মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। 

রবিবার (৩০ মার্চ) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  জাতিসংঘ এই হামলাকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেছে।

বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুজ বিবিসিকে জানিয়েছেন, “ভূমিকম্পের পর যখন মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে, তখনও সেনাবাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

চার বছর আগে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করা সামরিক সরকারকে সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন টম অ্যান্ড্রুজ। 

তিনি আরো বলেন, “মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর যাদের প্রভাব খাটানোর সুযোগ রয়েছে। তাদের উচিত হামলা বন্ধে চাপ প্রয়োগ করা। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের হামলা অগ্রহণযোগ্য।”

জান্তা সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে লড়াই করা মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে উত্তর-পশ্চিম সাগাইং রাজ্যের চাং-ইউ শহর জুড়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। এছাড়া, থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছেও বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। 


স্থানীয় বাসিন্দারা ও সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে দেশটির বহু ভবন, সেতু ও রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাগাইং, মান্দালাই, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ এর স্বয়ংক্রিয় মূল্যায়নে বলা হয়েছে, মধ্য মিয়ানমারের সাগাইং শহরের উত্তর-পশ্চিমে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার অগভীর ভূমিকম্পটি কম্পনজনিত প্রাণহানি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য লাল সতর্কতা রয়েছে।

ইউএসজিএস এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দেশটিতে সম্ভাব্য মৃত্যুর সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ, যা ১০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষের মধ্যে হতে পারে।

ইউএসজিএস আরো জানিয়েছে, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার মিলিয়ন ডলার হতে পারে। ক্ষতির পরিমাণ মিয়ানমারের জিডিপি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ম কম প র

এছাড়াও পড়ুন:

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। সিইসির তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জোয়াল ভেঙে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার যে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই হবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাঁর ভাষণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেন। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। নির্বাচনের যে রোডম্যাপ তিনি ঘোষণা করেছেন, সে অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, বাছাই, আপিল নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে আগামী ২১ জানুয়ারি। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী বুধবার দুপুরে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস, আইনবিধি সংস্কার, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ ও বড় কাজগুলো শেষ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত কেনাকাটা, পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন শেষ করেছে। বর্তমানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের কাজ চলছে।

ইতিমধ্যে প্রশাসন ও পুলিশে বড় রদবদল হয়েছে। সব মিলিয়ে তফসিল–পূর্ব ইসির প্রস্তুতিকে সন্তোষজনকই বলা যায়। তবে আমাদের নির্বাচনী ইতিহাস বলে, তফসিল ঘোষণার পরই মূল চ্যালেঞ্জটা দেখা যায়। এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য নিয়ন্ত্রণও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের সময় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। পুলিশ এখনো পুরোপুরি আগের সক্রিয়তায় ফিরতে পারেনি। যদিও তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে সশস্ত্র বাহিনীসহ সব কটি বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ সংখ্যা নিশ্চিত করেই বিপুল কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা কতটা সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন, তা অনেকখানি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিচক্ষণ ও বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর। ইতিমধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে (আরপিও) সংশোধন আনা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন আগের চেয়ে ক্ষমতায়িত হয়েছে। আমরা আশা করি, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগে সাহসী ও নিরপেক্ষ থাকবে।

জাতি আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালেও যাত্রাটা মোটেই সহজ ছিল না। পরপর তিনটি জালিয়াতির নির্বাচন ও কর্তৃত্ববাদী শাসনে শেখ হাসিনা সরকারের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে নেমেছিল। গত বছরের জুলাই ও আগস্টে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করল। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

অর্থনীতি, বিনিয়োগ, জাতীয় নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সবকিছুর বিবেচনায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দায়িত্ব যেমন অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর। সশস্ত্র বাহিনীরও এ ক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার
  • ‌সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত কর‌তে হবে
  • ইউরোপের প্রতি কেন এতটা ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, এতে লাভ হচ্ছে কার