ইসরায়েল ১৫ মাস ধরে মিথ্যা প্রচারণার মধ্য দিয়ে গণহত্যার পক্ষে পশ্চিমাদের সমর্থন টিকিয়ে রেখেছিল। দেশটি হামাসের যুদ্ধাপরাধ, যেমন শিশুর শিরশ্ছেদ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের মতো কথা বললেও কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। বিপরীতভাবে ইসরায়েল হামাসের প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে গিয়ে গুরুতর যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) অনুসারে, ইসরায়েলি নেতারা একটি নতুন যুদ্ধের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছেন।

গণহত্যা আবার শুরু করার ন্যায্যতা দিতে তাদের নতুন করে মিথ্যার দরকার পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো পশ্চিমা এস্টাবলিশমেন্ট মিডিয়া সক্রিয় সহায়তা করছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে জিম্মিদের নিয়মিত বিনিময় ব্যবহার করে নৈতিক উচ্চ ভূমি দখল করতে হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষ একটি অনুমানযোগ্য প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের কাছে আবার সব ধরনের কার্ড আছে। তবুও পাথরের মতো কঠিন পশ্চিমা সমর্থন এবং জনসংযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা যুদ্ধে জয়ী হতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তিকে ‘অপমানজনক’ ও ‘নিন্দনীয় অনুষ্ঠান’ বলেছে।

বিবিসিসহ পশ্চিমা মিডিয়া ইসরায়েলকে প্রতিধ্বনিত করে বলেছে, ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ১৩০ জনের হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলিদের নরহত্যার চেয়ে গুরুতর আইনি লঙ্ঘন ছিল। মিডিয়া একইভাবে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের নতুন পদক্ষেপকে হালকাভাবে তুলে ধরেছে। হাজার হাজার বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে; পুরো সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়া পরিসরগুলো লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে, এই যুদ্ধাপরাধও যুদ্ধবিরতি চুক্তির চরম লঙ্ঘন।

এখন নেতানিয়াহু পরের সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্ব শুরু করার আগে নতুন চক্রান্ত হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি উড়িয়ে দেওয়ার অজুহাত হিসেবে ইসরায়েলি বন্দি ও হামাসের মধ্যে আপাত স্বস্তিদায়ক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েছেন। যখনই ইসরায়েল গাজা থেকে নিজেদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেবে এবং এর পুনর্গঠনের অনুমতি দেবে তখনই দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি বন্দিরা নেতানিয়াহু ও তাঁর সংকীর্ণমনা ক্ষমাপ্রার্থীদের জন্য কেবল তখনই উপযোগী, যখন তারা গণহত্যাকে ন্যায়সংগত করে এমন বয়ান তৈরি করতে সহায়তা করে। ট্রাম্পের কাছে কোণঠাসা হয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নির্বিচারে গাজার শিশুদের পুনরায় হত্যা শুরুর আগে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় আসতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্তত কিছু ব্যাপার তুলে আনতে গিয়ে তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছিল, যাতে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর নিজের জনসাধারণকে শান্ত রাখা যায়। 

তিনি বারবার স্পষ্ট করেছেন, প্রথম পর্যায়ে প্রধান জিম্মি বিনিময়ের পর স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে অগ্রসর হওয়ার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রে ইসরায়েলি বন্দিদের গুরুত্ব শুধু গণহত্যার পথ উন্মোচন করা। অন্যদিকে হামাসের কাছে বন্দিদের মুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র পথটি ব্যবহার করার সব প্রণোদনা রয়েছে। এতে বোঝানো যায়, এটি ইসরায়েলি-প্রকৌশলী ও পশ্চিমা প্রবর্তিত মতবাদ দ্বারা ভীতিগ্রস্ত নয়। 

এতে আশা করা যায়, তারা ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব সত্ত্বেও এখনও গাজার দায়িত্বে কতটা বহাল।
হামাসের ইসরায়েলি বন্দিদের সঙ্গে যুক্তিসংগত সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণ রয়েছে। অন্তত বিদেশি জনসাধারণের কাছে তার ভাবমূর্তি নরম করার জন্য নয়, বরং নেতানিয়াহু দ্বারা পুনরায় গণহত্যা চালানো কঠিন করে তোলার জন্য। ইসরায়েলের অবশ্য এমন কোনো পারস্পরিক প্রণোদনা নেই। তারা যতটা শক্তিশালী, যেটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগেও ১৭ বছরের ছিটমহল অবরোধের মাধ্যমে গাজার সব মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। এটি পছন্দমতো স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে পারে। দেশটি এমন জ্ঞানও উৎপাদন করতে পারে, পশ্চিমা মিডিয়া যা নিয়ে কখনও প্রশ্ন তুলবে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের কাছে মুক্ত ফিলিস্তিনি বন্দিরা তাদের নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের যেসব সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা কেবল উপেক্ষা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষে বিভিন্ন অবস্থান থাকা সত্ত্বেও পার্থক্যমূলক বাস্তবতা এতটাই তীব্র যে, ইসরায়েল তবুও প্রচার যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। এ কারণেই নেতানিয়াহু তাঁর প্রয়োজনের চেয়ে এক দিন বেশি বন্দি বিনিময় চালিয়ে যেতে আগ্রহী নয়। সমস্যা হলো, হামাসের মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি বেশির ভাগই তাঁর উদ্দেশ্যে কাজ করছে না। এতে তারা বাধা দিচ্ছে।
ইসরায়েলপন্থি গোষ্ঠীর মধ্যে যারা গাজার শিশুদের হত্যায় যুক্তি খুঁজে পান, তারা অবশ্যম্ভাবীভাবে তৎক্ষণাৎ রাগ ঢেলে দেওয়ার মতো কাজ করছেন। আর বিবিসির ভূমিকা গুহা থেকে বিষয়টি উদোম করতে খানিক ধাক্কা দেওয়ার মতো। 
ইসরায়েলপন্থি লবি গোষ্ঠীগুলো যা ভয় পায় তা হলো, ফিলিস্তিনিদের কোনো প্রতিকৃতি, যা ইসরায়েলি প্রচারের বিরোধিতা করে। যেমন গাজার প্রত্যেক ব্যক্তি, এমনকি শিশুরাও সহিংস; যারা মৃত্যু ও ধ্বংস তাদের নিজের মাথায় নিয়ে এসেছে।

জোনাথন কুক: ইসরায়েল-ফিলিস্তিনবিষয়ক লেখক; 
মিডল ইস্ট আই থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণহত য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান

ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা ও নিষ্ঠুরতম বর্বরতা থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। 

আজ বুধবার ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’

ফিলিস্তিন সংকট সমাধান: সবার দৃষ্টি জাতিসংঘের বিশ্ব সম্মেলনে

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন পুর্নব্যক্ত করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনের একমাত্র পথ হিসেবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। 

গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের নেতৃত্বে গাজা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে প্রস্তত রয়েছে। তিনি গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বাধা দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা সর্বাত্বকভাবে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।

২০২৩ সালের অক্টোবরের পর হতে গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি আক্রমণের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ এবং একটি স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম করতে জাতিসংঘের সদস্যদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করার জন্য ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘জাতিসংঘ হাইলেভেল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর দ্য পিসফুল সেটেলমেন্ট অব দ্য কোয়েশ্চেন অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য টু-স্টেট সল্যুশন’ শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এতে বাংলাদেশসহ ১১৮টি দেশের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছে।

ঢাকা/হাসান/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
  • গণহত্যার বিচারের পর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি রেজাউল করীমের
  • শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও তা করে নাই: আসিফ নজরুল