শিক্ষাবর্ষের ১ মাস ২৬ দিন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পার্বতীপুরের মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই এখনও হাতে পায়নি। ফলে বেশকিছু বিষয়ে এখনও পড়ালেখা শুরু করতে পারেনি তারা। এতে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নে জটিলতা সৃষ্টির শঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। পার্বতীপুর থেকে জানা গেছে, উপজেলার মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার ৪৬ হাজার ছাত্রছাত্রী এখনও হাতে পায়নি সব বিষয়ের বই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুধু ৮ম এবং মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির পুরো সেট বই বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার ১১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। খুলবে ৯ এপ্রিল। এর দুই মাস পরেই ২৪ জুন শিক্ষার্থীদের বসতে হবে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার টেবিলে। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন বন্ধ বাদ দিয়ে মাত্র ৩৬ দিন ক্লাস করার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। এতে ফল বিপর্যয়ের আশঙ্কায় হতাশ তারা।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, পার্বতীপুরে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১৩টি। মাধ্যমিক স্তরের ৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শুধু বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই সরবরাহ করা হয়েছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, উচ্চতর গণিত, বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র, কৃষিশিক্ষা বই পায়নি।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, বাংলা দ্বিতীপত্র, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও শারীরিক শিক্ষা বই পায়নি। মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও ৭ম ও নবম শ্রেণির অধিকাংশ শিক্ষার্থী বই পায়নি।
অভিভাবক আবু দাউদ জানান, তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সে সব বিষয়ে এখনও বই পায়নি। এদিকে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। কবে বই দেওয়া হবে, কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না। অনেকেই পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছে। তবে তা ব্যয়বহুল; শিক্ষার্থীরাও এভাবে পড়তে অভ্যস্ত না। সময়মতো বই না পাওয়ায় শেষ সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর
চাপ বেড়ে যাবে।
পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মকলেছুর রহমান বলেন, এখনও বেশির ভাগ বই হাতে পাওয়া যায়নি। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা নেট থেকে ডাউনলোড করে ক্লাসে পড়াচ্ছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বই না থাকায় তাদের ক্লাসে আগ্রহ কম।
একাডেমিক সুপারভাইজার বিভাষ চন্দ্র বর্মন বলেন, এখনও অনেক বই আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। যেটুকু এসেছে তা চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় বিতরণ করা যাচ্ছে না। অবশিষ্ট বই পেলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বই
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪