ফিলিস্তিনে গণহত্যার দ্বিতীয় ধাপ?
Published: 27th, February 2025 GMT
ইসরায়েল ১৫ মাস ধরে মিথ্যা প্রচারণার মধ্য দিয়ে গণহত্যার পক্ষে পশ্চিমাদের সমর্থন টিকিয়ে রেখেছিল। দেশটি হামাসের যুদ্ধাপরাধ, যেমন শিশুর শিরশ্ছেদ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের মতো কথা বললেও কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। বিপরীতভাবে ইসরায়েল হামাসের প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে গিয়ে গুরুতর যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) অনুসারে, ইসরায়েলি নেতারা একটি নতুন যুদ্ধের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছেন।
গণহত্যা আবার শুরু করার ন্যায্যতা দিতে তাদের নতুন করে মিথ্যার দরকার পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো পশ্চিমা এস্টাবলিশমেন্ট মিডিয়া সক্রিয় সহায়তা করছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে জিম্মিদের নিয়মিত বিনিময় ব্যবহার করে নৈতিক উচ্চ ভূমি দখল করতে হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষ একটি অনুমানযোগ্য প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের কাছে আবার সব ধরনের কার্ড আছে। তবুও পাথরের মতো কঠিন পশ্চিমা সমর্থন এবং জনসংযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা যুদ্ধে জয়ী হতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তিকে ‘অপমানজনক’ ও ‘নিন্দনীয় অনুষ্ঠান’ বলেছে।
বিবিসিসহ পশ্চিমা মিডিয়া ইসরায়েলকে প্রতিধ্বনিত করে বলেছে, ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ১৩০ জনের হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলিদের নরহত্যার চেয়ে গুরুতর আইনি লঙ্ঘন ছিল। মিডিয়া একইভাবে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের নতুন পদক্ষেপকে হালকাভাবে তুলে ধরেছে। হাজার হাজার বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে; পুরো সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়া পরিসরগুলো লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে, এই যুদ্ধাপরাধও যুদ্ধবিরতি চুক্তির চরম লঙ্ঘন।
এখন নেতানিয়াহু পরের সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্ব শুরু করার আগে নতুন চক্রান্ত হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি উড়িয়ে দেওয়ার অজুহাত হিসেবে ইসরায়েলি বন্দি ও হামাসের মধ্যে আপাত স্বস্তিদায়ক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েছেন। যখনই ইসরায়েল গাজা থেকে নিজেদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেবে এবং এর পুনর্গঠনের অনুমতি দেবে তখনই দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি বন্দিরা নেতানিয়াহু ও তাঁর সংকীর্ণমনা ক্ষমাপ্রার্থীদের জন্য কেবল তখনই উপযোগী, যখন তারা গণহত্যাকে ন্যায়সংগত করে এমন বয়ান তৈরি করতে সহায়তা করে। ট্রাম্পের কাছে কোণঠাসা হয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নির্বিচারে গাজার শিশুদের পুনরায় হত্যা শুরুর আগে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় আসতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্তত কিছু ব্যাপার তুলে আনতে গিয়ে তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছিল, যাতে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর নিজের জনসাধারণকে শান্ত রাখা যায়।
তিনি বারবার স্পষ্ট করেছেন, প্রথম পর্যায়ে প্রধান জিম্মি বিনিময়ের পর স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে অগ্রসর হওয়ার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রে ইসরায়েলি বন্দিদের গুরুত্ব শুধু গণহত্যার পথ উন্মোচন করা। অন্যদিকে হামাসের কাছে বন্দিদের মুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র পথটি ব্যবহার করার সব প্রণোদনা রয়েছে। এতে বোঝানো যায়, এটি ইসরায়েলি-প্রকৌশলী ও পশ্চিমা প্রবর্তিত মতবাদ দ্বারা ভীতিগ্রস্ত নয়।
এতে আশা করা যায়, তারা ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব সত্ত্বেও এখনও গাজার দায়িত্বে কতটা বহাল।
হামাসের ইসরায়েলি বন্দিদের সঙ্গে যুক্তিসংগত সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণ রয়েছে। অন্তত বিদেশি জনসাধারণের কাছে তার ভাবমূর্তি নরম করার জন্য নয়, বরং নেতানিয়াহু দ্বারা পুনরায় গণহত্যা চালানো কঠিন করে তোলার জন্য। ইসরায়েলের অবশ্য এমন কোনো পারস্পরিক প্রণোদনা নেই। তারা যতটা শক্তিশালী, যেটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগেও ১৭ বছরের ছিটমহল অবরোধের মাধ্যমে গাজার সব মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। এটি পছন্দমতো স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে পারে। দেশটি এমন জ্ঞানও উৎপাদন করতে পারে, পশ্চিমা মিডিয়া যা নিয়ে কখনও প্রশ্ন তুলবে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের কাছে মুক্ত ফিলিস্তিনি বন্দিরা তাদের নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের যেসব সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা কেবল উপেক্ষা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষে বিভিন্ন অবস্থান থাকা সত্ত্বেও পার্থক্যমূলক বাস্তবতা এতটাই তীব্র যে, ইসরায়েল তবুও প্রচার যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। এ কারণেই নেতানিয়াহু তাঁর প্রয়োজনের চেয়ে এক দিন বেশি বন্দি বিনিময় চালিয়ে যেতে আগ্রহী নয়। সমস্যা হলো, হামাসের মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি বেশির ভাগই তাঁর উদ্দেশ্যে কাজ করছে না। এতে তারা বাধা দিচ্ছে।
ইসরায়েলপন্থি গোষ্ঠীর মধ্যে যারা গাজার শিশুদের হত্যায় যুক্তি খুঁজে পান, তারা অবশ্যম্ভাবীভাবে তৎক্ষণাৎ রাগ ঢেলে দেওয়ার মতো কাজ করছেন। আর বিবিসির ভূমিকা গুহা থেকে বিষয়টি উদোম করতে খানিক ধাক্কা দেওয়ার মতো।
ইসরায়েলপন্থি লবি গোষ্ঠীগুলো যা ভয় পায় তা হলো, ফিলিস্তিনিদের কোনো প্রতিকৃতি, যা ইসরায়েলি প্রচারের বিরোধিতা করে। যেমন গাজার প্রত্যেক ব্যক্তি, এমনকি শিশুরাও সহিংস; যারা মৃত্যু ও ধ্বংস তাদের নিজের মাথায় নিয়ে এসেছে।
জোনাথন কুক: ইসরায়েল-ফিলিস্তিনবিষয়ক লেখক;
মিডল ইস্ট আই থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন ফ্রিল্যান্সাররা। তবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে না থাকায় পারিশ্রমিক পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। তাই বাংলাদেশে পেপ্যালসহ বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে দ্রুত চালুর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ও আইটি প্রফেশনাল কমিউনিটি। এ বিষয়ে সরকারের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ফ্রিল্যান্সার ও আইটি পেশাজীবীরা বলেন, বিশ্বজুড়ে যখন ফ্রিল্যান্স কাজের মাধ্যমে আয় বাড়ছে, তখন পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্যার কারণে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার ও আইটি উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা প্রতিবছর বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে পেপ্যাল, ওয়াইস, স্ট্রিপের মতো জনপ্রিয় পেমেন্ট সেবা চালু হয়নি। ফলে তরুণ উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সাররা আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছেন।
ফ্রিল্যান্সার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আইটি ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছেন। ৩ দশমিক ২ শতাংশ বৈশ্বিক বাজার শেয়ার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং বাজার। এ কারণে গেটওয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখনও নানা জটিলতায় দেশে পেপ্যালের মতো আন্তর্জাতিক গেটওয়ে চালু হচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে এসব গেটওয়ে চালু আছে।
ফ্রিল্যান্সার আতাউর রহমান বলেন, পেমেন্ট গেটওয়ে না থাকায় ক্রেতাদের ভিন্ন মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছে অন্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে স্টারলিংক অনুমোদন পেয়েছে। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গেটওয়েও বাংলাদেশে চালু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার এমরাজিনা ইসলাম, এইচএম ওসমান শাকিল, গোলাম কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান, সুমন সাহা, মিনহাজুল আসিফ, রাসেল খন্দকার, সাজিদ ইসলাম প্রান্তসহ দেড় শতাধিক আইটি ও ফ্রিল্যান্স পেশাজীবী।