বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে প্রতিহত করতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে ছাত্র জনতার ওপর হামলাকারী এবং একাধিক হত্যা মামলার আসামি শামীম ওসমানের সহযোগী নাসিকের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মন্ডল ও তার বড় ছেলে যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম মন্ডল অপারেশন ডেভিল হান্টের ভয়ে গাঁ ডাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এতদিন তারা জামিনে এলাকায় প্রকাশ্যে ছিলো। জামিন শেষ হলে আত্নসমর্পণ না করে গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা ও ছেলে। এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে অসংখ্য  মামলা রয়েছে। 

থানা সূত্রে জানা যায়, ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলা ও গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৭টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও সিরাজ মন্ডলের বড় ছেলে জাহিদ মন্ডলের বিরুদ্ধে সোঁনারগাও, সিদ্ধিরগঞ্জ সহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। 

জানা যায়, দেড় দশক আগে একজন রাখাল ছিলেন সিরাজ মন্ডল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রথমে সাবেক মেয়র ডা.

সেলিনা হায়াত আইভী ও পরে ২০১৫ সালে আইভীকে ছেড়ে শামীম ওসমানের হাত ধরে শুরু হয় সিরাজ মন্ডলের উত্থান।

তেল ডিপো নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীক চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নানান অপকর্মের মাধ্যমে সন্ত্রাসী  বাহিনী গড়ে তুলে এসওরোডের ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় স্বঘোষিত সম্রাট বনে যান তিনি। তেল চুরিতে বাঁধা দেয়ায় নৃশংস ভাবে পুলিশ কনস্টেবল মফিজ হত্যা মামলায় চার্জশিট ভুক্ত আসামি সিরাজুল ইসলাম মন্ডল।আওয়ামী লীগ আমলে তিনি বনে গেছেন শত কোটি টাকার মালিক।

সারাদেশে তার ১২ টি তেল পাম্প, জাহাজসহ অসংখ্য ব্যবসা রয়েছে। গত ৫ আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলেও বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করায় তার সাম্রাজ্য ছিল বহাল তবিয়তে। বর্তমানে যুবদলের এক নেতা তার ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে এলাকা ছাড়েন সিরাজ মন্ডল। পরে গত জানুয়ারিতে জামিনে এসে এলাকায় প্রকাশ্যেই ছিলেন সিরাজ মন্ডল।

জামিনে এসে তিনি তার বিভিন্ন সম্পত্তি বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে। মূলত দুর্নীতি দমন কমিশন  (দুদক) এর মামলার ভয়ে সম্পত্তি বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন সিরাজ মন্ডলের ঘনিষ্ঠজনরা। 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টের কঠোর অভিযান চলমান রয়েছে। সিরাজ মন্ডলসহ সকল আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে। আইনের হাত থেকে কেউ ছাড় পাবে না।

এর আগে, গত ১৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি ও তার ছেলে মশিউর রহমান  বাবুইকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ শ ম ম ওসম ন ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ ছ ন বল

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ