তামিমের স্ত্রীকে সাকিবের ফোন, হাসপাতালে গেলেন বাবা-মা
Published: 25th, March 2025 GMT
হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতলে ভর্তি তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। হঠাৎ করে এই ক্রিকেটারের অসুস্থতায় চারদিকে সাড়া পড়ে গেছে। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ভক্ত সমর্থক থেকে শুরু করে সতীর্থরা। বাদ যাননি দীর্ঘদিনের বন্ধু সাকিব আল হাসানও।
দীর্ঘদিন ধরেই সাকিব-তামিমের মাঝে শীতল সম্পর্ক। তামিমের অসুস্থতার খবরে অবশেষে বরফ গললো সে সম্পর্কের। তামিমের স্ত্রীকে ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন সাকিব। সে সঙ্গে তামিমকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন সাকিবের মা-বাবা।
আরো পড়ুন:
তিন মাস পর ‘খেলায়’ ফিরতে পারবেন তামিম
জন্মদিনে তামিমকে ভাই-বন্ধু ডেকে যে দোয়া চাইলেন সাকিব
সোমবার রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তামিমের সুস্থতা প্রার্থনা করে সাকিব লিখেন, ‘‘তামিম, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম বড় শক্তি। তোমার দ্রুত সুস্থতা ও মাঠে ফিরে আসার জন্য দোয়া করছি। ইনশাআল্লাহ, তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।’’
সাকিব শেষে যা লিখলেন, সেটা স্পর্শ করে গেছে হৃদয়ের গভীরতা। তামিমকে ভাই সম্বোধন করে সাকিব আরো যোগ করেন, ‘‘তামিমের জন্য আপনার দোয়াই হবে, আমার জন্মদিনের সেরা উপহার । দোয়া করবেন—আমার ভাই তামিম যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরতে পারে!’’
তার আগেই তামিম ইকবালের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে ফোন করেন সাকিব। তামিমের শারীরিক অবস্থা জানতে চান এই সময়ে। এ ছাড়া তামিম যখনই কথা বলার অবস্থায় থাকবেন, তখনই কথা বলায়া দেয়ার অনুরোধও করেন তিনি। তামিম ইকবালের পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) তামিমকে দেখতে সাভারের কেপিজে হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন সাকিব আল হাসানের বাবা খন্দকার মাশরুর রেজা ও মা শিরিন আক্তার। দুজন গিয়ে তামিমের সাথে দেখা করেন। এ সময় তামিমকে নিজের ছেলের মতোই মনে করেন বলে জানিয়েছেন সাকিবের বাবা। তামিমের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ম ম ইকব ল
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা