ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর আটটি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি, বিমানবাহিনীর তিনটি, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের একটি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্থাপনা রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর আজ রোববার এক প্রজ্ঞাপনে আটটি স্থাপনার আগের নাম বাতিল করে নতুন নামকরণের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আওতাধীন আরও ১৬টি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনার নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। নতুন নামকরণের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা এখন প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

আটটি স্থাপনার নাম বদলের বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চট্টগ্রামের নিউমুরিং এলাকায় অবস্থিত বানৌজা বঙ্গবন্ধুর নাম পরিবর্তন করে বানৌজা খালিদ বিন ওয়ালিদ, ঢাকার নামাপাড়া খিলক্ষেতে অবস্থিত বানৌজা শেখ মুজিব নাম বদল করে বানৌজা ঢাকা, কক্সবাজারের পেকুয়ায় অবস্থিত বানৌজা শেখ হাসিনার নাম পরিবর্তন করে বানৌজা পেকুয়া, ঢাকার সেনানিবাসে কুর্মিটোলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকারের নামে করা হয়েছে।

এ ছাড়া কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার বিমানবাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার, যশোরে বিএএফ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের পরিবর্তে বিএএফএ কমপ্লেক্স করা হয়। ঢাকায় সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের নাম বদল করে ডিএসসিএসসি কমপ্লেক্স এবং শেরেবাংলা নগরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গণভবন কমপ্লেক্সে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে প্রতিরক্ষা জাদুঘর করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, গত ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নামে রাষ্ট্রীয় সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। সে আলোকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬টি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের পরিবর্তে যমুনা সেনানিবাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সেনানিবাসের নতুন নাম হবে মিঠামইন সেনানিবাস, বরিশালের লেবুখালিতে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের বদলে বরিশাল সেনানিবাস, শরীয়তপুরের জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাসের নাম পরিবর্তন করে পদ্মা সেনানিবাস করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের নাম পরিবর্তন করে বিএমএ একাডেমিক কমপ্লেক্স, হালিশহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্সের নাম বদল করে আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, কক্সবাজারে রামু সেনানিবাসে অবস্থিত মুজিব রেজিমেন্ট আর্টিলারির নাম পরিবর্তন করে ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ঢাকার বিজয় সরণিতে অ্যাডহক বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের নাম বদল করে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু কম্পোজিট মিলিটারি ফার্ম চরজানাজাতের নাম পরিবর্তন করে কম্পোজিট মিলিটারি ফার্ম জাজিরা, ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের পরিবর্তে স্বাধীনতা জাদুঘর, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিবর্তে যমুনা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নারায়ণগঞ্জের জলসিঁড়িতে অবস্থিত শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম পরিবর্তন করে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জলসিঁড়ি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে শরীয়তপুরের জাজিরায় অবস্থিত শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ জাজিরার বর্তমান নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশালের লেবুখালিতে অবস্থিত শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম বদল করে বরিশাল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার (ইবিআরসি) হলে অবস্থিত শেখ কামাল কমপ্লেক্সের নাম পরিবর্তন করে ইবিআরসি একাডেমিক কমপ্লেক্স এবং হালিশহরে এসিএন্ডএসে অবস্থিত মুজিব ব্যাটারি সড়কের নাম বদলে গোলন্দাজ সড়ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ১৬টি নতুন নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কমপ ল ক স র ন ম অবস থ ত শ খ অবস থ ত ব য় অবস থ ত ন মকরণ কল জ র জ দ ঘর বর শ ল র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

চট্টগ্রামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ