রাজশাহীর বাগমারায় বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে যুবকের চাপাতির কোপে তাঁর সাবেক শ্বশুরের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কবজি জোড়া লাগানোর জন্য ওই ব্যক্তিকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার রাতে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামে।

কবজি হারানোর শঙ্কায় থাকা ব্যক্তির নাম আতাউর রহমান (৪৭)। তাঁকে চাপাতি দিয়ে কোপানো ব্যক্তির নাম আরিফুল ইসলাম (৩০)। তাঁদের বাড়ি উপজেলার দেউলা গ্রামে। ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে পিটুনি দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার ইফতারের পর দেউলা গ্রামের আতাউর রহমান দেউলা বাসস্ট্যান্ডে আসেন। তিনি একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় আরিফুল ইসলাম ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেখানে আসেন। এ সময় তিনি সাবেক শ্বশুরের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে কোমরে লুকিয়ে রাখা চাপাতি দিয়ে আতাউরকে কোপাতে থাকেন। এ সময় তিনি হাত উঁচিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। চাপাতির কোপে আতাউরের বাঁ হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়।

আতাউরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, প্রায় বিচ্ছিন্ন কবজি কেটে ফেলা ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়। পরে রাতেই আতাউরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনবার্সন প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে দেউলা গ্রামের আতাউর রহমানের মেয়ের সঙ্গে একই গ্রামের আরিফুল ইসলামের বিয়ে হয়। দাম্পত্য বিরোধের জের ধরে এই দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়। বিষয়টি নিয়ে আতাউর রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন আরিফুর। ছাড়াছাড়ির পেছনে তাঁর (আতাউর রহমান) ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ আরিফুরের।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আতাউর রহমানের ছোট ভাই আবদুর রাজ্জাক জানান, চাপাতির কোপে তাঁর ভাইয়ের বাঁ হাতের কবজির ৯৩ শতাংশ কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই অংশ জোড়া লাগানো সম্ভব নয় বলে রাজশাহীর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। পরে তাঁরা আতাউরকে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার হলেও সফল হয়নি। মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তিনদিন পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি শুনেছেন। মামলা হয়নি এখনো। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র ল ইসল ম উপজ ল র কবজ

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা