ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন প্রত্যাহার
Published: 1st, March 2025 GMT
এক সপ্তাহ ধরে চলা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকেরা। এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কাউকে চিকিৎসকের স্বীকৃতি না দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। দাবির সঙ্গে সংহতি রেখে একই দিন থেকে ক্লাস বর্জনের কর্মসূচির ডাক দেন চমেকের শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আন্দোলন ও কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার দুপুরে ‘চমেক শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকবৃন্দ’ ব্যানারে ক্যাম্পাসে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ওই সমাবেশ থেকে কর্মবিরতি ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেন ইন্টার্ন চিকিৎসক আহমদ হাসনাইন ও শিক্ষার্থী মো.
কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা আজ, নাকি আগামীকাল রোববার সকালে কাজে যোগ দেবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সমাবেশের পর এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
সমাবেশে চমেক অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দীন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যতটা জানি, সরকারিভাবে বিষয়গুলো মীমাংসার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে ১২ মার্চ আদালতের একটি রায় আসার কথা রয়েছে। তোমরা অন্তত ১২ তারিখ পর্যন্ত কর্মবিরতিটা প্রত্যাহার করো। আর ছাত্ররা ক্লাসে যাও। এরপর কী রায় আসে, তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নাও। যদি সমাধান না হয়, তখন আমরাও এই আন্দোলনের সঙ্গে থাকব।’
হাসপাতালের পরিচালক মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, বিএমডিসির নিবন্ধন ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারেন না। চলমান সংকটের বিষয়ে মন্ত্রণালয় বিএমডিসিকে দায়িত্ব দিয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগসহ নানা বিষয়ে মন্ত্রণালয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসক আহমদ হাসনাইন বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় ও স্যারদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। ১২ তারিখে রায় নিয়ে যেন ছিনিমিনি করা না হয়। যদি দাবি আদায় না হয়, তাহলে আবার আন্দোলন শুরু হবে।’
চমেকের শিক্ষার্থী মো. সাকিব হোসেন বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা ১২ তারিখ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হলো। যদি আদালতের রায় পক্ষে না আসে এবং অন্য দাবিগুলো পূরণে যদি আন্তরিক না হয়, তাহলে আবার আন্দোলন শুরু হবে। আগামীকাল থেকে ক্লাসে ফিরবেন বলে জানান সাকিব।
চমেক হাসপাতালে প্রায় ১৮০ ইন্টার্ন চিকিৎসক পালা করে মূল চিকিৎসকদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। টানা কর্মসূচির কারণে হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল স্থায়ী চিকিৎসকদের। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীরা এতে ভোগান্তির শিকার হন। ডাকাডাকি করেও চিকিৎসকদের দেখা মিলছিল না।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ চিকিৎসক লিখতে পারবেন না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বিএমডিসি নিবন্ধন শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সাল থেকে সরকার ম্যাটসদের (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেওয়া শুরু করেছে, যা বন্ধ করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসকদ র ব এমড স
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’