Samakal:
2025-05-01@00:24:15 GMT

স্পিন শক্তি স্পিন বল

Published: 9th, March 2025 GMT

স্পিন শক্তি স্পিন বল

ভারত কি একটু দেরিতে নিজের বোলিং শক্তি টের পেল? এমন মনে হওয়ার কারণ, শেষ গ্রুপ ম্যাচে এসে তারা চার স্পিনার নামায়। এর পর সেমিতেও একই কম্বিনেশনে খেলেছে। ফাইনালেও যে তারা চার স্পিনার নিয়েই নামছে, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। দুবাইয়ের মন্থর পিচে নিউজিল্যান্ডও স্পিননির্ভর বোলিং আক্রমণ নিয়েই আজ নামতে যাচ্ছে। আর কিউইদের স্পিন আক্রমণও মন্দ নয়। স্পিনই ফাইনালের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।

কিউইদের বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবেই বরুণ চক্রবর্তীকে সুযোগ দেয় ভারত। ৪২ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেন মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা বরুণ। এ রহস্য স্পিনার এখন ভারতের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছেন। তাঁর অপ্রচলিত গ্রিপ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ ডেলিভারির কারণে তাঁকে খেলা বেশ কঠিন। ক্যারম বল, গুগলি, ফ্লিপারের মতো ডেলিভারির পাশাপাশি উইকেটের দুই দিকেই বেশ গতির সঙ্গে বল ঘোরাতে পারেন তিনি। তাঁর অন্তর্ভুক্তি ভারতের বোলিং আক্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। বোলিং অ্যাকশনে কোনো রকম পরিবর্তন না এনেই উইকেটের দু’দিকে বল ঘোরাতে পারেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর আরেকটি বড় অস্ত্র হলো ফ্লাইট। এ দু’জনই উইকেট টেকার। নিখুঁত লাইন-লেন্থে বিরামহীন উইকেট টু উইকেট বল করার ক্ষেত্রে অক্ষর প্যাটেল হলেন বিশেষজ্ঞ। এ জন্য তাঁকে পাওয়ার প্লে বিশেষজ্ঞও বলা হয়। রান দেওয়ার বেলায়ও বেশ কৃপণ তিনি। ওভারপ্রতি ৪.

৫১ রান দিয়ে ভারতের চার স্পিনারের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী অক্ষর। রবীন্দ্র জাদেজা হলেন ট্র্যাডিশনাল। তবে অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রয়োজনের সময় উইকেট বের করায় সিদ্ধহস্ত তিনি।

গত চার ম্যাচে ভারতীয় স্পিনাররা মোট ২১ উইকেট নিয়েছেন। কিউই স্পিনাররাও কিন্তু খুব একটা পিছিয়ে নেই। চার ম্যাচে কিউই স্পিনারদের শিকার ১৭ উইকেট। মিচেল স্যান্টনারের নেতৃত্বে কিউই স্পিন আক্রমণে রয়েছেন মিচেল ব্রেসওয়েল, গ্লেন ফিলিপস ও রাচিন রবীন্দ্র। এর মধ্যে বাঁহাতি স্যান্টনার উইকেটের দুই দিকে বল ঘোরাতে পারেন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ, বিরামহীনভাবে নিখুঁত লেন্থে বল ফেলতে পারেন। যে কারণে স্যান্টনারের বলে রান তোলা বেশ কষ্টকর। অফস্পিনার মিচেল ব্রেসওয়েলের খুব একটা বৈচিত্র্য নেই, উইকেটের দু’দিকে বল ঘোরাতেও পারেন না তিনি। তবে নিখুঁত লাইন-লেন্থ ও গতির তারতম্যের কারণে উইকেট শিকারে বেশ সিদ্ধহস্ত তিনি। উইকেটে যদি সামান্য বাউন্স থাকে, তাহলে তাঁকে খেলা বেশ চ্যালেঞ্জিং। 

কিন্তু দুবাইয়ের পিচে বাউন্স পাবেন কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। টপঅর্ডার ব্যাটার রাচিনের বাঁহাতি স্পিনও বেশ কাজে আসছে কিউইদের। স্পিনে ভারতের চেয়ে তারা যেটুকু পিছিয়ে, সেটা কাভার করে নিচ্ছে পেস দিয়ে। কিউই দুই পেসার ম্যাট হেনরি ও উইল ও’রুকি দারুণ বোলিং করছেন। তবে তাদের জন্য চিন্তার কারণ হচ্ছে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হেনরি চোটের কারণে ফাইনালে অনিশ্চিত। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উইক ট র দ বল ঘ র ত

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ