আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে ছয় বছরের শিশুকে আমবাগানে নিয়ে যান বিক্রেতা। সেখানে তিনি শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। চিৎকার দিলে শিশুটির নাক-মুখ চেপে হত্যা করেন। এরপর সেই লাশ বস্তায় ভরে পুকুরের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই আইসক্রিম বিক্রেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার একটি গ্রাম থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার রাত থেকে সে নিখোঁজ ছিল। পরদিন বুধবার অপহরণ মামলা করে শিশুটির পরিবার। ওই মামলায় আইসক্রিম বিক্রেতা সাব্বির হোসেনকে (২৫) গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

শিশুটির পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে শিশুটির বাড়ির পাশে ওয়াজ মাহফিল চলছিল। খালাতো বোনের সঙ্গে সেদিন বিকেলে বের হয় সে। মাহফিলকে কেন্দ্র করে পাশেই খেলনা, খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী দোকান বসেছিল। খালাতো বোন চলে আসতে চাইলে সেখানে থাকার বায়না করে শিশুটি। একপর্যায়ে তাদের এক বড় ভাইয়ের কাছে শিশুটিকে রেখে চলে আসে তার বোন। সেখান থেকে নিখোঁজ হয় শিশুটি।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে শিশুটির স্বজনেরা জানতে পারেন, শেষবার তাকে আইসক্রিম বিক্রেতা সাব্বিরের সঙ্গে দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাতেই এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সাব্বির সন্দেহজনক জবাব দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে পিটুনি দেন এলাকার লোকজন। পরে সাব্বিরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন আজ শুক্রবার সকালে বলেন, অপহরণ মামলায় সাব্বিরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে তাঁকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। গতকাল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে শিশুটিকে হত্যা এবং হত্যার পর লাশ গুমের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গতকাল রাত দুইটার দিকে একটি পুকুরের কচুরিপানার নিচ থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাব্বির ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য লাশটি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সাব্বিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে শিশুটির চাচা বলেন, ‘শিশুটির বাবা বিদেশে থাকে। ওর মা প্রায় অচেতন হয়ে আছে। বাচ্চা একটা মেয়ের সঙ্গে এমন নির্মমতা হলো। আসামি সাব্বিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ এদিকে শিশুটিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যার ঘটনাটি জানতে পেরে আজ ভোরে সাব্বিরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের পর ঘরের মালামাল বাইরে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইসক র ম

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গভীর রাতে থানায় গিয়ে স্বামীর আত্মসমর্পণ, পরে ভাড়া বাসা থেকে স্ত্রীর লাশ উদ্ধার
  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা