ঢাকা ওয়াসায় ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের ফেজ-৩’ এর আওতায় সায়দাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ফেজ-৩) প্রকল্পের সংগ্রহ- কম্পোনেন্ট ১- ইনটেক, কাঁচা জল পাম্পিং স্টেশন (আরডব্লিউপিএস) এবং কাঁচা জলের পাইপলাইন (আরডব্লিউপি) কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৫০৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪২১ টাকা।

সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক ঢাকা শহরে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি জনসাধারণের জন্য পানি সরবরাহ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে মোট পানি সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে এবং প্রায় ৩০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর প্রতিবছর প্রায় ২-৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে; যা টেকসই উন্নয়নের সাথে সাংঘর্ষিক। 

২০৩০ সালের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সরবরাহের পরিমাণ ৭০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২, পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়বানাধীন রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায়, ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী জনসাধারণের জন্য একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩)’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের প্যাকেজ-১ এর আওতায় ইনটেক, দৈনিক ৯৫.

০০ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পিং স্টেশন এবং ২৭ কি. মি. দীর্ঘ ২টি অপরিশোধিত পানির পরিচালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, প্যাকেজ-২ এর আওতায় দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতা সম্পন্ন পানি শোধনাগার ও স্লাজ শোধনাগার এবং প্যাকেজ-৩ এর আওতায় ৩৫০ মিমি হতে ২০০০ মিমি ব্যাসের প্রায় ৫৪ কিলোমিটার পরিশোধিত পানির বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের মূল ডিপিপি'তে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫৯৭.৩৬০৫ কোটি এবং ১ম সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭৫১৮.০২৭৫ কোটি টাকা; যার মধ্যে জিওবি খাতে ২৬২৫.২৩ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য খাতে ৪৮৬২.৭৯ কোটি টাকা ও ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব তহবিল খাতে ৩০.০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রকল্পটির অনুমোদন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর তারিখে প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর তারিখে প্রকল্পটির ১ম সংশোধনী একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রকল্পটির প্রশাসনিক আদেশ জারী করা হয়।

প্রকল্পের অর্থায়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও ফ্রেন্স উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এজেন্সিজ ফ্রান্সাইজ ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) এর সঙ্গে ২০১৮ তারিখে ১৬ মে তারিখে ১১৫ মিলিয়ন ইউরোর, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) এর সঙ্গে ২০১৮ সালের ৪ জুন তারিখে ৪০ মিলিয়ন ইউরোর, জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কেআইডব্লিউ এর সঙ্গে ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে ৯০ মিলিয়ন ইউরোর ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর পাশাপাশি ডানিডা সাসটেইনাবল ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার ফ্যাইন্যান্স (ডিএসআইএফ) এর সঙ্গে ২০১৯ ০৩ অক্টোবর তারিখে ১৮৮ মিলিয়ন ইউরোর জি টু জি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ঋণচুক্তিগুলোর অতিরিক্ত আরও ২০০ মিলিয়ন ইউরো এএফডি থেকে, ৯০ মিলিয়ন ইউরো ইবিআই থেকে, ৭০ মিলিয়ন ইউরো কেএফডব্লিউ থেকে এবং ১১২ মিলিয়ন ইউরো ডিএসআইপি থেকে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য যে, প্যাকেজ-১ এর ব্যয়ভার এএফডি,ইবিআই, কেআইডব্লি  প্রদত্ত ঋণ সহায়তা থেকে নির্বাহ করা হবে।

ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এএফডি’র প্রকিউরমেন্ট গাইড লাইন প্যাকেজ-১ এর ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রণীত প্রিকোয়ালিফিকেশন ডকুমেন্টের উপর এএফডি’র অনাপত্তি ভিত্তিতে ২০২২ সালের ১৮ মার্চ তারিখে প্রিকোলিফিকেশন বিড আহবান করা হয়। দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ, মুল্যায়ন ও বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মুট ম্যাকডোনাল্ড লিমিটেডকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ করা হয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়)।

বর্ণিত প্যাকেজের প্রিকোয়ালিফিকেশন বিডের  বিপরীতে মোট ১৭ টি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিলের শেষ সময় ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। এ সময়ের মধ্যে ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রিকোয়ালিফিকেশন বিড দাখিল করে। এরমধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান নন-রেসপন্সিভ হয়। বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ ঘোষণা করা হয়।

প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে যৌথভাবে সিএমইসি-ওয়াইআরইসি-এসএমইডিআইকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেছে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। প্রকল্পে ভ্যাট ও এআইটিসহ মোট ব্যয় হবে ৫০৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪২১ টাকা।

এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স থ ন য় সরক র প রকল প ব প রকল প র সরবর হ দরপত র র জন য কর ত ক অন ম দ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।

ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’

ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।

জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প