অয়ন ওসমান ও বাদলের সহযোগী জিসান গ্রেপ্তার হলেও অধরা সহযোগীরা
Published: 22nd, March 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলায় পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের পালিত সন্ত্রাসী এবং ৭ খুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নুর হোসেনের ভাতিজা সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার আহমেদ জিসান গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
গত শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলায় তাকে আদালতে প্রেরণ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। তবে, জিসান গ্রেপ্তার হলেও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।
এরআগে গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ সঙ্গীয় ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রূপঞ্জের তিনশ ফুট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত তুষার আহমেদ জিসান সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডের সানারপাড় লন্ডন মার্কেট এলাকার বরিশাইল্লা মজিবুর রহমানের ছেলে।
স্থাণীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমেদ জিসান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের অন্যতম সহযোগী এবং পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর সক্রিয় সদস্য।
অয়ন ওসমান ও কাউন্সিলর বাদলের শেল্টারে নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড এলাকায় গত ১৭ বছরে জিসান, তার বাবা বরিশাইল্লা মজিবর, তার মা বিউটি বেগম, খালাত ভাই ইয়াছিন ও ইসলাম ওরফে হাজীসহ একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, দখলবাজী, মাদক ব্যবসাসহ নানান অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমনে শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, শাহ নিজাম ও বাদলের নির্দেশে জিসানসহ এলাকার কিছু সন্ত্রাসী অগ্রনি ভুমিকা পালন করে। সে সময় আন্দোলন চলাকালে সানারপাড় এলাকায় ছাত্র-জনতাসহ কয়েকজন নিহত হয় এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেন অনেকে।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট কারচুপিতে সানারপাড় কেন্দ্রে বাদল, অয়ন ওসমান ও শাহনিজামের নির্দেশনায় জিসান, তার বাবা মজিবর, তার মা বিউটি, তার খালাত ভাই ইয়াছিন জড়িত রয়েছে। তারা আওয়ামী আমলে স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের ভয়-ভীতির মাধ্যমে জাল ভোটে সহায়তা করে।
এছাড়াও জিসানের খালাত ভাই ইয়াসিন ও ইসলাম ওরফে হাজীর সাথে জিসান মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের বাড়িতেই ছিল ফেনসিডিলের স্পট। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামদ মামলা রয়েছে।
এছাড়াও জিসান এবং তার বাবা বরিশাইল্লা মজিবর সিকোট্যাক্স গার্মেন্টসে দুধ ব্যবসা ও শ্রমিক নিয়োগে প্রতি শ্রমিক থেকে ১০০০ করে টাকা নিত।
সোনামিয়া মার্কেট থেকে মনু মিয়া মার্কেট পর্যন্ত রাস্তায় ভ্যান গাড়ি থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলত। ৩নং ওয়ার্ডের লিথি গার্মেন্টস, সিকোটেক্স গার্মেন্টস এবং আল আমিন গার্মেন্টসে জুট ব্যবসা ও প্রতি শ্রমিক থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিত জিসান।
অয়ন ওসমানের নির্দেশে ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজী করত এই জিসান। বাদলের আরেক সহযোগী ভুমিদস্যু শাহজাহান সাজুর পালিত সন্ত্রাসী হয়েও সাধারণ মানুষের ক্ষতি সাধন করত জিসান।
এলাকাবাসী বহু অপকর্মের হোতা জিসান গ্রেপ্তার হলেও তার দোসরদের গ্রেপ্তার করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহীনির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ অয়ন ওসম ন গ র ম ন টস ওসম ন র ব দল র সহয গ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কেউ অপকর্ম করতে চাইলে সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন: মির্জা ফখরুল
বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী অপকর্ম করলে তাঁদের ধরে পুলিশের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের মোলানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গণসংযোগের সময় তিনি এ বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশের জনগণের কাছে সবচাইতে নির্ভরশীল-নিরাপদ দল হচ্ছে বিএনপি। বিএনপিকে নিয়েই দেশের মানুষ আগামীর সরকার গঠন করতে চায়। এই অঞ্চলের মানুষ প্রথম থেকেই ধানের শীষে ভোট দিয়ে থাকে। আপনারা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করেন। অন্যায় করলে মানুষ ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগকে যেভাবে ছুড়ে দিয়েছে, আপনাদেরও সেভাবে ছুড়ে দেবে। অন্যায় যেন কেউ না করেন, সেটা খেয়াল রাখবেন।’
নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিজেরা অত্যন্ত শক্তি নিয়ে আপনারা অপকর্মগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। কেউ যদি করতে চায়, তবে আমাদের জেলার নেতাদের বলবেন, না হয় সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন।’
আয়নাঘর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কী আয়নাঘরের কথা শুনেছেন? ওই ঘরটা কী জানেন? যাদের ওরা (আওয়ামী লীগ) মনে করেছে সরকারের জন্য ভালো না, সে সমস্যা করতে পারে; তাঁকে পুলিশ পাঠিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। তুলে নিয়ে গুম। খবর নাই আর। এমন অসংখ্য ঘটনা। আমরা তো এমন ঘটনার হিসাব করেছিলাম ৮০০ থেকে ৯০০ হবে। পরে হাসিনা পালানোর পর জাতিসংঘ থেকে টিম আসল। তাঁরা বললেন, আয়নাঘরে ১ হাজার ৭০০ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছিল।’
আরও পড়ুনরাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা: মির্জা ফখরুল২৮ এপ্রিল ২০২৫বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশের এমন একটা মানুষ নেই, যে কষ্ট শিকার করেনি। আমাদের সামনে এখন একটা সুযোগ এসেছে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে আমরা সবাই মিলে ভোট দিয়ে সংসদ নির্বাচন করতে চাই, সরকার নির্বাচন করতে চাই। যে সরকার আমাদের কথা শুনবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা এই সমাজে কোনো বিভেদ রাখতে চাই না। আমরা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা একটা ভালোবাসার বাংলাদেশ দেখতে চাই। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা (আওয়ামী লীগ) একটা ধোয়া ওঠাল যে হিন্দুদের নাকি মেরে ফেলা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এখানে কয়টা হিন্দু মারা গেছে? কিন্তু ওরা এই কথাটা তুলছে। শুধু তুলছে না, সারা পৃথিবীতে এই কথাটা ছড়িয়ে দিয়েছে। উল্টো আমাদের ছেলেরা হিন্দু ভাইদের মন্দির-বাড়ি পাহারা দিয়েছে। মিথ্যাকে সত্য দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সব সময় একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ঠাকুরগাঁও একটা শান্তিপ্রিয় এলাকা। আমরা এই এলাকায় সবাই ভাইবোনের মতো বসবাস করি। এখানে কারও যেন কোনো ক্ষতি না হয়, আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই। যখন কোনো গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, বিএনপির আমলে আপনারা সবচাইতে নিরাপদে থাকবেন।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘কেউ কেউ সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনা নাকি আবার ফিরে আসবে। ফিরে এলে আমাদের কিছু করতে হবে না, তার ব্যবস্থা মানুষজনই নিয়ে নেবে। সে যে অত্যাচার–নির্যাতন চালিয়েছে, তার হিসেব মানুষই নিয়ে নেবে। আর ফিরে এলেও তাকে এ দেশের মানুষ আর রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করবে না।’
মোলানী উচ্চবিদ্যালয়ে গণসংযোগের পর মির্জা ফখরুল মহাদেবপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও চিলারং রেলঘুণ্টি এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: মির্জা ফখরুল১৯ এপ্রিল ২০২৫