অনর্থক স্বাস্থ্য পরীক্ষার অত্যাচার বন্ধ করুন: আসিফ নজরুল
Published: 16th, August 2025 GMT
চিকিৎসকেরা ভালোভাবে রোগের কথা না শুনেই ব্যবস্থাপত্র লেখেন এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দেন জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তাদের উদ্দেশে বলেছেন, “অনর্থক পরীক্ষার এই অত্যাচার বন্ধ করেন। মানুষ অনেক গরিব। বড়লোকদের গলা কাটেন সমস্যা নাই। গরিব রোগীদের ১৪-১৫টি টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করান।”
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ স্বাস্থ্য সহকারী সায়েদুর রহমান।
আরো পড়ুন:
প্রিজন সেল থেকে পালানোর ৬ দিন পর গ্রেপ্তার
শ্রেণিকক্ষে বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
হাসপাতালে নিজে ভালো সেবা পেলেও চিকিৎসকদের বিষয়ে বেশ কিছু সাধারণ অভিযোগ প্রায়ই শোনেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
রোগীদের যেন চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে না হয়, তেমন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “দেশের কোনো রোগীই বিদেশে যেতে চান না। ভারতে-ব্যাংককে যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে যান, তারা অন্য কোনো উপায় না পেয়ে যান। দেশে সেবা পেলে কখনোই রোগীরা বিদেশে যাবেন না।”
“এতে চিকিৎসকদের নয়, দেশের লাভ হবে। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে যেন রোগীরা চিকিৎসা নিতে বিদেশে না যান, তেমন চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।”
রোগীদের কেন নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলা হবে-এমন প্রশ্ন তুলে আসিফ নজরুল বলেন, “পৃথিবীতে কোন জায়গায় হসপিটালে, প্রাইভেট ক্লিনিকে সব সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট টাইম থাকে ডাক্তারের? আপনারা ওষুধ কোম্পানির দালাল? এ দেশে বড় বড় হসপিটালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের?”
স্বাস্থ্য খাতকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ স্বাস্থ্য সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, “দেশের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ এবং চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়ার যে প্রবণতা, তা দূর করতে বেসরকারি খাতকে সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে। সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ না করলে স্বাস্থ্য সেবাকে পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিপুল বিনিয়োগের বিপরীতে যুক্তিসঙ্গত মুনাফা থাকতে হবে। তবে অন্যায় মুনাফা করা বন্ধ হওয়া দরকার।”
সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষাসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের একই মান নিশ্চিত করার জন্য সরকার হেলথ ফ্যাসিলিটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে বলে জানান সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের নাগরিকদের একই মানের সেবা দিতে যা যা প্রয়োজন, সে উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএইচসিডিওএর সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বিপিএইচসিডিওএ সদস্য না হলে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স পুনর্নবায়ন হবে না-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা সরকার বাস্তবায়ন করলে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে বিপিএইচসিডিওএ সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।”
একই সঙ্গে বিপিএইচসিডিও এর অনেক সদস্য মানহীন প্রতিষ্ঠার গড়ে তুলেছেন উল্লেখ করে তিনি তাদের সতর্ক করেন।
বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বাজার হারাচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানান একজন চিকিৎসক।
স্বাগত বক্তব্যে বিপিএইচসিডিওএর সাধারণ সম্পাদক এ এম শামীম বলেন, “টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারছেন না, এমন রোগীদের জন্য আগামী এক বছর ২৫ থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ করবেন তারা।”
এ সময় ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় চিকিৎসক বা হাসপাতালে মালিকদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা বা গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “সেবা দিতে গেলে কিছু অভিযোগ থাকবে। তবে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিলে কোনো আপত্তি নেই।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিপিএইচসিডিও এর নতুন কমিটির সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এ বি এম হারুন।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট ব প এইচস ড ও ন উপদ ষ ট অন ষ ঠ ন ব সরক র র রহম ন ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চিকিৎসকদের নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল ড্যাব
চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে আজ শনিবার এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। তারা উপদেষ্টার বক্তব্যকে চিকিৎসকদের জন্য ‘অবমাননাকর’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
প্রসঙ্গত, আজ সকালে রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বিপিএইচসিডিওএ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘পৃথিবীতে কোন জায়গায় হসপিটালে, প্রাইভেট ক্লিনিকে সব সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট টাইম থাকে ডাক্তারের?...আপনারা ওষুধ কোম্পানির দালাল? এ দেশে বড় বড় হসপিটালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের?।’
ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশীদ এবং মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আইন উপদেষ্টাকে জনস্বার্থে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়।
বিবৃতিতে ড্যাবের নেতারা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েও চিকিৎসকদের নিয়ে এমন অবমাননাকর বক্তব্য চিকিৎসকদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। এমন বক্তব্য স্বাস্থ্যসেবার প্রতি জনসাধারণের আস্থাকে সংকুচিত করে। ন্যায্য বেতন-ভাতা না পাওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত গ্রামীণ ক্লিনিক থেকে শহরের ব্যস্ততম হাসপাতালসমূহে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছেন। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শুরু করে ডেঙ্গুর প্রকোপ পর্যন্ত নানা স্বাস্থ্য সংকটে বহু চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। তবুও চিকিৎসকরা তাঁদের সেবা ও মানবিকতার পথ থেকে পিছপা হননি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে চিকিৎসকেরা আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। গণ-অভ্যুত্থানে চিকিৎসকদের এক বিশাল অবদান থাকার পরও সরকারের একজন উপদেষ্টা কর্তৃক চিকিৎসকদেরকে ‘অপমান করা এক বিরাট অন্যায়।’
গঠনমূলক সমালোচনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সৌন্দর্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে ড্যাব নেতারা বলেন, ‘তবে সেটি হতে হবে তথ্যনির্ভর ও সম্মানজনক। পুরো চিকিৎসক সমাজকে নিয়ে অযথা বদনাম করা হাজারো সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকের আত্মত্যাগকে অপমানিত করে, চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সর্বোপরি, মেধাবী তরুণদেরকে চিকিৎসাসেবার মতো মহান পেশায় আসার আগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’
এ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জনাব আসিফ নজরুলকে তাঁর বক্তব্য পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই এবং জনস্বার্থে একটি ব্যাখ্যা বা দুঃখ প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’