চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানির মামলায় আরও দুই আসামি গ্রেপ্তার, মালামাল উদ্ধার
Published: 25th, February 2025 GMT
ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার আশুলিয়ার ধানশোনা এলাকার পলাশবাড়ীর মো.
পুলিশ সুপার বলেন, আলমগীর হোসেনকে গতকাল সোমবার নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সাধুরপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আন্তজেলা ডাকাত দলের ‘মূলহোতা’। এর আগে এই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মুহিত টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদকালে তাঁর দেওয়া তথ্যানুযায়ী গতকাল সোমবার দুপুরে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে বাস ডাকাতির সময় লুট করা নগদ ৪ হাজার ২১০ টাকা ও দুটি রুপার আংটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলমগীর পুলিশকে জানান, বাসে ডাকাতির সময় লুট করা মুঠোফোন, গয়না ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ছুরি তাঁর ছোট ভাই রাজিবের কাছে রয়েছে। পরে সোমবার সন্ধ্যায় আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে রাজিব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ডাকাতি করা ১০টি মুঠোফোন, ইমিটেশনের গয়না, তিনটি ব্যাগ, তিনজন যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিন দিন পর মামলা২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আলমগীরকে সাত দিনের ও রাজিবকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ডাকাতিকালে ধর্ষণের ঘটনার কোনো তথ্য এখনো তাঁদের কাছে আসেনি। তবে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। তারপরও কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: লুট করা মুঠোফোনের বিনিময়ে গাঁজা কেনেন আসামিরা২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউনিক রোড রয়েলসের আমরি ট্রাভেলস নামে বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে ৩০–৩৫ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রীবেশী ৮–৯ জন ডাকাত অস্ত্রের মুখে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকাপয়সা, মালামাল নিয়ে নেয়। এ সময় তারা নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করে। ঘটনার তিন দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামের এক যাত্রী বাদী হয়ে মামলা করেন।
আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: টাঙ্গাইলে চারজনকে গ্রেপ্তার২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন স্বীকারোক্তি দেবেন: পুলিশ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনচলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: টাঙ্গাইলে চারজনকে গ্রেপ্তার২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর র ঘটন য় আলমগ র
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে মানুষ: মির্জা ফখরুল
জনগণ বিএনপির কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এসে ভিড় করছে লোকজন, যে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আগে তো এমপি ছিল, মেয়র ছিল, তাঁরা কথা বলতে পারত, এখন কিন্তু তারা কথা বলতে পারছে না। এই যে বিষয়টা, এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’
সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন সাধারণ চেতনার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ, আমাদের বাংলাদেশে এখন একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে যে লিবারেল ডেমোক্রেসিকে এখন কিছুটা নিচে নেমে যেতে হচ্ছে। একটু পরাজিত হতে হচ্ছে পপুলিস্টদের কাছে রিসেন্ট টাইমে। এটা বাস্তবতা। এটা কেন হচ্ছে, গবেষকেরা বলতে পারবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে মুক্তি পেয়েছি ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ কলোনি থেকে। তারপরে পাকিস্তানি গোলামি শুরু হয়, তারপর বাংলাদেশি প্রভুদের গোলামি শুরু হয়েছে। এই গোলামিতেই আছি আমরা। আমরা একটা মুক্ত সমাজ চাই, আমরা একটা মুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, আমরা মানুষের মধ্যে মানুষের ভালোবাসা তৈরি করতে চাই।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় পাঁচজন হত্যার ঘটনার স্মরণে গতকাল বুধবার বিএনপি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব। গণ–অভ্যুত্থানে স্বামী হারানো এক নারীর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সেই অনুষ্ঠানে এক মা তাঁর ১৪ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে এসে বলেন, ‘আমার স্বামীকে এখানে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমি জানি না, এই শিশুকে নিয়ে এখন কী করে বাঁচব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বোনের কথা যখন আমি শুনি, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে, আসলে রাষ্ট্রটা কী? রাষ্ট্র কার জন্য? যাঁরা এখন দায়িত্বে আছেন রাষ্ট্র পরিচালনার, তাঁরা এই এক বছরেও কি তাঁদের খুঁজে পেলেন না?’
২০২৪ সালের আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানের পর পল্টনে বিএনপির সভা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তখন আমার খুব সমালোচনা হয়েছিল। আপনারা বলেছিলেন যে বিএনপি ও মির্জা ফখরুল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এত অস্থির হয়ে গিয়েছে কেন? এখন আপনারাই বলছেন যে ব্যাপারটা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, যার শক্তি, যার ক্ষমতা, যার মালিকানা, তার হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এরই মধ্যে ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেন মির্জা ফখরুল। বাকি বিষয়েও ঐকমত্যে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি হলেও সেটার একটা সীমা থাকা দরকার বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোয় পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। সেটা না হলে এই কাদা–ছোড়াছুড়ি ভবিষ্যতে রাজনীতিকে আরও কলুষিত করে।
আলোচনা সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে নির্যাতিত পাঁচ সম্পাদককে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, উত্তরায় শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন ও জুলাই শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই বাংলাদেশ’ নামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার।