ঢাকাই সিনেমার অমর চিত্রনায়ক সালমান শাহ। নব্বই দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ধূমকেতুর মতো তার আবির্ভাব। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থায় অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান এই নায়ক।

সালমান শাহ অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘বুকের ভেতর আগুন’। এটি পরিচালনা করেন ছটকু আহমেদ। সিনেমাটিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় এটি। সিনেমাটির জন্য কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন সালমান?

‘বুকের ভেতর আগুন’ সিনেমার পরিচালক-প্রযোজক ছটকু আহমেদ জানিয়েছেন, সালমান শাহ সেই সময়ের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেওয়া নায়ক ছিল। এ সিনেমার জন্য ২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিল সালমান শাহ।

আরো পড়ুন:

সালমান শাহকে স্মরণ করে শাবনূরের পোস্ট

আমার জীবনে সালমান একটা অনুভূতির নাম: মৌসুমী

‘বুকের ভেতর আগুন’ সিনেমার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি সালমান। তার আগেই মারা যান। ফলে গল্পের কিছুটা পরিবর্তন করে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় ফেরদৌস আহমেদকে। সালমানের মৃত্যুর এক বছর পর সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

সালমান শাহের মৃত্যুর পর বেশ জটিলতায় পড়ে যান ছটকু আহমেদ। কারণ একদিকে মুক্তিপ্রতীক্ষিত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, অন্যদিকে অসম্পূর্ণ ‘বুকের ভেতর আগুন’ সিনেমার কাজ। ফলে সময়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল নির্মাতার জন্য। ছটকু আহমেদ বলেন, “সিনেমা মুক্তির প্রায় দুই মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পোস্টার, ব্যানার প্রস্তুত করে জেলায় জেলায় পাঠিয়েছিলাম। সিনেমার প্রচারে যাওয়ার শিডিউলও দিয়েছিলেন সালমান। কিন্তু মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ হয়ে যাই। এমন কিছু হয়ে যাবে, কল্পনাও করতে পারিনি।”

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তার আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সালমান শাহ নামে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। ১৯৮৫ সালে ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটকের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। এ সিনেমায় সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেন মৌসুমী।

সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে মৌসুমী মাত্র চারটি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এরপর প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ সিনেমায় সালমান শাহ ও শাবনূর প্রথম জুটি বাঁধেন। শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহ মোট ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে একাই রাজত্ব করে গেছেন সালমান শাহ। এই চার বছরে উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল ২৭টি সিনেমা।

সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো— ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’ (১৯৯৪), ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫), ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (১৯৯৬), ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ (১৯৯৭)।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র র জন য পর চ ল শ বন র আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

সালমানকে ভাই ছাড়া অন্য চোখে দেখিনি: শাবনূর

‘তুমি আমার’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’—জনপ্রিয় এসব সিনেমায় অভিনয় করেন তারকা জুটি সালমান শাহ-শাবনূর। এই জুটি একসঙ্গে ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন। এত বছর পরও এ জুটির দর্শকপ্রিয়তা এখনো অমলিন। 

ক্যারিয়ারের শুরুতে সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন চাউর হয়। তারপর সময়ের তাগিদে জল বহুদূর গড়িয়েছে। সালমান শাহর সঙ্গে ব্যক্তিগত ও পেশাগত সম্পর্ক নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন শাবনূর।   

আরো পড়ুন:

সালমান শাহ হত্যা মামলা: আগাম জামিন চাইবেন সামিরা

সামিরা-ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

শাবনূর বলেন, “সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাদের উদ্দেশে শুধু বলব, এসবের কোনো কথাই সত্য নয়। সালমানের কোনো বোন ছিল না, তাই আমাকে ছোট বোনের মতোই দেখতেন। আমাকে ‘পিচ্চি’ বলে ডাকতেন। তার মা-বাবাও আমাকে খুব আদর করতেন, মেয়ের মতোই ভালোবাসতেন।” 

সালমানের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল শাবনূরের। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমিও সালমানকে ভাইয়ের মতোই দেখতাম। তবে আমাদের মধ্যে ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। সালমান নাচে একটু দুর্বল ছিল। প্রায়ই বলতেন, ‘আমাকে একটু নাচ দেখিয়ে দে তো।’ আমি হাসতে হাসতে দেখিয়ে দিতাম।” 

সালমানের সঙ্গে শাবনূরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল—এমন গুঞ্জন বহু পুরোনো। এ বিষয়ে শাবনূর বলেন, “সালমানকে আমি ভাই ছাড়া অন্য কোনো চোখে দেখিনি। কিছু মানুষ আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প বানিয়েছে। কেউ কেউ সেটা দিয়ে ব্যবসাও করেছে। এতে আমার কষ্ট হয়েছে। কারণ আমি আমার ক্যারিয়ারটা অনেক কষ্ট করে গড়েছি।” 

সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গেও শাবনূরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল বলে দাবি এই অভিনেত্রীর। তার ভাষায়—“সামিরা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। শুটিংয়ে প্রায় সব সময়ই সে থাকত। আমাদের মধ্যে কখনো কোনো মনোমালিন্য হয়নি। সামিরা নিজে আমার হাতে চুড়ি পরিয়ে দিয়েছে, পোশাক মিলিয়ে দিয়েছে, কানের দুল বেছে দিয়েছে, সত্যি আমরা খুব ভালো সময় কাটিয়েছি।” 

সালমানের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার স্মৃতিচারণ করে শাবনূর বলেন, “হঠাৎ কেউ একজন জানাল, সালমান মারা গেছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। ভেবেছিলাম কেউ মজা করছে। পরে নিশ্চিত হয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। এরপর এফডিসিতে গিয়ে ওকে শেষবার দেখি।” 

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। তার রহস্যজনক মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেন অভিনেতার স্ত্রী সামিরা হক। সালমান শাহর মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে তার অপমৃত্যুর মামলা, হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সামিরা হককে। 

প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ সিনেমায় সালমান শাহ ও শাবনূর প্রথম জুটি বাঁধেন। শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহ মোট ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে একাই রাজত্ব করে গেছেন সালমান শাহ। এই চার বছরে উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল ২৭টি সিনেমা।

সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো—‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’ (১৯৯৪), ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫), ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (১৯৯৬), ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ (১৯৯৭)।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সালমান শাহকে কেউ কখনো ভালোবেসেছিল কি না আমার সন্দেহ আছে: প্রসূন আজাদ
  • সালমানকে ভাই ছাড়া অন্য চোখে দেখিনি: শাবনূর