন, শহর ও বড় নগরে অনেক চিকিৎসক ইতিমধ্যে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনে চলে গেছেন। তবে ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে এখনো স্পষ্ট করে লেখা প্রেসক্রিপশন পাওয়া খুবই কঠিন।

আরও পড়ুন'প্রেসক্রিপশন লিখুন বড় হাতের অক্ষরে'১৩ জুন ২০১৫

‘সবাই জানেন, অনেক চিকিৎসকের হাতের লেখা খারাপ। এর প্রধান কারণ, তাঁরা অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকেন, বিশেষ করে ভিড়ে ঠাসা সরকারি হাসপাতালে’, বলেন ভানুশালী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন ভুল–বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি করে এবং এর ফল ভয়াবহ হতে পারে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আঁকিবুঁকি আর নয়: ভারতে চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত